বাংলাদেশের ট্রেন সিট প্রকারভেদ, ধরণ ও মান ২০২৫

MD Nazir Hossain

May 1, 2025

✍️ হতে চান লেখক? উইব্লগবিডিতে এখন যেকেউ লিখতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন করুন

ট্রেনে ভ্রমণ বা রেল ভ্রমণ পছন্দ করে না এমন লোক পাওয়া বাংলাদেশে বিরল। এ দেশের অধিকাংশই রেল ফ্যান। তবে অনেকে রয়েছেন এখনো রেল ভ্রমণ করেননি। কিন্তু ট্রেনে ভ্রমণ করার বেশ ইচ্ছা। তবে অনেক কিছু না জানার দরুণ তা হয়ে উঠেনা।

আবার যারা ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন, ট্রেনের টিকিট কাটার সময় আসন কোনটা বেশি আরামদায়ক কোনটা কম আরামদায়ক কিংবা কোন সীট কি রকম অথবা গন্তব্যস্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনের উইন্ডো বা জানালার পাশের সীট কোনগুলো, ট্রেনের সীট উলটো না সোজা।

বাংলাদেশের ট্রেন সিট প্রকারভেদ, ধরণ ও মান

বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত সকল ট্রেনে কয়েক ধরনের সীট রয়েছে। সীটগুলো সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

Shovon
শোভন বা সূলভ হলো বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত ট্রেনগুলোর সবথেকে নিম্নমানের চেয়ার। এগুলো খুব একটা আরামদায়ক হয় না। এবং এই চেয়ারগুলোর ভাড়া বেশ কম। বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকাল ট্রেনগুলোতে এই ধরনের সীট ব্যবহার করা হয়। এবং কিছু সং্খ্যক আন্তঃনগর ট্রেনেও রয়েছে। আন্তনগর ট্রেনগুলোর ভ্যাকুয়াম কোচে বা রেকগুলোতে শোভন সীটও থাকে। এই ধরনের সীট অল্প সময়ের ভ্রমণের (৩ ঘন্টা পর্যন্ত) ক্ষেত্রে উপযুক্ত। তবে দূরপাল্লার ভ্রমণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। তবে ব্যাকপ্যাকার বা লো বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য সব চেয়ারই উপযুক্ত।

S_Chair
শোভন চেয়ার বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি জনপ্রিয় চেয়ার। এই ধরনের চেয়ারগুলো শোভন সীটের থেকে বেশ আরামদায়ক। এবং দূরপাল্লার বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য উপযুক্ত। শোভন চেয়ার বাংলাদেশের সকল আন্তঃনগর ট্রেনে রয়েছে। এবং প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনেই সবথেকে বেশি সীট হিসেবে রয়েছে শোভন চেয়ার। কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ যাত্রীরাই এই ধরনের চেয়ারে যাত্রা করে। এই চেয়ারগুলোর ভাড়াও বেশ কম, তবে শোভনের থেকে সামান্য বেশি – কিন্তু আরামদায়ক।

Snigdha
স্নিগ্ধা চেয়ার মূলত এসি সীট হিসেবেও পরিচিত। এ ধরনের সীটে ভ্রমণ শোভন চেয়ারের থেকে বেশি আরামদায়ক। এছাড়াও এই কোচগুলোতে এসি থাকে ফলে তপ্ত গরমের সময় বেশ আরামে ভ্রমণ করা যায়। তবে দেশের সব আন্তনগর ট্রেনে স্নিগ্ধা চেয়ার না থাকলেও, অধিকাংশ আন্তনগর ট্রেনেই রয়েছে।

F_Chair
F_Chair এর পুরো নাম ফার্স্ট ক্লাস চেয়ার (First class chair) অর্থাৎ প্রথম শ্রেণীর চেয়ার। এই চেয়ারগুলোর শোভন চেয়ারের থেকে বেশ আরামদায়ক। তবে এটি নন-এসি চেয়ার। এবং দেশের সব আন্তঃনগর ট্রেনে এই ধরনের সীট থাকেনা। খুব কম আন্তঃনগর ট্রেনেই রয়েছে।

