ভূমিকা
অনেকের ধারণা ব্যাংক একাউন্ট খোলার মধ্যে বুঝি অনেক ঝামেলা। যেকেউ বুঝি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে না। এটা তো ধনী ব্যাক্তিদের কাজ। তাছাড়া ব্যাংক একাউন্ট খোলা বুঝি বেজায় কঠিন কাজ।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম |
আসলে কি, ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ না, যেকেউ খুব সহজেই বর্তমানে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে। আমাদের জানা না থাকার দরুন এমনটা মনে হয়। কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায়, এটা আমাদের সকলের জানা থাকা প্রয়োজন। এই ব্লগে আমরা জানবো, কিভাবে আপনি নিজেই নিজের ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ বিস্তারিত।
বর্তমানে ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজনীয়তা অনেক। নিত্যদিন নানা কাজকর্মের প্রয়োজনে ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজন আমাদের।
অনেক
শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে জড়িত। পেমেন্ট নেয়ার ক্ষেত্রে
পরতে হয় ঝামেলার মধ্যে। ব্যাংক একাউন্ট না থাকার দরুন পেমেন্ট নিতে পারেননা
সহজে। উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, ছোট বেলা থেকেই সন্তানদের সেভিংসের প্রতি
আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংক একাউন্ট করে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে
অনেক শিক্ষার্থী ব্যাংকিং কে ভয় পায়, মনে করে ব্যাংক একাউন্ট মানেই এসব
বড়লোকদের ব্যাপার। ব্যাংক একাউন্ট মানে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়, ব্যাংক খোলা একদমই সহজ।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনি কোন ব্যাংকের কোনধরনের একাউন্ট খুলবেন। আপনি যদি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তবে স্টুডেন্ট একাউন্ট আপনার জন্য উত্তম। অথবা আপনার বয়স ১৮+ হলেই আপনি সেভিংস একাউন্ট করতে পারবেন। এটি বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে মোটের উপর সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক মিলে রয়েছে ৪৭টি। এসকল ব্যাংকগুলোকে বলা হয় তফসিলী ব্যাংক।
ব্যাংক একাউন্ট তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমেই ভাবুন, আপনি কোন ব্যাংক একাউন্ট করবেন। কারণ এটা একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এক্ষেত্রে আপনার কর্মসংস্থান থেকে ব্যাংকের শাঁখা কতদূর, সাপ্তাহিক কোন দিনগুলোতে ছুটি রয়েছে, ব্যাংকের সার্ভিস ও কোয়ালিটি কেমন, মেইনটিনেন্স ফী, এসএমএস এলার্ট ফী কেমন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কার্ড ব্যবস্থা, শাখার বিস্তৃতি কেমন, ইন্টারেস্ট ফী কেমন এবং এছাড়াও মাথায় রাখতে হবে বিকাশের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার ব্যবস্থা আছে কি না এগুলো আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন
বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
যেভাবে খুলবেন সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট বিস্তারিত
তবে আপনি যদি সুদমুক্ত একাউন্ট করতে চান, সেক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংক আপনার জন্য উত্তম। তবে এখানেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদের ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো অবশ্যই জেনে নিবেন, তবে এগুলো চলে শরিয়াহ মোতাবেক।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম: যেসকল কাগজ প্রয়োজন
ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে সব ব্যাংকেই মোটামুটি একই ধরনের কাগজের প্রয়োজন হয়। তবে কিছু কিছু ব্যাংকে অতিরিক্ত কিছু কাগজের প্রয়োজন হয়, তবে তার সংখ্যা খুবই কম। চলুন জেনে নেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে, কি কি কাগজের প্রয়োজন হয়;
