মশা তাড়ানোর সেরা উপায়

Nir
0


গ্রীষ্মের দিনগুলিতে গরম আবহাওয়া বাড়ার সাথে সাথে মশার উপদ্রবও বাড়ছে প্রতিনিয়মিত। মশার কামর যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা কারও অজানা থাকার কথা নয়। ঘরে কিংবা ঘরের বাহিরে কোথাও নেই নিস্তার। প্রচুর ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র পড়ে থাকার দরুন এইসব মশার উপদ্রব বাড়ছে প্রতিনিয়ত।


মশার কামরের ফলে শরীরের মধ্যে বাসা বাঁধে নানা ধরনের রোগ। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মশার রোগজীবাণুর সংক্রামকের ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। মশার কামড়ের ফলে মানব শরীরে বাসা বাঁধে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকার মতো প্রভৃতি বিপজ্জনক সব রোগ। মশার কারণে মানুষের মৃত্যুও ঘটে। কাজেই মশার উপদ্রব থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করা আবশ্যক। 

 

স্প্রে, অ্যারোসল, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশার কয়েল দিয়েও কমছে না মশার উপদ্রব। এইসবের ব্যবহার আবার নিরাপদও নয়। বিশেষকরে সারারাত কয়েল ব্যবহার দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গবেষণা মতে, একটি কয়েল আঁট ঘন্টা জ্বালিয়ে রাখলে উক্ত কয়েল থেকে উৎপন্ন ধোয়া যা ১৪০টি সিগারেটের ধোয়া উৎপন্ন করে মানব শরীরে প্রবেশ করে। কয়েলের এ ধোয়া আপনার ফুসফুসের মারাত্মক ভাবে ক্ষতিসাধন করে। কাজেই আমাদের সর্বদা কয়েল ব্যবহার থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ। আমরা চাইলে কয়েল ছাড়াই মশা তাড়াতে পারি। সেজন্য রয়েছে চমৎকার সব কার্যকরী মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়। এই পোস্টে আমরা দেখবো কীভাবে মশা তারানো যায়, মশা তাড়ানোর সেরা উপায়

 

মশা তাড়াতে কর্পুরের ব্যবহার 

কর্পুরের গন্ধ সহ্য ক্ষমতা মশাদের একেবারেই নেই। কাজেই ফার্মেসি থেকে কর্পুরের ট্যাবলেট কিনে নিয়ে আসুন। এরপর ৫০ গ্রাম কর্পুরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রাখুন, বাটিটি পানি দ্বারা পূর্ণ করুণ। এইতো কাজ শেষ। এরপর কর্পুরের ট্যাবলেটে মিশ্রিত পানি ঘরের এক কোণে রেখে দিন। দেখবেন মশা মুহুর্তেই উধাও হয়ে গেছে। মশা তাড়ানোর এটি একটি কার্যকর উপায়। মশারা কর্পুরের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। ওই পানিটুকু আগে ফেলে দেয়ার দরকার নেই, দুদিন পর ফেলে দিন। চাইলে এই পানি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতেকরে ঘরে পিঁপড়ের উপদ্রব থাকলে পিঁপড়েদের উপদ্রব থেকেও মুক্তি মিলবে। কারণ পিঁপড়েরাও কর্পুরের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। 

 

মশা তাড়াতে নিমের তেলের ব্যবহার

নিমের তেল অথবা নারকেলের তেল যেমন ত্বকের জন্য উপকার, তেমনি মশা তাড়াতেও বেশ কার্যকর। মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে নিমের তেলের রয়েছে একধরনের বিশেষ গুণ। এক ঢিলে দুই পাখি মাড়তে ব্যবহার করুণ নিমের তেল। এতে করে একসাথে পাবেন দুটি উপকার। প্রথমত নারকেলের তেল ত্বকে মাখার ফলে মশা আপনার ধারে কাছে আসবে না এবং সেই সাথে আপনার ত্বকের এলার্জি কিংবা ইনফেকশন জনিত সমস্যার সমাধান হবে। কাজেই মশা তাড়াতে ব্যবহার করুণ নিমের তেল।


মশা তাড়াতে লেবু ও লবঙ্গ 

মশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার বেশ কর্যকরী। লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহারের মাধ্যমে মশা তাড়ানো যায় সহজেই। এক্ষেত্রে একটি লেবুকে দুই টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপর কাঁটা লেবুর ভিতরে কয়েকটি লবঙ্গ গেথে দিন। এক্ষেত্রে লবঙ্গের পুরোটা লেবুর ভিতরে ঢুকিয়ে দিন এবং মাথাটা বের করে দিন বাহিরে। এরপর লেবুর টুকরো দুটো ঘরের এক কোণে রেখে দিন। ব্যাস কাজ শেষ। রুমে মশা আর ঘেঁষবে না বেশ কয়েকদিন। মশা মুক্ত থাকবে আপনার ঘর। চাইলে যে স্থান দিয়ে মশা ঢুকতে পারে যেমন জানালা, গ্রিল বা দরজার কাছে রেখে দিতে পারেন। এতে করে মশা ঢোকার পথও বন্ধ হয়ে যাবে।