F_Berth
F_Berth অর্থাৎ ফার্স্ট ক্লাস বার্থ (First Class Berth) হলো প্রথম শ্রেণীর বার্থ। এটি নন-এসি কেবিন সীট। এই ধরনের সীটগুলো রাতের বেলায় পাওয়া যায়, এবং রাতে এই সীটগুলোতে শুয়ে শুয়ে যাওয়া যায়। তবে এই সীটগুলোতে এসি নেই।

F_Seat
পুরো নাম ফার্স্ট ক্লাস সীট। F_Berth সীটগুলোকে দিনের বেলায় F_Seat হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে দিনের বেলায় শুয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বসে যেতে হবে। তবে বেশ আরামদায়ক।

AC_B
AC_B অর্থাৎ এসি বার্থ (AC Berth) হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের এসি কেবিন সীট। রাতের বেলায় দূরপাল্লার ট্রেনগুলোতে এই ধরনের সীট থাকে। এই সীটগুলোতে শুয়ে শুয়ে যাওয়া যায়৷ এবং এসি রয়েছে।

AC_S
AC_S হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনগুলোর এসি সীট। এই সীটগুলোতে এসি রয়েছে। দিনের বেলায় এসি বার্থ গুলো এসি সীট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ট্রেনের সীট উলটো না সোজা চেনার উপায়

ট্রেনের সীট উলটো দিকে না সোজা দিকে অধিকাংশ রেল ফ্যানদেরই এইটা চিনতে বেশ সমস্যা হয়। টিকিট কাটার সময় সীট যদি উলটো দিকে হয়, সেক্ষেত্রে অনেকেরই ভ্রমণ করার সময় বেশ বিরক্তকর লাগে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বগি গুলোতে প্রতি বগিতে ৬০টি করে সীট থাকে। তার মধ্যে অর্ধেক সীট সোজা এবং অর্ধেক সীট উলটো দিকে আকারে বিন্যাস করা হয়। অর্থাৎ ৩০ টি সীট সোজা এবং বাকি ৩০ টি সীট উলটো আকারে সাজানো থাকে। নিচে আমরা দেখে নিবো কিভাবে চিনবেন ট্রেনের উলটো অথবা সোজা সীট।

১. আপনার গন্তব্য যদি আপনার জেলা থেকে কিংবা দেশের যেকোনো জায়গা থেকে ঢাকা অভিমূখে হয়। তাহলে যেকোনো বগির ১-৩০ তম সীট পর্যন্ত সামনের দিকে, এবং ৩১-৬০ পর্যন্ত উলটো দিকে।

২. আপনার গন্তব্য যদি ঢাকা থেকে দেশের যেকোনো জায়গায় হয়, সেক্ষেত্রে ৩১-৬০ পর্যন্ত সীটগুলো সামনের দিকে, এবং ১-৩০ পর্যন্ত উলটো দিকে।

যদিও শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়া কিছুটা সম্ভব নয় যে কোন সীটগুলো সোজা আর কোনগুলো উলটো। কারণ অনেক সময় রেল কতৃপক্ষ কোচগুলো ঘুরিয়ে দেয়। ফলে সেইসময় সোজা সীটগুলো গুলো হয়ে যায় উলটো! তবুও এই টেকনিক মাথায় রাখলে সহজেই ট্রেনে সোজা সীট পাওয়া যায়। কারণ এই প্যাটার্নেই সর্বদাই ট্রেনগুলোর বগি সাজানো থাকে (ক্ষেত্রবিশেষ ব্যাতিত)।

ট্রেনের উইন্ডো সীট চেনার উপায়

ট্রেনের ভ্রমণ করার সময়, অনেকেই রয়েছেন যারা জানালার পাশে সীট না পেলে, ভ্রমণ করার সময় বেশ বিরক্তকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করেন। তবে আমরা কিছু বিষয় মাথায় রেখে টিকিট কাটলেই পেয়ে যাবো উইন্ডো সীট।

