অভ্যাস ছাড়া সফলতা অর্জন করা অনেক বেশি কঠিন। সব সফলতার পেছনে অভ্যাসের হাত থাকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। ব্যবসায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার মধ্যে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে প্রথমেই যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থব্যায় করা।
একজন উদ্যোক্তার সবথেকে বড় গুণ হলো জ্ঞান অর্জনের জন্য অর্থব্যায়ে কোনো কার্পন্য না করা। এমনসব দক্ষতা একজন উদ্যোক্তার অর্জন করা উচিৎ যে দক্ষতা অর্থসম্পদ আয়ে সাহায্য করে, নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতাসহ প্রতিকুলতার সব ঝড়-ঝাপটার বিরুদ্ধে পাহাড়ের মতো অটল থেকে লক্ষপানে দূর্বার ছুটে চলা এবং কার্যপরিক্রমায় নিজের টিমের একজন সুযোগ্য সদস্য হওয়ার জন্য সহযোগিতা করে। একজন সফল উদ্যোক্তা কখনোই জ্ঞান অর্জনের জন্য অর্থব্যায়ে কৃপণতা করেন না।
আপনারা হয়তো বিল গেটসের কথা জানেন, তিনি প্রতিদিনই সুযোগ পেলেই কোনো না কোনো বই পড়েন। কারণ, বই পড়লে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়, অনেক কিছু শেখা যায়। এবং এটাই তার সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
আপনি একজন উদ্যোক্তা, কিন্তু এখনো রিচ ড্যাড, পুওর ড্যাড বইটা পড়েননি, সেক্ষেত্রে বলা যায় উদ্যোক্তা জীবনের সবথেকে বড় কিছু মিস করেছেন। একজন উদ্যোক্তার উদ্যোক্তা জীবনে যাওয়ার ক্ষেত্রে রিচ ড্যাড, পুওর ড্যাড কিংবা সেভেন হ্যাবিটস অথবা দ্য মিরাকল মর্নিং এসব বই অবশ্য পাঠ্য। দ্য মিরাকল মর্নিং বইটা রকমারি এবং উদ্ভাস, উন্মেষ, উত্তরন, অন্নরকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ ভাইয়ের অনেক বেশি পছন্দ। আমার নিজের কাছে দারুণ একটা বই।
আরবের একজন বিখ্যাত সফল ব্যবসায়ী ড. তাওফিক চৌধুরী, তিনি প্রতিবছর ১৫ হাজার ডলার খরচ করেন পড়ালেখার পেছনে। কাজেই একজন সফল উদ্যোক্তার সবথেকে বড় বৈশিষ্ট হতে হবে জ্ঞান-অর্জন, পড়ালেখার পেছনে অর্থব্যায়ে কৃপণতা না করা। যত পড়বেন, তত জানবেন। স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, বই পুস্তকে তো ওইসবই পাবো, যা আমি জানি। এটা একদমই ভুল ধারণা। এমন অনেক কিছুই জানবেন, শিখবেন যা আপনি জানেন না। কাজেই উদ্যোক্তা জীবনে থাকা কিংবা যাওয়ার আগে কিনুন কিছু বই, পড়ুন। উপরে উল্লিখিত বইগুলোর চমৎকার সব বাংলা অনুবাদ রয়েছে বেস্ট সেলার, কিনতে পারেন রকমারি থেকে। সাথে দ্য পাওয়ার অব ইউর সাবকনশাস মাইন্ড (অনুবাদের ক্ষেত্রে অনীশ দাস অপুরটা সেরা) এবং ডোপামিন ডিডক্স (অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রিতম মুজতাহিদের অনুবাদ বইটা নিন) বইদুটো মিস করবেন না কোনোভাবেই। এবং এর সাথে ছোট্ট একটা বই, ২৭ পৃষ্ঠার ইউ মাস্ট ডু বিজনেস বইটাও অবশ্যই একসাথে অর্ডার দিন।
Read More:
যেভাবে শুরু করবেন ফেসবুকে পুরাতন বইয়ের ব্যবসা
দ্বিতীয়টি হলো, উদ্যোক্তা জীবনে একজন উপদেষ্ঠা রাখুন নিজের জন্য। একজন উপদেষ্টা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হযরত মুহম্মদ সঃ এর ও একজন উপদেষ্টা ছিলেন। এটা আমাদের সকলের জানা। হযরত জিবরাইল আলাইহিসসালাম ছিলেন হযরত মুহম্মদ সঃ এর একজন উপদেষ্টা।
