অফিস
ভূমিকা
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস রুম অবশ্যই পরিপাটি এবং দেখতে অসাধারণ হওয়া বাঞ্চনীয়। কারণ অধিকাংশ অভিভাবক প্রথমেই তাঁরা আসবে অফিস রুমে। অফিস রুমটা তাদের মনে ধরলে সেক্ষেত্রে তাঁরা তাদের বাচ্চাকে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে বেশি উৎসাহী হবে।
রংপুরের একটা জনপ্রিয় কোচিং সেন্টার স্বপ্নচূড়া একাডেমীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুক্ত থাকায় সেখানকার প্ল্যান, পরিকল্পনা প্রস্তুত করার দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। সেই প্ল্যান অনুযায়ী সেই কোচিং এর অগ্রগতি দীর্ঘ দুই বছরে অনেক দূরে এগিয়ে যায়। সেই পরিকল্পনাগুলি থেকেই কিছুটা উল্লেখ করছি। নতুন পরিচালকদের কাজে আসতে পারে।
অফিসের দেয়াল
- Ø অফিসের
ভিতরের দেয়ার হবে সম্পূর্ণ সাদা। প্লাস্টার করা হবে। অফিসের ভিতরের দেয়ালের চারপাশ
জুরে থাকবে নানান ধরণের ক্যালিগ্রাফি এবং কারুকাজ। সেগুলোর একটা ডিজাইন করা হবে। অযথা
কোনো ধরণের লেখা থাকবেনা। এতে করে অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে অনেক।
- Ø পরিচালকের পিছনের দেয়ালের উপরে রাজনৈতিক কোনো ব্যাক্তির ছবি টাঙ্গানো হবে না। বরং মহান দুজন বিজ্ঞানীর ছবি লাগানো হবে।
- Ø কুরআনের কিছু সুন্দর সুন্দর আয়াত যেগুলো শিক্ষা নিয়ে সেগুলো দেয়া হবে যাতে প্রত্যেকের নজর কারে দেয়ালের মধ্যে।
- Ø দেয়ালের একপাশ জুড়ে বড় বড় অক্ষরে কালারিং লেখা ক্যালিগ্রাফি করা থাকবে ‘EVERY PROBLEM is an OPPORTUNITY for a SOLUTION’ এই ধরণের কিছু লেখা ও অন্যান্য বাংলা ক্যালিগ্রাফি। অথবা EDUCATION এটা থাকবে 3D স্টাইলে। মাঝে চারদিকে নানান সিম্বল যেমন বই পৃথিবী, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি। এবং গেটের সামনে দারুণ করে উপর থেকে নিচে ঝোলানো থাকবে WELCOME ক্যালিগ্রাফি.
অফিসের লাইটিং
- Ø অফিসের চারদিকে থাকবে চারটা বাতি। দুইটা নিয়ন বাতি এবং দুইটা সোডিয়াম বাতি। যেনো পুরো অফিস কক্ষ আলোকিত দেখা যায়।
- Ø প্রত্যেকটা বাতি এমনভাবে লাগানো হবে যাতে চোখে না ধরে।
মেঝে
- Ø মেঝেতে থাকবে টাইলস করা। অথবা অল্প বাজেট বিবেচনায় আসলে মেঝেও প্লাস্টার।
- Ø প্লাস্টার বিবেচনায় আসলে সেক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো হবে সম্পূর্ণ জায়গা জুরে।
টেবিল
- Ø তিন দিকে তিনটি টেবিল রাখা হবে। টেবিলগুলো হবে দেখতে ভালো মানের।
- Ø পরিচালকের টেবিলটা হবে আয়তনে বড়। টেবিলের উপরে থাকবে গ্লাস তার উপরে কৃত্রিম ঘাস।
- Ø প্রত্যেকটা টেবিলে থাকবে গ্লাস।
- Ø টেবিলের উপরে থাকবে একটা বাতি। একটা কলম। একটা গোল পৃথিবী। এবং ল্যাপটপ।
- Ø টেবিলে থাকতে হবে তিনটা ড্রয়ার। অফিস টেবিল যেমনটা হয়।
টেবিল ০১ – এটি পরিচালকের টেবিল। এই টেবিলটা থাকবে একদম সামনে। আয়তনে টেবিলটা হবে বেশ বড়। এর পিছনে লেখা থাকবে বড় করে পরিচালক। এখানে পরিচালক ব্যাতিত অন্য কেউ বসবে না।
টেবিল ০২ – এটি কম্পিউটার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে যিনি থাকবেন তার জন্য এই টেবিল বরাদ্দ। এই টেবিলটির অবস্থান হাতের ডানে। এর পিছনে লেখা থাকবে বড় করে কম্পিউটার ম্যানেজমেন্ট। এখানে অন্য কেউ বসবে না।
টেবিল ০৩ – এটি থাকবে অন্য একজনের দায়িত্বে। এটি থাকবে বামে। এটি শুধুমাত্র সেই ব্যাক্তির জন্য বরাদ্দ হবে।
