রাজশাহী বিভাগের জেলা সমূহ |
রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই বিভাগের প্রতিটি জেলা ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ইতিহাসের বাহক। এ নিবন্ধে আমরা রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করব।
রাজশাহী বিভাগের জেলা সমূহ
এক নজরে, রাজশাহী বিভাগের জেলা সমূহের নাম;
- রাজশাহী জেলা
- নাটোর জেলা
- পাবনা জেলা
- বগুড়া জেলা
- জয়পুরহাট জেলা
- সিরাজগঞ্জ জেলা
- চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা
- নওগা জেলা
১. রাজশাহী জেলা
রাজশাহী জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। রাজশাহী শহরকে "সিল্ক সিটি" এবং "আমের শহর" বলা হয়। এই জেলা এক সময় মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল এবং ব্রিটিশ শাসনামলে রাজশাহী বিভাগিক সদর দফতর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী এই জেলাটি তার সুস্বাদু আমের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে।
২. নাটোর জেলা
নাটোর জেলা ইতিহাসে বড় ভূমিকা রেখেছে, বিশেষ করে নাটোর রাজবাড়ির কারণে। ১৭০৬ সালে রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই জেলা বৃটিশ শাসনামলে জমিদারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এখনো বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপত্য তার ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে।
৩. পাবনা জেলা
পাবনা জেলা ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে পাবনা বিদ্রোহ এই জেলার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা। পাবনা শহরটি ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, চিত্রশিল্পী শ্রীকৃষ্ণ বিদ্যার্ণব, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী এবং আরও অনেক বরণীয় ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান হিসেবে পাবনা উল্লেখযোগ্য।
৪. বগুড়া জেলা
বগুড়া জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন স্থানের একটি, যা মহাস্থানগড়ে অবস্থিত। এটি পুন্ড্রবর্ধনের প্রাচীন রাজধানী ছিল, যা খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত। বগুড়ার মহাস্থানগড় এখনো প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বহন করে চলেছে। বগুড়া শিল্পের জন্যও পরিচিত, বিশেষ করে দুগ্ধ উৎপাদন এবং আলু চাষে।
বগুড়া জেলা জনসংখ্যার দিক থেকে রাজশাহী বিভাগের বৃহত্তম জেলা।
৫. জয়পুরহাট জেলা
জয়পুরহাট জেলা প্রাচীনকাল থেকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে ইন্দো-পারসি স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। জয়পুরহাটের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর।
জয়পুরহাট জেলা জনসংখ্যার দিক থেকে রাজশাহী বিভাগের ক্ষুদ্রতম জেলা। পূর্বে এই জেলাটি বগুড়া জেলার একটি উপজেলা ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাটকে আলাদা জেলা করা হয়।
৬. সিরাজগঞ্জ জেলা
১৮২১ সালে সিরাজগঞ্জ ব্রিটিশ শাসনে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে পাট শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জেলাটির মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী, যা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে এই জেলাকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। বর্তমানে যমুনা সেতু বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সেতু।
৭. চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মূলত আমের জন্য বিখ্যাত। ১৯৮৪ সালে রাজশাহী জেলার অধীন থেকে পৃথক হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক গৌড় শহর এবং সোনা মসজিদ এই জেলার ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীন কালে এই অঞ্চলটি গৌড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৮. নওগাঁ জেলা
নওগাঁ জেলা তার প্রাচীন স্থাপত্য এবং প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন নিয়ে বিখ্যাত। পাল আমলে এই এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বরেন্দ্র অঞ্চলের এই জেলাটি কৃষি ও শিল্পে ব্যাপক অবদান রাখছে। প্রাচীন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এই জেলার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।
রাজশাহী বিভাগের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব
রাজশাহী বিভাগ ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানকার প্রতিটি জেলার নিজস্ব স্বতন্ত্র ঐতিহ্য ও বিশেষত্ব রয়েছে। বিভাগটির কৃষি উৎপাদন, বিশেষ করে আম ও পাট শিল্প, দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। একইসাথে, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য।
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্ন ১: রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে প্রাচীন স্থান কোনটি?
উত্তর: মহাস্থানগড়, যা বগুড়া জেলায় অবস্থিত, রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে প্রাচীন স্থান।
প্রশ্ন ২: চাঁপাইনবাবগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত, বিশেষ করে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও ফজলি আমের জন্য।
প্রশ্ন ৩: রাজশাহী বিভাগের কোন জেলা পাট শিল্পে বিখ্যাত?
উত্তর: সিরাজগঞ্জ জেলা পাট শিল্পে বিখ্যাত, যা ব্রিটিশ শাসনামলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রশ্ন ৪: পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কোন জেলায় অবস্থিত?
উত্তর: পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার নওগাঁ জেলায় অবস্থিত।
প্রশ্ন ৫: রাজশাহী বিভাগে কয়টি জেলা?
উত্তর: রাজশাহী বিভাগের মোটে ৮টি জেলা।
প্রশ্ন ৫: রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় জেলা কোনটি?
উত্তর: রাজশাহী বিভাগের সবথেকে বড় জেলা আয়তনের ভিত্তিতে নওগাঁ এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে বগুড়া।
প্রশ্ন ৫: রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে ছোট জেলা কোনটি?
উত্তর: রাজশাহী বিভাগের সবথেকে ছোট জেলা আয়তনের ভিত্তিতে জয়পুরহাট।
শেষ কথা
রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা তাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য অনন্য। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার ইতিহাসে রাজা, জমিদার, ব্রিটিশ শাসন এবং প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বিদ্যমান। এই বিভাগটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে, যেখানে পর্যটন এবং কৃষি দুটোই সমৃদ্ধ।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।