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি (২কপি) ঃ জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপির ক্ষেত্রে অনলাইন প্রিন্ট হলেও হবে। ব্যাংকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারটি তাঁরা অনলাইনে সার্চ করে সেখান থেকে সম্পূর্ণ ডাটা প্রিন্ট করে নেন।
- ছবি ২ কপিঃ ছবি হতে হবে পাসপোর্ট সাইজের। ৪ কপি নিয়ে যাওয়া ভালো। অতিরিক্ত লাগার কথা না। তবে লাগলে সমস্যা ফেস করতে হবেনা।
- নমিনীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিঃ যাকে নমিনী করবেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ২ কপি ফটোকপি নিয়ে যাবেন। তবে লাগবে ১কপি। নমিনীর ক্ষেত্রে বাবা অথবা মা অথবা পরিবারেরসহ যেকাউকে করতে পারবেন। নমিনী হলো আপনার মৃত্যুর পর আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমাকৃত টাকা যিনি উত্তোলন করতে পারবেন।
- নমিনীর ছবি (২কপি)ঃ নমিনীর পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি নিতে হবে।
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপিঃ আপনি যদি শিক্ষার্থী হন, তবে আপনার স্টুডেন্ট আইডির ফটোকপি নিয়ে যাবেন এক কপি। আর যদি আপনি শিক্ষার্থী না হন, সেক্ষেত্রে এটির প্রয়োজন নেই।
- ইনকাম সোর্সঃ আপনাকে আপনার ইনকাম সোর্সের ১ কপি ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন, সেক্ষেত্রে পেমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে গেলেই হবে। অথবা ফাইবারে বা গুগল অ্যাডসেন্স আপনার ইনকাম সোর্স হলে সেটার একটা স্ক্রিনশট নিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে যান অথবা আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার দোকানের কাগজ নিয়ে যেতে পারেন। অথবা কোনো কোম্পানীতে কাজ করলে আইডি কার্ড থাকলে সেটার ফটোকপি হলেই হবে। আপনার ইনকাম সোর্স যাইহোক, তার একটা কাগজ নিয়ে যাবেন। তবে আপনি যদি শিক্ষার্থী হন, সেক্ষেত্রে স্টুডেন্ট একাউন্ট হলে আপনার পরিবারের যেকারও ইনকাম সোর্স হলেই হবে। অথবা লিখতে পারেন অথোরাইজড লেটার। উল্লেখ করবেন আপনি টিউশনি করান। তাহলেই হবে।
- টাকাঃ ব্যাংক একাউন্ট ওপেনিং এর জন্য আপনাকে আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন সেই ব্যাংকের ওপেনিং ফী জেনে তত টাকা নিয়ে যাবেন। সাধারণত ১০০-২০০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে ব্যাংক একাউন্ট ওপেনিং চার্জ। তবে মজার ব্যাপার হলো, অধিকাংশ ব্যাংকেই এই টাকাটা আপনার একাউন্টে জমা হয়ে যাবে, যেকোনো সময় তুলে নিতে পারবেন।
- ই-টিনঃ যদি ই-টিন থেকে থাকে তবে নিয়ে যেতে পারেন। না হলেও সমস্যা নেই। এটা বাধ্যতামূলক নয়। ই-টিনের প্রয়োজন নেই।
যেসকল বিষয় ভুল করবেন না
- সকল কাগজের অরিজিনাল কপি সাথে রাখবেন এবং ফটোকপি জমা দিবেন।
- ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে নিজেই যাবেন।
- সঠিক ঠিকানা, নাম ও পরিচয় দিবেন, ভুলেও ভুল ঠিকানা বা নাম বা পরিচয় দিবেন না।
- চেক বই ও ডেবিট কার্ড প্রয়োজন হলে ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময়ই আবেদন করে ফেলুন। তবে এটা যেকোনো সময় আবেদন করতে পারবেন।
- হিসাব নাম্বার ও জমা স্লিপ সংরক্ষণ করুণ। এটা ভুলে গেলে চলবেনা।
- ফরম পূরণ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুণ।
শেষকথা
বর্তমান সময়ে ব্যাংক একাউন্টের গুরুত্ব অনেক। অনেক সময় আমাদের নানা অর্থনৈতিক সঙ্কটে পরতে হয়। তখন ব্যাংক একাউন্টে আমাদের সঞ্চিত অর্থ সেই সময় বেশ সাহায্য করে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনার ব্যাংকিং দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।