বইয়ের নাম - অঙ্গার
লেখক - আব্দুল্লাহ আল সুমন
বইটি কয়েকদিন আগে পরেছিলাম। দারুন একটা বই। মূলত বইটা লেখকের গল্প সমগ্র। সর্বমোট দশটি গল্প নিয়ে সাজানো বইটি। লেখক আবদুল্লাহ আল সুমনের অঙ্গার বইটি তার লেখা সেরা সাহিত্যকর্মের মধ্যে অন্যতম একটি। তিনি তার লেখক জীবন শুরু করেন ছোট গল্প লেখার মধ্য দিয়ে।
প্রত্যেক'টা গল্প যেনো বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এই বইটার প্রথম গল্প'টিই হলো অঙ্কার। প্রথম গল্পের নামানুসারে বইটার নামকরণ করা হয়।
প্রথম গল্পে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন, আমরা অনেক সময় কোনো কিছুর বিচার না করেই সন্তান'কে অন্যের কথামতো বিদেশে পাঠিয়ে দেই সন্তানের অনিচ্ছা সত্যেও। মনে করি বিদেশে গেলেই বুঝি সন্তান তার ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে। দেশে থাকলে কিছুই হবে না। ফলে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র কিংবা কলেজ পড়ুয়া যার শিক্ষা জীবন শেষ না করেই পাঠিয়ে দেই বিদেশে। অজানা দেশে। অন্যের কথা শুনে। কিন্তু এতে যে বিপরিত কত বড় ক্ষতি হয় সেটা বুঝতে পারি না। গল্পের শেষ'টা পাঠক'কে কাদিয়ে তুলবে। ভাবিয়ে ফেলবে।
নিয়তি
কিছু কিছু মেয়ে। বিয়ের সময় আসল স্বামী বেচে নিতে পারে না। তারা দেখে ছেলের টাকা-পয়সা আছে কি নেই। তাদের মানুষের মন দেখার প্রয়োজন হয় না, তারা শুধু ধন-সম্পদই দেখে। কিছু কিছু পরিবারের প্রধান তথা বাবা-মা ও তাই করে। মেয়ে'কে বিয়ে দিবে টাকা ওয়ালা ছেলে'কে দিয়ে। ভবিষ্যতে যেনো সুখী হয়। উপর'টাই দেখবে, কিন্তু ভিতর দেখবে না।
এই গল্পে নাদিরা আহমেদ নামের এক মেয়ে বিয়ে করে অনেক সম্পদশালি সালাউদ্দিন আহমেদ কে। কিন্তু বিয়ের পরেই তিনি বুঝতে পারেন কত'টা ভুল করেছেন তিনি। তার দরকার মুক্তি।
অতিথে তার ছিলো একজন প্রেমিক। অনেক ভালো একটা ছেলে। যে নাদিরা'কে প্রচুর ভালোবাসতো। তবে শেষ মুহুর্ত বলছি না। বললে গল্প পড়ার মুড আর থাকবে না...
চিরকুমার সভার সভাপতি
এই গল্প'টা পড়ে যে প্রত্যেক পাঠকই হাসবে এটা আমি শিওর। হাস্যরসে ভরা পুরো গল্প'টা। সাথে একটু মন খারাপ ও হয়ে যাবে প্রথম দিকে রফিকের প্রতি, রাগ ও উঠে যাবে।
কালো আকাশ - কিছু কিছু নারী এমন সব ভুল মানুষ'কে বেঁচে নেয় যার ভিতর'টা কালো কিন্তু বাহির'টা সাদা। মূলত ভিতর কালো হলে বাহির ও কালো। (ভিতর যদি হয় সাদা আর বাহির কালো, তাহলে সে কালোর অনেক মূল্য) তারা সেইসব কালো মানুষ'দের ধোকায় পা দেয়। পা দিয়ে শোষিত হয় কিন্তু পিচ পা হতে পারে না। এর প্রধান কারণ হলো ভালোবাসা। ভূল মানুষ'কে ভালোবাসা।
রেনেসা
গল্প'টি কয়েকজন বান্ধবীর। সবাই অনেক সম্পদশালী পরিবারের মেয়ে।
তবে মূল চরিত্র সিমি নামের একটি মেয়ে। তার মা রাজনৈতিক দলের শয়তান নেতা। এবং সোহান। কলেজ লাইফে ভালোবাসা। ভালোবাসার ইতি ঘটে। আবার এন্ডিং এ মিলন ঘটে, তখন একজন প্রভাষক অপরজন প্রকৌশলী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
মৃত ভালোবাসা
গল্পটা কিছুটা রোমান্টিক টাইপের। তবে শুরু'টা উদ্ভট টাইপের। দু'জন ছেলে ও মেয়ের গ্রন্থাগারের মধ্যে একই বই চয়েজ করার মধ্য দিয়ে পরিচয় অতঃপর ভালোবাসা। এক পর্যায়ে বিয়ে। বিয়ে থেকে আরিফ এর পরিবর্তন। সংসারে বিষাদ। শেষ পরিনতি ভয়াবহ। পাঠক পরলেই বুঝতে পারবে। একটু উদ্ভট টাইপের ও বটে।
অনুভূতি
গল্প'টার মূল চরিত্র সাজ্জাদুল হাসান। স্ত্রীর সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে। হয়ে যায় একা। কাটান একা জীবন। গল্প'টা সাজ্জাদের একাকিত্ব জীবনের।
কীটনাশক
গল্প'টা একজন কীট এর পতনের। মানুষরুপি নিষ্টুর ক্ষমতাধর শয়তানের পতনের। এই গল্প'টা মূলত লেখকের গোয়েন্দা গল্প।
সন্ধ্যা ডাকাত
আমরা অনেক সময় ভূল মানুষদের ডাকাত ভেবে ইচ্ছামতো মারধর করতে থাকি। এটা ভাবি না যে আসলে তারা কি ডাকাত নাকি অন্য কেউ। গল্প'টা একদল যুবকের। যারা অন্য গ্রামে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ফেরার সময় নদীপথে ঝড়ের কবলে আটকা পড়ে আশ্রয় নেয় এক গ্রামে। সন্ধ্যাবেলায় অন্ধকার নামার কারনে সেই গ্রামের মানুষজন তাদের ডাকাত ভেবে মারধর করে_____
একটি প্রতিবেদন
একদিকে সাংবাদিক'রা যে কত কষ্টে জীবনের ঝুকি নিয়ে সত্য'কে তুলে ধরে জনগনের কাছে আর অন্য দিকে মানুষ ঠকানোর নানান ফন্দি আটে কিছু অসৎ মানুষেরা। তৈরি করে মানুষ ঠকানোর কারখানা।
গল্পটা পড়লে জানা যাবে। দারুন রোমাঞ্চকর একটি গল্প। পাঠকের মন ছুয়ে যাবে নিশ্চিত।
মতামতঃ সুমন ভাইয়ের অঙ্কার বইটা দুঃখ, কষ্ট, সুখ, গোয়েন্দা, রোমাঞ্চকর সব গল্প দিয়ে সাজানো। মোটে দশটি গল্প পড়ে যেকোনো পাঠক যে লেখকের প্রতিভায় মুগ্ধ হবে এটা আমি নিশ্চিত।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।