বর্তমান সময়ে গুগল একাউন্ট খোলার গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি স্মার্ট ফোন ব্যবহারের করেন কিংবা ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত অথচ আপনার একটি গুগল একাউন্ট নেই - এর অর্থ হলো আপনি এখনো প্রযুক্তির জগতে অজ্ঞ। ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত অথচ গুগল একাউন্ট নেই, এমন লোক পাওয়া বেজায় কঠিন।
গুগল একাউন্ট কি
গুগল একাউন্ট হলো গুগল দ্বারা কতৃক্য একটি সার্ভিস। গুগল একাউন্ট ব্যবহার করে গুগলের সকল সার্ভিস সমূহ ব্যবহার করা যায়। গুগল একাউন্ট এ নির্দিষ্ট একটি ইউজারনেম এবং একটি পাসওয়ার্ড থাকে যা ব্যবহার করে একজন ব্যাক্তি তার একাউন্টটি লগিন করে গুগলের সকল সার্ভিস সমূহ উপভোগ করতে পারে।
গুগল একাউন্ট -এর সুবিধাসমূহ
গুগল একাউন্টের সুবিধা ব্যাপক। বর্তমানে গুগল একাউন্ট না থাকা মানে ইন্টারনেট জগতের অনেক কিছুই মিস করা। গুগল একাউন্টের মাধ্যমে আমরা ইউটিউবে ভিডিও দেখা বা কমেন্ট করা, প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপ বা গেম ডাউনলোড, জিমেইলের মাধ্যমে মেইল প্রেরণ বা গ্রহণ, গুগল ড্রাইভের মাধ্যমে ছবি বা যেকোনো ফাইল সংগ্রহ করে রাখা, কোনো ওয়েবসাইটে একাউন্ট করার ক্ষেত্রে ইমেইলের প্রয়োজন, গুগল সার্চসহ আরও অসংখ্য ক্ষেত্রে গুগল ছাড়া ব্যবহার একরকম সম্ভব না।
বর্তমানে ইউটিউব একটি সবথেকে বড় ভিডিও প্লাটফর্ম। ইউটিউবে কোনো ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট কিংবা উক্ত চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করার ক্ষেত্রে গুগল একাউন্টের প্রয়োজন। কারণ গুগল একাউন্ট ছাড়া ইউটিউবে লাইক, কমেন্ট এবং সাবস্ক্রাইব অপশন ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ইউটিউবে চ্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে গুগল একাউন্ট আবশ্যকীয়।
গুগল একাউন্টের সবথেকে বড় সেবা হলো ফ্রী ইমেইল সার্ভিস, যা ব্যবহার করে যেকোনো জায়গায় দ্রুত ইমেইল প্রেরণ বা গ্রহণ করা যায় মুহুর্তেই। চাকরি কিংবা সর্বক্ষেত্রেই জিমেইল একাউন্টের প্রয়োজন হয়। কোনো ওয়েবসাইটে একাউন্ট করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ইমেইলের যা আমরা আমাদের গুগল একাউন্ট ব্যবহার করে করতে পারি।
গুগলের অন্যতম একটি সার্ভিস হলো গুগল ড্রাইভ যা গুগল-কর্তৃক উন্নয়নকৃত ছবি, ভিডিও কিংবা যেকোনো ফাইল ব্যাক্তিগতভাবে সঞ্চয় বা সংরক্ষণ রাখার একটি সেবা যা ব্যবহার করে একজন ব্যাক্তি তার যাবতীয় ফাইলসমূহ সঞ্চয় করে রাখতে পারে। এমনকি কাউকে কোনো ফাইল শেয়ার করে দেয়ার ক্ষেত্রেও গুগল ড্রাইভ থেকেই করা যায়।
এই সেবাগুলো ব্যাতিত গুগলের রয়েছে আরও অসংখ্য শক্তিশালী সেবা। যা একজন গুগল একাউন্টধারী ব্যাক্তি উপভোগ করতে পারে একদম বিনামূল্যে।
গুগল একাউন্ট খুলতে কী কী লাগে?
