অনেকেই ছাত্রজীবনে থাকা অবস্থায় উপার্জন করতে চান, কিন্তু ঠিক কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আপনার জানা নেই। আমি আপনাদের এই পোস্টের মাধ্যমে ছাত্র জীবনে কীভাবে উপার্জন করতে হয় তার কয়েকটা উপায় জানাবো। যেগুলো আমি করি।
টিউশনি
ছাত্রজীবনে উপার্জনের একটা বড় মাধ্যম হলো টিউশনি। টিউশনি থেকে আপনি ছাত্র থাকা অবস্থাতেই মাসে বিশ হাজারের বেশি টাকা অনায়াসেই উপার্জন করতে পারবেন। এতে আপনার মেধার বিকাশও ঘটবে সাথে অর্থও উপার্জন হবে। আমি বর্তমানে ছয়টা বাচ্চাকে পড়াই। তবে একমাসে আরও বেশি পড়াতাম। নিজের পড়ালেখার চাপ বেড়ে যাওয়ার দরুন সেই সংখ্যাটা কমিয়ে এনেছি। এতে আমার বর্তমানে মাসে পনেরো হাজারের বেশি আসে। সপ্তাহে তিনদিন মাসে, বারো দিন - দিনে এক ঘন্টা করে পড়াই শুধু। দিব্বি সব টিউশনিতেই নানা আইটেমের নাস্তা থাকে। এটাকে কোনোভাবেই এভোয়েড করবেন না। যা যা নাস্তা দিবে সব ইচ্ছামতো খেয়ে নিন।
কাজেই আপনারাও এই পথে আসতে পারেন। প্রথম দিকে টিউশনি পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও একটা পেলে পরবর্তীতে একটা ছাত্রের মাধ্যমেই অনায়াসে অনেকগুলো পেয়ে যাবেন। শুধুমাত্র প্রয়োজন ধৈর্যের।
আপনি যোগাযোগ করুণ বড় ভাইদের সাথে যারা টিউশনি করান। ওদের বলুন আমাকে একটা টিউশনি দেখিয়ে দিন প্লিজ আমার অর্থের খুব অভাব। এভাবে কোনোভাবে তাদের পিছে ঘুরে ঘুরে একটা টিউশনি ম্যানেজ করে ফেলুন যেকোনো ভাবে। অথবা কোনো শিক্ষার্থীকে ধরে বা তার অভিভাবককে বলে। আমার প্রথম টিউশনির গল্প জানতে পড়ুন নিচের লেখাটা;
শিক্ষকতা
শিক্ষা জীবনেই আপনি যুক্ত হতে পারেন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা পেশায়। আমি এক সময় দুইটা কোচিং এ পড়াতাম। এখনও অবশ্যি দুইটা কোচিং -এর সাথেই যুক্ত আছি। তবে একটাতে শুধুমাত্র শনিবার ও বুধবার পয়তাল্লিশ মিনিট একটা ক্লাস নেই। আর একটা কোচিং এর সফটওয়্যার ম্যানেজিং এর দায়িত্বে আছি। এই কোচিং এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই থাকায় আইটি সেকশনের সমস্থ দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত। রংপুরের বেশ বড় জনপ্রিয় একটা কোচিং সেন্টার।
এটাতে আপনার যেমনি অভিজ্ঞতা বাড়বে, তেমনি আপনার শিক্ষার্থীদের থেকে স্যার স্যার সম্বোধন পাবেন। যেমনটা আমার বেড়েছে। চারদিকেই শুধু শিক্ষার্থীদের সালাম। কেমন আছেন স্যার? শুনতে হয়। মন্দ নয়, বেশ ভালোই লাগে।
বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লেখা
আপনার যদি লেখালেখির অভ্যাস থাকে, যেমন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, ফিচার ইত্যাদি যেকোনো বিষয়ে। তাহলে আপনি লিখতে পারেন বিভিন্ন পত্রিকায়।
ছোট বেলা থেকে প্রচুর পরিমাণে ফিকশন-নন ফিকশন বই পড়ার অভ্যাস থাকার দরুন এই কাজটা আমি দীর্ঘদিন থেকে করি। এই কাজটাতে আমি বেশ মজা পাই। আপনারাও করতে পারেন। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বা ম্যাগাজিনে লেখা পাঠাবেন তাদের কাছে। আপনার লেখা গ্রহণযোগ্য হলে তাঁরা আপনাকে লেখক সম্মানী দিবে। সাথে আপনার জ্ঞানও বাড়বে। কারণ একটা লেখা লিখতে গেলে আপনাকে সেই বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে নানা সোর্স থেকে অধিক পরিমাণে জানতে হবে।