বুকশেলফ
- Ø পরিচালকের টেবিলের দুই দিকে লম্বা দুইটা বুকশেলফ থাকবে। সেখানে থাকবে নানান ধরণের বই। এবং আমাদের প্রকাশনা সমূহ।
অন্যান্য
- Ø অফিস রুমের ভিতরে থাকবে দুইটা সিসি ক্যামেরা যার অবস্থান হবে সামনে ফোকাস গেটের দিকে।
অফিস রুলস
- Ø অফিস কক্ষে ঢুকতে হলে অবশ্যই খালি পায়ে ঢুকতে হবে।
- Ø অফিসে কোনো প্রকার ক্লাস নেয়া যাবেনা।
- Ø অফিস দেখাশুনার দায়িত্ব থাকবে একজনের।
- Ø অফিসে ময়লা ফেলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ
কম্পিউটার ম্যানেজমেন্টের টেবিল
- Ø একটা ল্যাপটপ থাকবে।
- Ø একটা ডেস্কটপ ও রাখা যায়।
- Ø একটা প্রিন্টার থাকবে।
উল্লেখ্যঃ আইটি সেকশনের যাবতীয় দায়িত্ব কম্পিউটার ম্যানেজমেন্টের।
এক নজরে
- v দেয়াল প্লাস্টার করা।
- v দেয়ালে ক্যালিগ্রাফি ও কারুকাজ করা।
- v তিনটা টেবিক।
- v চারটা সোডিয়াম + নিয়ম বাতি।
- v ভালো মানের দশটা চেয়ার।
- v একটা লম্বা ছোফা (বিবেচনা সাপেক্ষে)
- v মেঝেতে কার্পেট করা।
- v ছাদ দেয়া। তবে প্লাস্টার ছাদ না।
- v সিসি ক্যামেরা দুইটা
- v দুইটা ল্যাপটপ। (কম্পিউটার ম্যানেজমেন্টের টেবিলে)
- v একটা ডেস্কটপ।
- v একটা প্রিন্টার। (কম্পিউটার ম্যানেজমেন্টের টেবিলে এনার দায়িত্ব প্রিন্টসহ যাবতীয়)
ক্লাস রুম
ভূমিকা
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুম পরিপাটি হওয়া আবশ্যকীয়। ক্লাসরুম যত সুন্দর, আকর্ষনীয়, শিক্ষার্থীদের সেই ক্লাসরুমে ক্লাস করতে তত ভালো লাগবে। কাজেই প্রতিটা ক্লাসরুম উত্তমভাবে সাঁজাতে হবে। একটা কোচিং এর মেইন ফোকাস অফিসের পরেই ক্লাসরুম।
আরও পড়ুন;
একটি আদর্শ কোচিং এবং স্কুল শিক্ষার প্রসেস
দেয়াল
- v দেয়ালের চারদিক প্লাস্টার করতে হবে।
- v প্লাস্টারের পর অবশ্যই এটি সাদা রঙ করতে হবে।
- v ক্লাসরুমের দেয়ালের চারদিকে কারুকাজ ও শিক্ষা বিষয়ক নানা ক্যালিগ্রাফি করা হবে। যেনো প্রতিটি লেখা প্রতিটা শিক্ষার্থীর নজরে আসে। নানান ম্যাথের ইকুয়েশনও থাকবে। এমন কিছু করা হবে যা দেখে একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় ক্রমেই।
ব্রেন্স
- v উন্নত মানের প্রফেশনাল ব্রেন্স ব্যবহার করা হবে।
- v একটা করে ক্লাসে দুদিকে পাঁচ + পাঁচ মোটে দশটা ব্রেন্স বসানো হবে।
বোর্ড
- v একটা ক্লাসে একটা করে হোয়াইট বোর্ড থাকবে।
- v প্রতিটা ক্লাসের বোর্ড হবে আয়তনে বেশ বড় হবে।
- v বোর্ডের অবস্থান হবে সামনে একদম মাঝে।
ছাদ
- v উপরে ছাদ দেয়া হবে।
লাইটিং + জানালা + সিসি ক্যামেরা
- v চারদিকে থাকবে চারটা সোডিয়াম বাতি।
- v জানালা থাকলেও তা খোলা হবেনা। কারণ জানালা খুললেই বাহির থেকে অসংখ্য ময়লা এসে প্রবেশ করবে ক্লাসে। দরজা খোলা থাকবে। এবং রুমে চারদিকে চারটা বাতির আলোয় আলোকিত থাকবে।
- v দুইদিকে দুটি করে প্রতিটা ক্লাসে সিসি ক্যামেরা থাকবে। অথবা একটি ক্যামেরা। তবে একটি ক্যামেরাই যথেষ্ট। পুরো ক্লাস সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে।
মাঠ
ঘিরা
- মাঠের চারদিক ঘিরা দেয়া বাধ্যতামূলক। এটা আমাদের মাঠের জন্য প্রথম কাজ।
- Ø ঘিরার ক্ষেত্রে দেয়াল দেয়া উত্তম। তবে এটা একটু হাই বাজেট।
- Ø ঘিরার
ক্ষেত্রে বাঁশ দেয়া উত্তম হবেনা।
ঘাস
আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় অনেক বেশি। যাতে করে শিক্ষার্থীরা ঘাসের উপর বসে থাকতে পারে। যত বেশি ঘাস থাকবে তত ভালো।