একজন উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতা আপনাকে রক্ষা করবে আপনার বিপদের মুহুর্তে পরামর্শ দিয়ে কিংবা আপনি যখন রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তায় ছিটকে পড়বেন কিংবা পড়তে ধরবেন ঠিক তখনই আপনাকে সহযোগিতা করবে আপনার উপদেষ্টা, আপনাকে নানা পরামর্শ দিয়ে। কাজেই নিজের জন্য একজন পরামর্শদাতা বা উপদেষ্টা নিযুক্ত করুণ।
Read More:
ছাত্র জীবনে উপার্জনের নানা উপায়
পরামর্শদাতা যেনো হয় একজন ভালো মানুষ, একজন সৎ মানুষ। এখন প্রশ্ন হলো পরামর্শদাতা সৎ মানুষ কি না সেটা চিনবো কিভাবে? একজন পরামর্শদাতা আপনাকে সর্বদা সময় দিবে, সৎ থাকবে। উপদেষ্টা হিসেবে তাকেই রাখুন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যার পারদর্শিতা অনেক বেশি। যিনি সৎভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন এবং কখনো হারাম পথে পা রাখেনি।
তৃতীয়টি হলো উপার্জনের একদম প্রথম থেকেই সাদাকাহ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পড়ে দেয়ার জন্য বসে থাকবেন না। অনেকেই শুধু উপার্জন করেই যায়, কিন্তু সাদাকাহর ক্ষেত্রে অজুহাত দ্বার করায়, পরে দিবো! আগে আগেই সাদাকাহ করবেন। প্রচুর পরিমাণে দান করুণ। মনে রাখবেন, দান করলে অর্থ কমে না, বরং বাড়ে। এটা একজন মহৎ উদ্যোক্তার সবথেকে সেরা গুণ। তাঁরা প্রচুর পরিমাণে দানশীল হন।
আমি যখন ড. তাওফিক চৌধুরীর ইউ মাস্ট ডু বিজনেস বইটা পড়ি, ছোট্ট একটা বই, মাত্র ২৭ কি ২৮ পৃষ্ঠা হবে। তখন আমি একটা জিনিস বেশ শিখতে পারি। সেটা হলো, আমার সন্তানের জন্য আমার কোনো অর্থ রেখে যাবো না। আমি তাদের ভালো শেখাবো, উত্তম জীবন গঠনে এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে সহযোগিতা করবো। কিন্তু আমার সম্পদের ভাগ তাঁরা পাবেনা। কারণ আমার সম্পদ হবে মানব জাতির জন্য। জীবনের অন্তিম মুহুর্তে আমার সব সম্পদ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে এ পৃথিবী থেকে প্রস্থান করবো।
কারণ, আমার উপার্জনকৃত সম্পদ সন্তানদের মাঝে দিলে এটা তাঁরা ধরে রাখতে পারবে না। তাঁরা যদি উপার্জন করা শিখে ফেলে, প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে আমার সম্পদের তাদের কোনো প্রয়োজন হবেনা।
Read More:
আমার টিউশনী জীবনের গল্প এবং নব্য টিউটরদের প্রতি পরামর্শ
এমনো অনেক মানুষ রয়েছে, যারা নিজের সন্তানের জন্য অর্থ উপার্জন করতে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ে। তাঁরা মনে করে তাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বুঝি অনেক বেশি টাকা উপার্জনের দরকার। ফলে তাঁরা কখনো দান করে না। কিন্তু তাঁরা এটা বুঝে উঠতে পারে না যে, একজন বাবার সম্পদ তার সন্তানের কোনোভাবেই প্রয়োজন নেই। একজন বাবার উচিৎ তার সন্তানকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। সফলতার পথ বলে দেয়া। প্রতিষ্ঠিত করা। যেনো পৃথিবী থাকে তাদের মুঠোয়, এবং অন্তরে থাকে আল্লাহ্ তায়ালা।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।