কন্টেন্ট লেখা
বাংলা লেখাঃ আপনার যদি লেখালিখির অভ্যাস থাকে, তবে আপনি বিভিন্ন ব্লগে অনায়াসে বাংলা লিখে উপার্জন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন সৃজনশীলতার। যে কাজটা আমি দীর্ঘদিন থেকে করি। যদিও বাংলা ব্লগে উপার্জন কম। কিন্তু এতে আপনি জানতে পারবেন অনেক কিছু। শিক্ষা জীবনে এটা একটা অতি উত্তম এবং বেশ মজার কাজ।
ইংরেজি লেখাঃ আপনার যদি ইংরেজি লেখার অভ্যাস থাকে, তবে আপনি অনায়াসে অ্যামাজন কিন্ডল বা এরকম অনেক বড় বড় সাইটে লিখে মাসে পঞ্চাশ হাজারের বেশি উপার্জন করতে পারবেন। ইংলিশ ব্লগে উপার্জন অনেক বেশি। এক্ষেত্রে একবার সফল হলে কন্টেন্ট রাইটারকেই আপনি আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে গড়তে পারবেন। শিক্ষা জীবনে এটা একটা অতি উত্তম কাজ। এতে আপনার ইংরেজির জ্ঞানও বৃদ্ধি পাবে সাথে অনেক কিছু জানতেও পারবেন।
প্রশ্ন বানানো
আপনার যদি কম্পিউটার থাকে এবং মাইক্রোসফট ওয়ার্ড সম্পর্কে ধারনা থাকে তাহলে আপনি এখুনি বেড়িয়ে পড়ুন আপনার এলাকার আশপাশ স্কুল/কলেজ গুলোতে, তাদের গিয়ে বলুন তাদের প্রশ্ন বানিয়ে দিবেন বিনিময়ে এক পৃষ্ঠা লেখা ২০/৩০ টাকা নিবেন। প্রথমে বেশি টাকা বলবেন না। আমি শুরু করেছিলাম এ ভাবে, এক পৃষ্ঠা ২০টাকা পরবর্তী যত পৃষ্ঠা বাড়বে ১০টাকা করে বৃদ্ধি পাবে।
এই কাজটা বর্তমানে আমি শুরু করেছি এবং এতোমধ্যে ৭টা স্কুল কলেজের প্রশ্ন বানানোর দায়িত্ব পেয়ে গেছি। ওরা হাতে লিখে দেয় আমি ওদের প্রশ্ন ফরম্যাটে লিখে প্রশ্ন বানিয়ে এক কপি প্রিন্ট করে দেই বাকিটা ওরা ফটোকপি করে নেয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ইমেইল করে দেই ওরা প্রিন্ট করে নেয়।
শিক্ষা জীবনে এটা একটা অতি উত্তম কাজ। এতে আপনার প্রশ্ন সম্পর্কে অনেক ধারনা হবে।
যদিও এক্ষেত্রে কাজ পাবেন ওদের থেকে শুধুমাত্র পরীক্ষার সিজনেই।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ভাই আমার তো প্রিন্টার নাই সেক্ষেত্রে আমি কি করবো? খুবই সহজ, এ কাজে আপনার প্রিন্টারের প্রয়োজন নেই। আপনি পেনড্রাইভ বা মেমোরিতে কপি করে নিয়ে গিয়ে কোনো একটা কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিন। হয়ে গেলো কাজ।
আর একটা কাজ করতে পারেন। এটাকে অনলাইনে ব্যাপক প্রসার করতে পারেন। একটা পেইজ খুলে ফেলুন। পারলে সেটা প্রমোট করুণ। লিখুন এভাবে, সকল প্রকার হাতে লেখা কম্পিউটার কম্পোজ করা হয়। যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে লেখা প্রশ্ন বানানো হয় একদম স্বল্প মূল্যে। যোগাযোগ করুণ আমাদের সাথে।
তাহলে দেখবেন পরীক্ষার সময়গুলোতে আপনি অধিক পরিমাণে এই কাজটি পেয়ে যাবেন।
প্রশিক্ষণ