মশা তাড়াতে পুদিনার ব্যবহার 

তুলশির পাতার মতো পুদিনার পাতারও রয়েছে মশা তাড়ানোর ক্ষমতা। মশা পুদিনার গন্ধ সহ্য করে না, সেই সাথে জেনে রাখা ভালো, পুদিনার পাতার গন্ধ যে শুধু মশাই সহ্য করতে পারেনা তা নয়, সেই সাথে আরও অসংখ্য পোকামাকড়ও পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। 

কাজেই ৫/৬ গাছি পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন, এরপর এই পানির ভাব পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিন। এরপর এই পানি একটি গ্লাসে রেখে খাবার টেবিলের একপাশে রেখে দিন। দেখবেন মশা দূর হয়ে যাবে। এই পানি তিনদিন পর পর বদলাবেন। চাইলে পুদিনার তেল গায়েও মাখতে পারেন।

 

মশা তাড়াতে সুগন্ধি ব্যবহার

মশারা সুগন্ধ পছন্দ করে না। মশারা সর্বদা দূর্গন্ধ যুক্ত স্থানে বাসা বাঁধে। তাদের আনাগোনা দেখা যায় যেখানে দুর্গন্ধ, সেখানে তাদের আনাগোনা বেশি। কাজেই ঘুমানোর সময় সুগন্ধি কিংবা লোশন মেখে ঘুমাতে যান, চাইলে আতর মেখেও ঘুমাতে পারেন, এতে মশারা আপনার কাছে কম যাবে। মশার উপদ্রব আপনার নিকট হতে কমে যাবে। 


মশা তাড়াতে ফ্যান ছেড়ে ঘুমান

ঘরের মধ্যে ফ্যান ছেড়ে দেয়া থাকলে সেখানে মশার উপদ্রব সর্বদা কম থাকে। কারণ মশাদের বাতাসে উড়তে বেশ কষ্ট হয়। তাদের বাতাসে উড়বার ক্ষমতা অনেক কম। মশা ছোট এবং হালকা ওজনের প্রাণী হওয়ার দরুন বাতাসে তাদের উড়তে কষ্ট হয়। কাজেই ঘুমানোর সময় ফ্যান ছেড়ে দিন। এতে করে যেমন মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি মিলবে, সাথে গরম থেকেই পাবেন নিস্তার।


মশা তাড়াতে রসুনের স্প্রে করুণ

মশা তাড়ানোর কার্যকরী অন্যতম একটি উপায় হলো রসুনের স্প্রে। রসুন পিষিয়ে রস করুণ। এরপর ৫ ভাগ পানিয়ে ১ ভাগ রসুনের রস নিন। পানি এবং রসুনের রসের মিশ্রনটি একটি বোতলে ভরিয়ে নিন। এরপর তা শরিয়ে মেখে নিন। দেখবেন যেসকল স্থানে রসুনের স্প্রে করেছেন সেসকল স্থানে মশারা আর যাবেনা। 

 

মশা তাড়াতে রসুন ও লেবুর ব্যবহার 

মশা তাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন রসুন এবং তেল। এজন্য ৫/৬টি রসুনের কোয়া কুচিকুচি করে কেটে নিন এরপর এতে এক চাপচ মিনারেল অয়েল মিশিয়ে দিন। এরপর কুচিকুচি করা রসুনের সাথে এক চামচ মিনারেল অয়েল মিশিয়ে তা সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। এরপর এই রসুন ছেকে পানীয় আলাদা করে এতে এক চামচ লেবুর রস মেখে নিন। এরপর এই পানীয়তে দুই কাপ পানি মিশিয়ে নিয়ে শরীরে মেখে নিন। চাইলে আশপাশ ঘরের দেয়ালেও লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে করে মশা যাবেনা আপনার কাছে।


মশা তাড়াতে কেরোসিন তেল স্প্রে

মশা তাড়ানোর কার্যকর একটি উপায় হলো কেরোসিন তেল স্প্রে। এজন্য প্রথমে আপনাকে নিতে হবে কেরোসিন তেল এবং সাথে প্রয়োজন কয়েক টুকরো কর্পূর। কেরোসিন তেলের সাথে কয়েক টুকরো কর্পুর মিশিয়ে তা বোতলে ভরিয়ে নিন। তৈরি করে ফেলুন স্প্রে। এবং ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন, মিশিয়ে দিন আপনার রুমে। মশারা থাকবেনা আপনার ঘরে, চলে যাবে অনেক দূরে। 


