ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ভর্তি হওয়ার আগে যা জানা বাধ্যতামূলক

Nir
0

ভূমিকা

এই ব্লগ আর্টিকেলটা যারা পড়ছেন, আমার অনুমান তাঁরা নিশ্চয়ই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। আপনাদের রেজাল্ট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই ভালো রেজাল্ট করেছেন আবার অনেকেই করেননি। তবে পাশকৃত সকলকে অভিনন্দন। 

 

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ভর্তি হওয়ার আগে যা জানা বাধ্যতামূলক

স্কুল জীবন পেড়িয়ে আপনারা সবে কলেজ জীবনে পা দিতে যাচ্ছেন। কাজেই বলা যায় এখন আর ছোট নেই। তবে আপনাদের মাথায় নিশ্চয়ই এখন ঘুরছে ডিপ্লোমায় যাবো নাকি ইন্টারে। কোনটা আপনাদের জন্য ভালো সেটা আমি এই পোস্টে বলবোনা। সে সম্পর্কে জানতে নিচের ব্লগ পোস্টটি পড়তে পারো।

 

ডিপ্লোমা বনাম ইন্টার - কোনটা সেরা?

 

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ আসার আগে অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হবে আপনার লক্ষ্য কি। এবং এটা খুবই ভালোভাবে ভাবতে হবে। এবং সেই ভাবাটা হতে হবে দুটি প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ। 

১. আপনার লক্ষ কী উচ্চ শিক্ষা?

২. আপনার লক্ষ কি ডিপ্লোমা করেই চাকরি?

 

উচ্চশিক্ষা

আপনার লক্ষ যদি হয় উচ্চ শিক্ষা, তবে আপনার জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং একদমই না। যদি উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে আসেন তবে এটা হয়তো আপনাকে সারা জীবন পস্তানোর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মনে হবে কি ভুল করলাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ এসে! 

 

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং চার বছরের কোর্স, অপর দিকে ইন্টার দুই বছর। ডিপ্লোমা শেষ করে আপনি শুধুমাত্র ডুয়েটে এডমিশন দিতে পারবেন বিএসসির জন্য, এছাড়া হাতে গোনা দুই তিনখানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন দেয়ার সুযোগ পেতে পারেন। তবে সেটা আপনার জন্য সেক্ষেত্রে বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তবে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে বিএসসি করার সুযোগ পাবেন, কিন্তু সেগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। 


ডুয়েটের এডমিশন সিলেবাসে রয়েছে মেজর সাবজেক্ট এবং মাইনোর সাবজেক্ট। মাইনোরের মধ্যে রয়েছে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইংরেজি এবং গণিত। মেজর সাবজেক্টের মধ্যে রয়েছে ডিপার্টমেন্টের বেশ কয়েকখানা বই। 

 

এ বছর ডিপ্লোমা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন দেয়ার সুযোগ ছিলো। এ বছর থেকে রাবিতে হয়তো প্রতিবারই এই সুযোগ মিলবে। আগে সাস্ট সহ বেশ কয়েকটাতে যেতো এখন সেগুলো গুচ্ছের অধিনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেগুলোতে এডমিশন দেয়া আর যায়না। 

 

আপনি ডিপ্লোমা শেষ করে যদি রাবি + ডুয়েট দুইয়ের একসাথে প্রস্তুতি নেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে ইন্টারের পুরো সিলেবাস পড়তে হবে। ডুয়েটে মাইনর সাবজেক্টগুলো পুরো পড়তে হয় না। নির্দিষ্ট সিলেবাস রয়েছে মাইনোর সাবজেক্ট সমূহের ক্ষেত্রে। সিলেবাসে পুরো বইয়ের ৭০-৮০% থাকে। কাজেই এক্ষেত্রে ডুয়েটের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হওয়া মানে অন্যান্য যে দু একটাতে সুযোগ রয়েছে তার ৬০% প্রস্তুতি হয়ে যাচ্ছে। এখন আপনাকে আরও পড়তে হচ্ছে। এক বছরে কী শেষ করতে পারবেন এতো সাবজেক্ট? ডুয়েট প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন;

 

যেভাবে নিবেন ডুয়েটের প্রস্তুতি 

 