অনেক জায়গায় স্বল্প মেয়াদে সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যেমন সেইফ এর প্রশিক্ষণগুলো। অথবা আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। তিন মাসের জন্য। এই সুযোগগুলো একদমই হাতছাড়া করবেন না। কারণ তিনমাস ট্রেইনিং করে জানতে পারবেন অনেক কিছু যেমনি তেমনি ট্রেইনিং শেষে মোটা অংকের তেরো হাজার টাকাও পেয়ে যাবেন। সাথে সার্টিফিকেট তো থাকছেই। আবার ওরা কর্মসংস্থানেরও সুযোগ করে দেয় অনেক বড় বড় জায়গায়।
জানার আছে অনেক কিছু, শেখার আছে অনেক কিছু। কাজেই জানুন, শিখুন আর উপার্জন করুণ।
'উপরুক্ত কাজগুলো ছাত্রজীবনের জন্য উত্তম কাজ। জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য উপরুক্ত কাজগুলো বেঁচে নিতে পারেন ছাত্র জীবনে।'
উপরুক্ত কাজগুলো শিক্ষা জীবনের জন্য উত্তম কাজ। আর নিচেরগুলো অতটা উত্তম না আমার মতে।
ওয়েব ডিজাইন/গ্রাফিক্স ডিজাইন ও অন্যান্য এ সকল বিষয়ে আপনি এক্সপার্ট হলে ফাইভারে এখুনি একাউন্ট করে। খুলে ফেলুন গিগ, তবে এ ধারায় সফল হওয়া বেশ কঠিন। প্রথমে আপনার গিগের ক্লিক তো দূরের কথা ইমপ্রেশনও আসবে না তেমন। এ জন্য আপনাকে ফাইভারে সর্বক্ষন এক্টিভ থাকতে হবে। কয়েকমাস এক্টিভ থাকতে পারলে সফলতা আসবে। আর যত দিন যাবে ইনকাম বাড়বে বৈ কমবে না। টাকা নয় ইনকাম হবে ডলার। হাজার হাজার ডলারের মালিক হয়ে যাবেন শিক্ষা জীবনেই।
তবে ফাইভারের যাত্রায় আমি সফল নই, কারণ টিউশনি, নিজের পড়া, প্রশ্ন বানানো, কোচিং ম্যানেজমেন্ট এইসকল কাজে সময় মিলে না ফাইভারে দেয়ার মতো। তবে মাঝে মাঝে অফলাইন থেকে যে কাজগুলো পাই যেমন ওয়েব ডিজাইনের ওগুলো করি। ইতোমধ্যে কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের ওয়েব ডিজাইন আমি করেছি। এবং মোটা অংকের টাকাও পেয়েছি। দুইটা সরকারি প্রতিষ্ঠানেরও কাজ করেছি ইতোমধ্যে।
ইউটিউবিং
ইউটিউবে আপনি চ্যানেল করে ভিডিও কন্টেন্ট শেয়ার করে অনায়াসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন ধৈর্যের। ইউটিউবে প্রচুর পরিমাণে ধৈর্যের প্রয়োজন। এ কাজটিতে আমি এখনো যাইনি। এই কাজটি আপনি আপনার স্মার্টফোন দিয়েই অনায়াসে করতে পারবেন।
তবে আপনাকে প্রতিটা কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে ভালো মানের। আপনার কন্টেন্ট যত ভালো হবে, আপনার চ্যানেলের জনপ্রিয়তাও তত বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে অনেক মানুষ ফেসবুকে ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে উপার্জন করছে ছাত্র জীবনে।
ফেসবুক
ফেসবুকেও আপনি বিভিন্ন কন্টেন্ট বানিয়ে অনায়াসে উপার্জন করতে পারেন। এই কাজটি আপনি আপনার স্মার্টফোন দিয়েই করতে পারবেন।
আপনার মেধাগুলোকে ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে সেয়ার করুণ, আর উপার্জন করুণ অনলাইনে। বর্তমানে অনেক মানুষ ফেসবুকে ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে উপার্জন করছে ছাত্র জীবনে।
পরিশেষে ধন্যবাদ জানাই এত কষ্ট করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তবে নিচের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। অতি দ্রুত আপনার কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর দিবো রিপ্লাই করে।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।