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার সময়, মাথায় রাখবেন, পিটি ইনকা কোচগুলোর কোচগুলোর বিজোড় সং্খ্যার সীটগুলো উইন্ডো সীট। যেমন উপবন এক্সপ্রেস। বাংলাদেশের অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেনই পিটি ইনকা কোচে চলে।

ভ্যাকুয়াম কোচের ক্ষেত্রে জোড় সং্খ্যার সীটগুলো জানালার পাশে অর্থাৎ উইন্ডো সীট। যেমন চট্রলা এক্সপ্রেস। কম সং্খ্যক আন্তনগর ট্রেন এই কোচে চলে।

এলএইচবি ব্রডগেজের ক্ষেত্রে, সীট নাম্বার ১ এর ১ নাম্বার সাড়ির উভয় দিকে প্রথমে বিজোড় উইন্ডো, তারপর জোড় উইন্ডো, তারপর বিজোড় উইন্ডো এভাবে সীট বন্টন হয়। যেমন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। বাংলাদেশে এলএইচবি কোচের ট্রেন সং্খ্যা খুবই কম।

ট্রেনের W C এর মানে কি

ট্রেনে W মানে Window অর্থাৎ জানালার পাশের সীট এবং C মানে Corridor অর্থাৎ জানালার পাশের সীট নয়।

আপনার সীটে যদি লেখা থাকে W55 বা W যেকোনো সং্খ্যা তার মানে ওই সীটটি উইন্ডো সীট। অন্যথায়, জানালার পাশের সীট নয়।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

কমরেটে ভালো সীট কোনটি?

কমরেটে ভালো সীট হলো S_Chair অর্থাৎ শোভন চেয়ার।

এক আইডি দিয়ে কয়টা টিকিট কাটা যায়?

এক আইডি দিয়ে সর্বচ্চ ৫টা টিকিট কাটা যায়।

শীত কালে এসি তে টিকিট কাটলে কি হবে?

শীতকালে এসি সীটে এসি চালু থাকেনা। তখন গরম অনুভব করবেন।

দিনের বেলায় গেলে কোন সিটে শুয়ে যেতে পারবো, আর রাতের বেলা জার্নি করলে কোন সিটে শুয়ে যেতে পারবো?

দিনের বেলায় কোনো সীটেই শুয়ে যেতে পারবেন না। তবে, দিনের বেলায় AC_S এর Single ৪টা সীট কাটলে শুয়ে যেতে পারবেন। তবে রাতে এসি বার্থ AC_B (এসি কেবিন) অথবা ফার্স্ট ক্লাস বার্থ F_Berth (নন-এসি কেবিন) সীটে একটি টিকিট কাটলেই শুয়ে যেতে পারবেন আরামে।

পুরো কেবিন রাত্রের জন্য কতো টাকা লাগবে?

পুরো কেবিন ভাড়া নির্ভর করে গন্তব্যস্থান কোথা থেকে কোথায় তার উপর।

WC মানে কি?

W মানে উইন্ডো অর্থাৎ জানালার পাশের সীট এবং C মানে করিডোর অর্থাৎ জানালার পাশে নয় যে সীট।

শেষ কথা

আশাকরি আমরা এই নিবন্ধের মাধ্যমে, বাংলাদেশ রেলওয়ের, বাংলাদেশের ট্রেন সিট প্রকারভেদ, ধরণ ও মান সহ উইন্ডো সীট চেনার উপায়, ট্রেনের সীট সোজা না উলটো চেনার উপায় সহ যাবতীয় বিস্তারিত তথ্য জেনেছি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে অথবা যেকোনো প্রশ্ন থাকলে লিখুন নিচে মন্তব্য সেকশনে। আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হবে দ্রুত।

আপনার যাত্রা শুভ হোক!

বই পড়ার অভ্যাস আমার সেই ছোট থেকেই, বই পড়তে ভালোবাসি আমি। এটা আমার নেশা। বই পড়ার মধ্য দিয়েই তো মানুষ আলোকিত হতে পারে। কাজেই আসুন বেশি বেশি বই পড়ি। বইয়ের আলোয় আলোকিত হই।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করার আগে খেয়াল রাখুন যেন ভদ্র ভাষা ব্যবহার করা হয়।