মশা তাড়াতে পোড়ানো নিমপাতার ধোঁয়ার ব্যবহার

নিমপাতা পোড়ানোর ফলে যে ধোয়া উৎপন্ন হয়, তা মশা তাড়ানোর জন্য বেশ কার্যকর। কাজেই কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পুড়িয়ে উৎপন্ন ধোয়া ঘরে রাখুন। দেখবেন মশা সব দূর হয়ে যাবে।  

 

মশা তাড়াতে পোড়ানো চা-পাতার ধোয়া

পোড়ানো চা-পাতার ধোয়া মশা তাড়াতে বেশ কার্যকরি। মশাদের তাড়াতে ব্যবহৃত চা-পাতা নষ্ট না করে বা ফেলে না দিয়ে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন এবং তা আগুনে পুড়ুন। আগুনে পোড়া চা-পাতার উৎপন্ন ধোঁয়ার ফলে ঘরের সকল মশা পালিয়ে যাবে। 

 

মশা তাড়াতে প্রতিরক্ষামূলক  পোশাক পরুন

মশারা গাঢ় রঙ এবং ঘামের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই হালকা রঙের পোশাক পরা এবং যতটা সম্ভব আপনার ত্বক ঢেকে রাখলে মশা সহজে আপনার কাছে যাবে না। যতটা সম্ভব ত্বক ঢেকে রাখার জন্য লম্বা-হাতা শার্ট, প্যান্ট এবং মোজা পরতে পারেন। মশা তাড়ানোর জন্য আপনি আপনার জামাকাপড়ে পারমেথ্রিন মেখে নিতে পারেন।

 

মশা তাড়াতে মশারির ব্যবহার করুণ

মশা তাড়ানোর একটি কার্যকর উপায় হলো মশারির ব্যবহার। এটি আপনার এবং মশার মধ্যে বাধার সৃষ্টি করবে। ফলে সহজে আপনার কাছে মশা যাবে না। কাজেই মশা তাড়ানোর জন্য মশারির ব্যবহার করুণ। 


মশা তাড়াতে আপনার ঘর পরিষ্কার রাখুন

ময়লাযুক্ত স্থান যেখানে বিশেষকরে যেখানে পানি থাকে, মশা সেখানে বংশবিস্তার করে। কাজেই আপনার ঘর কিংবা আশপাশ সর্বদা পরিষ্কার রাখুন। কোথাও পানি জমতে দিবেন না, পানি জমা থেকে সুরক্ষিত রাখুন আপনার ঘর। এতে করে মশার উপদ্রব হৃস পাবে অনেকটাই। সেই সাথে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশের ব্যবস্থা করুণ। কারণ মশা সর্বদা কার্বন-ডাই অক্সাইড যুক্ত স্থানে বাসা বাঁধে।


মশা তাড়াতে হলুদ বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবহার

ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে হলুদ আলোর ব্যবহার করতে পারেন। কারণ মশারা হলুদ আলো পছন্দ করে না, ফলে তাঁরা সর্বদা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকে। কাজেই ঘরে হলুদ আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন। হলুদ আলোর ক্ষেত্রে আপনার ঘরে থাকা বাতিটিকে হলুদ সেলোফেনে জরিয়ে দিন ফলে তৈরি হয়ে যাবে হলুদ আলো। ফলে আপনার ঘরে মশার উৎপাত কমে যাবে অনেকাংশেই।


মশা তাড়াতে গাঢ় রঙ এড়িয়ে চলুন

মশারা গাঢ় রঙয়ের প্রতি আকৃষ্ঠ থাকে। তাঁরা গাঢ় রঙযুক্ত স্থান পছন্দ করে। কাজেই ঘরের মধ্যে মশার উপদ্রব এড়াতে গাঢ় রঙ এড়িয়ে চলুন। বিশেষকরে লাল, কালো এবং নীল। এই রঙয়ের কাপড় এড়িয়ে চলুন। হালকা রঙয়ের কাপড় পরিধান করুণ। এতে করে মশার উপদ্রব কমবে।


পরিশেষে, এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনি আপনার ঘর থেকে মশা তাড়াতে পারেন। আপনার ঘর হবে একদম মশামুক্ত। মশার তীব্র যন্ত্রনা থেকে মিলবে মুক্তি। আশাকরি এই "মশা তাড়ানোর সেরা উপায়" পোস্টের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!