আপনি কি জানেন বিশ্বে এমন একটি দীর্ঘ পথ রয়েছে যে পথে আপনি কোনোরকম বাঁধা ছাড়াই অর্থাৎ বিনা বাঁধায় পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন এ মাথা থেকে ও মাথা। দেখতে পারবেন বিশ্বের তিনটি মহাদেশের ১৭টি দেশ।
পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম হাঁটা পথ |
কিন্তু কোথায় রয়েছে এই পথ?
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা বেশ কঠিন। কারণ এই পথ শুধু ভিন্ন ভিন্ন দেশেই নয়, সংযুক্ত করেছে আস্ত তিনটি মহাদেশকে। এশিয়া থেকে শুরু হয়ে ইউরোপের কয়েকটা দেশ ঘুরে একেবারে আফ্রিকার কেপটাউনে গিয়ে শেষ হয়েছে এই দীর্ঘ পথ।
'ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং' -এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের দীর্ঘতম হাঁটাপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,৩৮৯ কিলোমিটার লম্বা। কোনোরকম যানবাহন, নৌকা কিংবা স্টিমার ছাড়াই -এ পথ ধরে উত্তর-পূর্ব রাশিয়ার ম্যাগাদান শহর থেকে পৌঁছে যেতে পারবেন সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। যা আপনি পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে পারবেন মাত্র ৫৮৭দিনে।
কেনো এই পথকে বিশ্বের দীর্ঘতম পথ বলা হয়?
দীর্ঘতম পথ এবং দীর্ঘতম হাঁটা পথ এই দুটা বিষয় এক নয়। দীর্ঘতম পথের ক্ষেত্রে হাঁটাপথের সম্পর্ক নেই। কিন্তু পায়ে হাঁটা পথের ক্ষেত্রে যে পথে খুব সহজেই পায়ে হেঁটে অতিক্রম করা যায়।
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পূর্বে নানারকম বাঁধা থাকে। অনেক বড় বড় নদী, সাগর পাড় হতে হয়। কোনো স্থানে পৌছানোর ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দ্বারায় সাগর ও দীর্ঘতম নদীগুলো। আবার রাস্তা নানান দিকে বাক নিয়েছে। ফলস্বরূপ কোনদিকে যাওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে জ্ঞান জ্ঞান থাকে না। কিন্তু এই পথের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এই পথ সোজা আপনাকে নিয়ে যাবে ২১,৫৫১ কিলোমিটার। এ কারনেই একে বিশ্বের দীর্ঘতম হাঁটা পথ বলে।
এই পথ অতিক্রম করার সময় যে একেবারেই নদী পাড় হতে হবে না তা নয়, তবে এই পথে অবস্থিত নদীগুলো এতোটাই ছোট যে আপনি খুব সহজেই পেরুতে পারবেন অনায়াসেই। পানির পরিমাণ অতন্তই কম, হাঁটুজল।
এ পথের দুদিকে পড়বে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এই পথের একদিকে যেমন বিস্তৃত পথজুড়ে রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, তেমনি এই পথ ধরে পাড়ি দিতে গেলে পড়তে হবে নানান প্রতিবন্ধকতা। হতে হবে প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন। রাশিয়ার ম্যাগাদান শহরের কথাই বলতে গেলে সেই পথের পুরাটাই বরফে ঢাকা। আর্কটিক অঞ্চলে এই পথ হওয়ার দরুন সেই স্থানে বরফে ঢাকা থাকে এই পথ সারাবছর। ফলে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে বরফ।
ম্যাগাদান থেকে দক্ষিনে গেলে আবার মঙ্গোলিয়া। যেখানকার আবহাওয়া শুষ্ক। এরপর কাজাখস্তান, তুরষ্কে আবার দেখা মিলবে মরুভূমির। তারপর সেখান থেকে আফ্রিকায় পা দিলেই শুরু হবে ঘন অরণ্য এবং তৃণভূমি। আফ্রিকার এ অঞ্চল যতটাই সুন্দর, ঠিক ততটাই ভয়ংকর। কারণ সেখানে রয়েছে হিংস্র বন্যপ্রানীদের উপস্থিতি।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ঢুকতে হবে বন্যপ্রানীদের জন্য বিখ্যাত দেশ জিম্বাবুয়েতে। হাঁটতে হবে ইউগান্ডার বিখ্যাত ন্যাশনাল পার্কের সামনে দিয়ে। এই পথটা চলে গিয়েছে ইউগান্ডার ন্যাশনাল পার্কের একদম সামনে দিয়ে।
শুধু কি তাই? এই পথে যাওয়ার পথে মানুষের হিংসার মুখেও পড়ার সম্মাবনা রয়েছে সর্বাধিক। দক্ষিণ সুদানে ঢুকতেই শুরু হয়ে যাবে চুরির ভয়। কারণ এই অঞ্চলখানি চুরির জন্য বেশ বিখ্যাত। পাড় হতে হবে দক্ষিণ সুদানের সাহারা মরুভূমির কিছু অংশ পায়ে হেঁটে। সিরিয়া, কাজাখস্তান, জাম্বিয়াতে আজও কতক কতক অঞ্চলে রয়েছে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। আর্মেনিয়া, আজারবাইজানের আবহাওয়া অনেক বেশি উত্তপ্ত। যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব লেগেই থাকে সেখানে। অন্যদিকে বেলারুশের মতো স্বৈরতান্ত্রিক দেশে নিয়মিত চলছে মানুষের উপর নানারকম অত্যাচার ।
কাজেই ভাবুন, কতটা বিপদময় হতে পারে এই পথ?
তবে এ পর্যন্ত এই সম্পূর্ণ পথটি কেউই পারি দিতে সক্ষম হয়নি পায়ে হেঁটে। হয়তো কেউ চেষ্ঠাই করেনি। এর অবশ্যি কয়েকটা কারন আছে। এই পথটা অনেক বেশি দূর্গম। তাছাড়া এই পথে যেসকল দেশ পড়ে বেশ কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুব একটা ভালো না। কিছু কিছু দেশে চুরির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ভিসাগত সমস্যা তো থাকেই।
আপনি যদি এইসব চ্যালেঞ্জকে হার মানাতে পারেন, আপনার যদি সেই সামর্থ থাকে, তবে বেড়িয়ে পড়তে পারেন বিশ্বের দীর্ঘতম এই পথের উদ্দেশ্যে। পারি দিতে পারেন এ মাথা থেকে ও মাথা। স্রষ্টার অপার সৃষ্টি উপলব্ধি করতে পারবেন। কী সুন্দর এই পৃথিবী, কি অদ্ভুত, কি অপরূপ। পুরো পথ পাড়ি দিতে লাগবে দেড় থেকে দুই থেকে তিন বছর। এই দুই তিন বছরে কেটে যাবে দশ বছরের জীবন।
পদে পদে বিপদের আশঙ্কা, বিপদমুক্ত প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপলব্ধি। বিপদ থেকে মুক্তির পর মনে এক ধরনের প্রশান্তি। এই তো জীবন।বিপদহীন জীবন একঘেয়েমি, বিপদহীন জীবনের চেয়ে বিপদময় জীবন অনেক উত্তম।
বিশ্বের এই দীর্ঘতম পথ পাড়ি দিতে পারলে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সারাজীবন। বিশ্বের দীর্ঘতম পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয়া প্রথম মানব হবেন আপনি।
যাবেন তো?
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।