বই রিভিউ – ০১
বইয়ের নামঃ দি আলকেমিস্ট
লেখকঃ পাওলো কোয়েলহো
পৃথিবীতে যে বইটি প্রত্যেকের পড়া উচিৎ, তার মধ্যে সবচেয়ে উপরের সাড়ির একটি দি আলকেমিস্ট। এটি বিখ্যাত লেখক পাওলো কোয়েলহোর লেখা সৃষ্ট এবং প্রথম সফল একটি উপন্যাস।
স্পেনের আন্দালুসিয়ার রাখাল-বালক সান্তিয়াগো। বাবা মায়ের ইচ্ছা ছেলেকে যাজক বানানো। কিন্তু ছেলের তাতে কোনো মত ছিলো না। তার ইচ্ছা সে বিশ্ব ভ্রমণ করবে। যার দরুনে তার বাবা তাকে চারটি স্প্যানিস স্বর্ণ মুদ্রা দেন। যাতে করে সে জীবিকা নির্বাহের পথ বেঁচে নিতে পারেন। তা দিয়ে সান্তিয়াগো ভেড়া কিনে নেয়। সেই থেকেই সে রাখাল বালক। ভেড়া নিয়ে এখানে ওখানে ঘুড়ে। ভেড়ার পশম বিক্রি করে তা দিয়ে খায় ও বই কিনে। যেখানে পায় সেখানেই ভেড়া সহ শুয়ে পড়ে। সান্তিয়াগো যেখানেই পায় বই পড়তে শুরু করে। কোনো বই পড়া শেষ হলে তা বালিশ হিসেবে ব্যবহার করে।
একদিন সান্তিয়াগো অদ্ভুত এক স্বপ্নে দেখতে পান সে মিশরের পিরামিডে। একটা ছেলে তাকে টেনে নিয়ে একখানে দার করায়ে বললে, এখানে গুপ্তধন। এখানে খোরও। তারপরই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে সেদিনই যাজকের কাছে তার স্বপ্নের ব্যাখা জানতে চান। স্বপ্নের ব্যাখা দেন যাজক বুড়ি। বিনিময়ে তাকে দিতে হবে গুপ্তধনের দশভাগের এক ভাগ।
সান্তিয়াগো বুড়ির কথায় অতটা সায় পেলো না। গুপ্তধন খোঁজা কি এতোই সহজ। আর সাধারণ এক স্বপ্নেই কি সত্যি হবে! প্রকৃত পক্ষে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা স্বপ্নের মাধ্যমেই অনেক কিছুর ইজ্ঞিত দেন। সালেমে দেখা হয় আরেক বৃদ্ধের সাথে তার। যিনি কিনা সালেমের রাজা। তিনি সান্তিয়াগোকে স্বপ্ন পূরণের অনুপ্রেরণা দেন। যেখানে যে হতাশায় ভুগে, তাকে অনুপ্রেরণা দেয়াই নাকি তার কাজ। “মানুষ যখন সর্বান্তকরণে চায় কিছু একটা পেতে, মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা যোগসাজশে লেগে পড়ে সেই চাহিদা মেটাতে” সালেমের রাজা তাকে শিখিয়ে দেয় মহাবিশ্বের ভাষা প্রকৃতির ভাষা বুজতে। যে ভাষায় সব লক্ষণ বোঝা যায়।
এরপর থেকে সান্তিয়াগোর শুরু হলো গুপ্তধনের সন্ধান। এ জন্য তাকে যেতে হবে মিশরে। পিরামিডে। কিন্তু সে পথ বড়ই দূর্গম। অনেক দূরের পথ। যাওয়া একদমই অসম্ভব। সে পথে তার সাথে দেখা হয় আরেক বালকের সঙ্গে। সে হয় তার বন্ধু। সে সমাধান দেয়। তার সব ভেরা বিক্রি করার। সে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এক পর্যায়ে, এক বাজারে। সবাই যখন প্রার্থণায় যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে, তখন এদিকদিয়ে সান্তিয়াগোর সব টাকা নিয়ে ভেগে যায় বালকটি। তখন তার কাছে কিছুই থাকলো না। এক পর্যায়ে একটি স্কটিশ দোকানে তার কাজ মিলে যায়। সে সেই দোকানে সততার সহিত কাজ করে। সফলতা আসে দোকানে। এক পর্যায়ে তার অনেক টাকা হয়। কিন্তু সে তার স্বপ্ন ভুলেনি। এক সময় একটি কাফেলার সাথে পারি দেয় সাহারা মরুভূমি। সেখানে তখন যুদ্ধ বেধে যায়। তাদের আশ্রয় নিতে হয় নির্দিষ্ট স্থানে। তাদের সাথে ছিলো আরেক ইংরেজ। তাদের কাফেলায় যুক্ত হন। যিনি খুঁজেন একজন আলকেমিস্ট কে। যে কিনা আবিষ্কার করবে এমন এক সূত্র, যা দিয়ে পাথর হবে সোনা। কিন্তু তিনি যানেন, পাথরকে সোনায় রূপ দিতে সক্ষম হলে সোনার মূল্য আর থাকবে না।
সান্তিয়াগো ও ইংরেজ ভদ্রলোক সহ আলকেমিস্ট কে খোজার সময় সান্তিয়াগোর সাথে দেখা হয় এক মরুর বালিকার সাথে। যার নাম ফাতিমা। এক পর্যায়ে তার সাথে ভালোবাসা হয়ে যায় সান্তিয়াগো। সে বলে, তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?। সেই ভালোবাসাকে শক্তি বানিয়ে ও আলকেমিস্ট এর সহযোগিতায় যেতে সক্ষম হয় গুপ্তধনের কাছে। পথে পথে নানান বিপদ। সেইসব বিপদ কে উপেক্ষা করে। শিক্ষা নিয়ে সে পৌঁছে যায় তার গুপ্তধনের কাছে।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
আমার জীবনে পড়া সবথেকে সেরা বইগুলোর মধ্যে একটি দি আলকেমিস্ট। আর যে বইগুলো প্রত্যেকটা পাঠকের উচিৎ পড়া – তার মধ্যে একটি দি আলকেমিস্ট। আমরা কোনো কিছু অর্জনে চেষ্টা চালিয়ে যাই, কিন্তু এক পর্যায়ে নিজেকে ব্যার্থ ভেবে চেষ্টা করা বন্ধ করে দেই। অথচ আমরা জানতামই না, যেখান থেকে চেষ্টা করা বন্ধ করে দিয়েছি, তার একটু সামনে গেলেই সেটি অর্জন হতো।
অথবা অনেক সময় আমাদের লক্ষের দিকে যাওয়ার পথেই লক্ষ হতে সরে যাই, এই ভেবে যে আমার তো কোনো অভাব নেই। কিন্তু সেই অভাব তো আর চিরস্থায়ী না। এক সময় সেই লক্ষের কথা মনে হবে। নিজেকে অনুতপ্ত হতে হবে। আহা! কেনো তখন সেটি হতে সরে গেলাম।
এই বইটি পড়ার সময় অনেক জায়গায় অবাক বনে গেছি। পদে পদে বিপদ ও রহস্যে ভরা পুরো বই জুড়ে। শিক্ষার কোনো অভাব নেই এই বইতে। অনেক কিছুই শিখাবো পাঠককে। বইটি আপনাকে লক্ষ অর্জনের প্রেরণা দিবে।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।