গুগল একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়, তথ্যসমূহ হলো;
- ব্যাক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, লিঙ্গ ইত্যাদি।
- ভেরিফিকেশনের জন্য একটি সচল মোবাইল নাম্বার।
- সর্বনিম্ন ১৩ বছর হতে হবে। তবে ১৩ বছরের নিচে হলে অভিভাবকের গুগল একাউন্ট প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার চালু থাকা অবস্থায় ব্যবহার করতে পারবে।
গুগল একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে সাধারণত এইসকল তথ্যই প্রয়োজন হয়।
গুগল একাউন্ট খোলার নিয়ম
১. গুগল একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার থেকে প্রথমে ভিজিট করুণ gmail.com এ। নীচের স্ক্রিনশটটির মতো একটি পেইজ আসবে। এখানে নতুন একাউন্ট করার ক্ষেত্রে "একাউন্ট তৈরি করুণ" এ ক্লিক করুণ।
২. "একাউন্ট তৈরি করুণ" এ ক্লিক করলে নীচের মতো নতুন একটি পেইজ আসবে, এখানে "আমার জন্য" এ ক্লিক করুণ। তাহলে নতুন একটি পেইজ আসবে।
৩. "আমার জন্য" এ ক্লিক করার পর নীচের মতো একটি পেইজ আসবে। এখানে নীচের তথ্যগুলো দিন;
- আপনার নামের প্রথম অংশ (ইংরেজিতে)
- আপনার নামের দ্বিতীয় অংশ পদবি (ইংরেজিতে)
- ইউজারনেম (যে নামে জিমেইল একাউন্ট করবেন, এখানে উল্লেখ্য যে একই নামে অন্য কেউ জিমেইল খুলে থাকলে সেক্ষেত্রে নামের শেষে সংখ্যা বা উপলভ্য নাম ইউজ করতে পারেন।)
- যে পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করবেন সেই পাসওয়ার্ডটি দিন। অবশ্যই কঠিন পাসওয়ার্ড দিবেন যা সর্বনিম্ন ৮ সংখ্যার মধ্যে হতে হবে। এখানে নিশ্চিত পাসওয়ার্ডে একই পাসওয়ার্ড দিবেন।
- উল্লেখিত তথ্যগুলো দিয়ে "পরবর্তী" লেখাতে ক্লিক করুণ।
৪. পরবর্তীতে লেখাতে ক্লিক করলে নীচের মতো একটি পেইজ আসবে। এখানে ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার ফোন নাম্বার চাইবে। আপনার ফোন নাম্বারটি লিখুন। এরপর পরবর্তী লেখাতে ক্লিক করুণ।
৫.ফোন নাম্বার দিয়ে পরবর্তী লেখাতে ক্লিক করার পর আপনার নাম্বারে একটা ভেরিফিকেশন কোড যাবে গুগল থেকে। উক্ত ৬ ডিজিটের কোডটি লিখুন বক্সে। এরপর আবার পরবর্তীতে ক্লিক করুণ। তাহলে নীচের মতো একটি পেইজ আসবে। এখানে উল্লেখিত তথ্যগুলি দিন;
- "একাউন্ট ফিরিয়ে আনার ইমেইল ঠিকানা" এর জায়গায় আপনার যদি পূর্বে থেকে কোনো জিমেইল থাকে তবে এখানে সেই জিমেইলটি দিতে পারেন। আর যদি না থাকে তবে এই বক্সটি ফাঁকা রাখুন। এটি ঐশ্চিক অর্থাৎ দিলেও হবে না দিলেও হবে। দিলে পরবর্তীতে জিমেইল এর এড্রেস ভুলে গেলে ফিরিয়ে আনতে পারবেন আপনার আগের জিমেইলের মাধ্যমে।
- "আপনার জন্মদিন এর জায়গায় দিন এ কোন তারিখে জন্ম গ্রহণ করেছেন সেই তারিখটি লিখুন যেমন 01, মাস এর জায়গায় কোন মাসে জন্মগ্রহন করেছেন সেই মাসটি সংখ্যায় লিখুন যেমন 01, বছরের জায়গায় সাল লিখুন যেমন, 2004.
- "লিঙ্গ পরিচয়" এ আপনি ছেলে নাকি মেয়ে, সেটি দিন।
- উল্লেখিত সকল তথ্য দিয়ে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুণ।
৬. পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পর নীচের মতো একটু পেইজ আসবে। এখানে "হ্যাঁ, আমি রাজি" তে ক্লিক করুণ। তাহলে নতুন আরেকটি পেইজ আসবে।
৭. এখন এখানে "হ্যাঁ, আমি রাজি" তে ক্লিক করলে নতুন একটি পেইজ আসবে। এখানে ব্যবহারবিধি রয়েছে। লেখাগুলো পড়ুন। এরপর "আমি সম্মত" এ ক্লিক করুণ।
৮. এইতো কাজ শেষ। এখন তৈরি হয়ে গেছে আপনার একটি নতুন গুগল একাউন্ট।
যেভাবে লগিন করবেন গুগল একাউন্ট
আমরা এতক্ষণ দেখলাম কীভাবে একটি গুগল একাউন্ট খোলা যায়। এখন আমরা দেখবো কীভাবে যেকোনো ডিভাইসে আপনার গুগল একাউন্ট লগিন করবেন। কারণ এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গুগল একাউন্ট লগিন করার ক্ষেত্রে প্রথমেই gmail.com এ ভিজিট করুণ। তাহলে এমন একটি পেইজ আসবে।
এখানে আপনার ইমেইল এড্রেস লিখুন, যেটি ইউজার নেম হিসেবে দিয়েছেন। যেমন weblogbd01@gmail.com এরপর পরবর্তীতে ক্লিক করুণ। তাহলে আরেকটি পেইজ আসবে। সেই পেইজে পাসওয়ার্ড জিজ্ঞেস কবে। যে পাসওয়ার্ডটি দিয়েছেন গুগল একাউন্ট তৈরির ক্ষেত্রে সেই পাসওয়ার্ডটি লিখুন। এরপর আবার পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুণ। তাহলে আপনার জিমেইল একাউন্টটি লগিন হয়ে যাবে।
গুগল একাউন্ট খোলার নিয়মঃ শেষ কথা
আশাকরি এই নিবন্ধটি থেকে কীভাবে গুগল একাউন্ট খুলতে হয় সেটি জানতে পেরেছেন। উপরুক্ত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার জন্য তৈরি হয়ে যাবে নতুন একটি গুগল একাউন্ট, আর উপভোগ করতে পারবেন গুগলের সকল সেবা। আশাকরি গুগল একাউন্ট খোলার নিয়ম নিবন্ধটির মাধ্যমে সকলে সফলভাবে নিজের জন্য একটি গুগল একাউন্ট খুলতে সফল হয়েছেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে উইব্লগবিডির কমেন্ট বক্স রয়েছে উন্মুক্ত সকলের জন্য।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।