বৃক্ষরোপণ
আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নত করার জন্য আমাদের উচিৎ বৃক্ষরোপণ করা। আমাদের লক্ষ মাঠটা যেন সর্বক্ষন গাছের ছায়ায় আচ্ছাদিত থাকে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন সর্বরাহ করে সর্বাধিক। যে সকল গাছ থেকে ফল হয় ঐসকল গাছ আমাদের তালিকায় থাকবে সর্বাধিক। এবং দেখতে সুন্দর গাছসমূহ। লম্বা গাছ যেগুলো অনেক বড় হয় ওগুলো আমরা রোপণ করবো না। এই গাছগুলো ক্যাম্পাসের মাঠের সৌন্দর্য অতটা বৃদ্ধি করবে না।
Ø
ফুল
ফুলের গাছ একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক বেশি সহায়ক। একটা প্রতিষ্ঠান কতটা সুন্দর সেটা বোঝা যায় সেই প্রতিষ্ঠানে ফুলের গাছ আছে কি না।
এক্ষেত্রে আমরা মাঠের চারদিকে নানান ধরনের বাহারি ফুলের গাছ রোপণ করবো।
ফুলের গাছের অবস্থান
- Ø মাঠের চারদিকে সাড়ি করে।
- Ø মাঠের মাঝে একটা অংশে লাভ সেপ করে
আশে পাশে
ক্যাম্পাসের বাহিরে আশপাশ এরিয়াটা আমাদের এমনভাবে গড়তে হবে যেনো মনে হয় পুরো এলাকা স্বপ্নচূড়ার একটা শিক্ষাক্ষেত্র। আমাদের আশপাশে বেশ প্রভাব সৃষ্টি করতে হবে। চারপাশে আমাদের নাম যেনো ছড়িয়ে থাকে সারাক্ষণ।
Ø সামরার হাট বাজারের হাফ কিলো সামন থেকে রাস্তার মাঝ বরাবর ৫টি বড় বড় ব্যানার।
Ø গজঘন্টা পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ৭টা বড় বড় ব্যানার রাস্তার মাঝ বরাবর।
ক্যান্টিন
আমাদের কোচিং এর চাহিদা অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ এবং খাদ্যসামগ্রী থাকবে।
ক্যান্টিনে যা যা থাকবে;
- Ø বিস্কিট
- Ø অন্যান্য
স্টেশনারি দোকান
আমাদের কোচিং এর চাহিদা অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ এবং খাদ্যসামগ্রী থাকবে।
যেসকল ষ্টেশনারী সমূহ থাকবে
- Ø খাতা
- Ø কলম
- Ø ক্যালকুলেটর
- Ø জ্যামিতি বক্স
- Ø অন্যান্য
খাতা
খাতা হবে আমাদের উৎপাদিত। প্রত্যেকটা খাতার কভারে থাকবে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ছবি। খাতার নাম স্বপ্নচূড়া। বাংলা, ইংরেজি, গণিত এর জন্য আলাদা আলাদা খাতা তৈরি হবে।
খাতার মূল্য
সর্বনিম্ন ১০
সর্বচ্চ ৫০
ক্লিনিং এন্ড ক্লিনার
আশপাশের কোনো একজন মহিলাকে এ দায়িত্ব দেয়া হবে। একদম কাছের জনকে যার বাসা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে একদম কাছে।
ক্লিনারের কাজ
- Ø সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যা দুই বেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝাঁট দেয়া।
- Ø মাঠে কোনো প্রকার ময়লা যেনো না থাকে।
- Ø প্রতিটা ক্লাসরুম সর্বদা পরিচ্ছিন্ন রাখা একবেলা।
- Ø অফিস রুম পরিচ্ছন্ন রাখা একবেলা।
শিক্ষকদের কাজ
- Ø কোনো ক্লাসরুম বা অফিস যেনো নোংরা না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ রাখা।
- Ø ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনো স্থানে অযথা কাগজ না ফেলা।
- Ø কোনো জায়গা ময়লা না করা।
- Ø অফিস রুমে জুতা পরিধান করে প্রবেশ করা।
- Ø ক্লাসে জুতা খুলে প্রবেশ করা।
শিক্ষার্থীদের কাজ
- Ø ক্যাম্পাসের মধ্যে কোথাও ময়লা ফেলা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- Ø ক্লাসরুমে জুতা খুলে প্রবেশ করা।
- অফিস রুমে অনুমতি সাপেক্ষে জুতা খুলে প্রবেশ করা।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।