ভূমিকা
অশনি সংকেত বিভূতিভূষণের বন্দ্যোপাধ্যায় একটি অসমাপ্ত উপন্যাস। এ উপন্যাসের পটভূমি ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পূর্বের। এক দূর্ভিক্ষের। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৪ এর।
কাহিনী সংক্ষেপ
পদ্মবিল গ্রামে পানির অভাব দেখা দিলে গঙ্গাচরণ নামের এক ব্রাক্ষন ও তার স্ত্রী অনঙ্গ বৌ ও পুত্র চলে আসে নতুন গ্রামে। এ গ্রামে পানির অভাব বিশেষ নেই। নেই অন্য কোনো অভাব। তবে গঙ্গাচরণের এ গ্রামে আসার কারণটি ভিন্ন। তিনি যানেন এ গ্রামে কোনো ব্রাক্ষণ নাই। নতুন গ্রাম। সেকালে হিন্দুসমাজে ব্রাক্ষণকে বেশ শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। আপ্যায়ণ ও সমাদর করা হয়। সেই গ্রামে তারা একখানা বাড়ি করলে। বেশ শান্তিনে তাঁদের দিন যেতে লাগলো। তাঁদের পরিবারে কোনো অভাব রইলো না। গঙ্গাচরণ সেই গ্রামে ব্রাক্ষণের দায়িত্ব পালন করা শুরু করলে। ধিরে ধিরে সকলের সহযোগিতায় তাঁদের আর কোনো অভাব থাকলো না। এক পর্যায়ে গঙ্গাচরণ তার বাড়ির সামনে ছোট্ট একখানা ঘর করে পাঠশালা দিয়ে ছাত্র পড়ানো শুরু করে। এ সময় গ্রামে তার বেশ নাম ডাক হয়। এক সময় তিনি গ্রামে ব্রাক্ষণী ভুয়া চিকিৎসা করে। ফলে তার নাম আরও বেড়ে যায়।
তার স্ত্রী অনঙ্গ বৌ নিজের মধুর ও স্নেহশীলা স্বভাবের জন্য অচিরেই গ্রাম্যবধূদের ভালবাসা অর্জন করে।কেউ এলে তাঁদের দু-মুটো খেতে না দিয়ে যেতে দেন না। ফলে একদম দুরের অন্য গ্রাম থেকে এক বৃদ্ধ আসে। যাতে ব্রাক্ষণ। একসময় সংসারে টানাপোড়া চললে দূর্গা ভট্রাচার্য গঙ্গাচরণের বাসায় উঠে। সন্তান অনেক। কলাইয়ের ডাল। কুমড়ো। কচুবাটা। খায়।
এভাবে চলতে চলতে গ্রামে নেমে আসে অভাব। চালের অভাব। চালের দাম বারতে থাকে হু হু করে। একপর্যায়ে এমন বারতে থাকে যে মানুষের পক্ষে চাল কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। টাকা দিয়ে ও পাওয়া যায়না চাল। যার দরুনেই মানুষ চাল ছাড়া খেতের ফসল রান্না করে খেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সমস্ত খেতের ফসল শেষ হয়ে গেলে তারা পুকুরের কচু পর্যন্ত খেতে শুরু করে। শুরু হয় কলেরা। এই দূর্ভিক্ষে তীব্র খুদার যন্ত্রণায় খেতে না পেরে প্রথম মৃত্যু হয় মতির। যাতে মুচি। এটিই ছিল অনাহারের প্রথম মৃতুর অশনি সংকেত।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর অশনি সংকেত উপন্যাসটি নিছক কোনো কল্পণা নয়। এটি একটি সত্য ঘটনা। এই গল্পের প্রেক্ষাপট ১৯৪৩ সালের দূর্ভিক্ষ। ছেয়াত্তুরের দূর্ভিক্ষের পর কেউ জানতো না কখনো চালের অভাবে পড়তে হবে। গোলা ভঁরা ধান, গাছে গাছে ফল, শস্য খেতে শস্য, পুকুর ভঁরা মাছ – কোনো কিছুরই অভাব হয়নি কখনো। কিন্তু এই সুখ আর থাকলো না। যা মানুষ গল্পেই শুনে এসেছিল তা শুরু হয় বাস্তবে। দেশে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব মূহুর্তে ব্রিটিশ সরকার তাঁদের সেনাদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা শুরু করলে এ বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলে শুরু হয়ে যায় খাদ্যাভাব। বন্ধ হয়ে যায় দ্রব্যের আমদানি রপ্তানি। ধনীরা তাঁদের খাদ্য সংগ্রহ করে রাখে। সেই সময় এই দূর্ভিক্ষে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়।
শেষ কথা
বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায় আমার প্রিয় একজন লেখক। তার লেখা সেরা উপন্যাস গুলোর মধ্যে একটি অশনি সংকেত। এবং তার লেখা অসমাপ্ত উপন্যাসগুলোর মধ্যে অশনি সংকেতই একমাত্র উপন্যাস যেটি তিনি সম্পূর্ণ করেননি।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।