এ তো গেলো একটা সমস্যা। এছাড়াও আরেকটা সমস্যা হলো জীবন থেকে আপনার দুইটা বছর নষ্ট। কাজেই ভাবুন, আপনার লক্ষ্য কী উচ্চ শিক্ষা? যদি তাই হয় তবে ভুলেও ডিপ্লোমায় আসবেন না, ডিপ্লোমায় আসা মানে আপনার জন্য সব ভার্সিটির দুয়ার চিরতরে বন্ধ। ভরসা করতে হবে ডুয়েটের উপর। অপর দিকে ইন্টার দিয়ে আপনি দেশের সব ভার্সিটিতেই এডমিশনের সুযোগ পাচ্ছেন। বুয়েট ঢাবি তো রয়েছে। এখন ভেবে দেখুন আপনি কোন পথে যাবেন উচ্চ শিক্ষার জন্য - সোজা পথ কি না কঠিন পথ। 

 

চাকরি 

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির জন্য সবথেকে ভালো। উত্তম মাধ্যম। আপনি যদি অল্প সময়ে চাকরি করতে চান - সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং আপনার জন্য পারফেক্ট। অতি উত্তম। বাংলাদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং দের জন্য রয়েছে অনেক চাকরির সুযোগ। সেক্ষেত্রে আপনার পরবী হবে উপসহকারী প্রকৌশলী। 


ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে, আপনার সিজিপিএ যদি খারাপও হয়। তবুও আপনি কোনো না কোনো চাকরি জোগাতে পারবেন। 

 

অপরদিকে ইন্টারে গিয়ে আপনি মোটেও কোনো চাকরি জোগাতে পারবেন না। এমনকি আপনি যদি অনার্স-মাস্টার্স করেন তবুও আপনার ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা করে চাকরি পাওয়া যতটা সহজ অনার্স-মাস্টার্স করে ততটা সহজ মোটেও হবেনা। তখন আপনার জন্য অপশন থাকবে একটাই, বিসিএস। 

 

তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে কী কী চাকরি পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে এর লিস্ট করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ সরকারি চাকরিগুলোর ক্ষেত্রে উপসহকারী প্রকৌশলীর সমস্থ পদগুলিই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্টদের জন্য। তবে প্রাইভেট কোম্পানি গুলোর ক্ষেত্রে দক্ষতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। 

 

উপসহকারী ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন শুরুতে ১৮-২০ হাজার টাকা। তবে প্রতি বছরেই তাদের বেতন গ্রোথ হতে থাকে। এভাবে ৬০ হাজার+ বেতন হয়ে দ্বারায়। তবে আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে এই প্রমোশন হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর সেরা পাঁচ ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন, যেগুলোতে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি।

 

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সেরা পাঁচ ডিপার্টমেন্ট

 

এছাড়াও তাড়াতাড়ি চাকরি পাওয়া মানে তাড়াতাড়ি বিয়ে। তাড়াতাড়ি একটা বউ পাবেন, বেশ সুন্দরি। 

 

কাজেই এখন ভাবুন। আপনার লক্ষ্য কি। উচ্চ শিক্ষা নাকি তাড়াতাড়ি চাকরি? যদি আপনার লক্ষ্য উচ্চ শিক্ষা হয় তবে ভুলেও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ আসবেন না। নয়তো সারাজীবন পস্তাতে হবে।

 

যেমন আমার কথাই বলি, আমার লক্ষ্য উচ্চশিক্ষা ছিলো শুরু থেকেই এবং আছে। ডিপ্লোমাতে আসার পর আমাকে পস্তাতে হয়েছে, হচ্ছে এখনো। কারণ আমার জীবন থেকে দুই বছর লস। আমি যে সময় ডিপ্লোমায় আসি, তখন সাস্টে এডমিশন দেয়া যেতো। কিন্তু পরে যখন সাস্ট গুচ্ছের আন্ডারে চলে গেলো, তখন বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কারণ আমার জন্য ডুয়েট ব্যাতিত সব ভার্সিটির দরজা বন্ধ। আর প্রাইভেট থেকে! সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। আমি ভেবেছিলাম ডিপ্লোমা শেষ করে একটা চাকরি করবো এবং পাশাপাশি সাস্ট থেকে বিএসসি করবো, কারণ আমার কাছে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট থাকতেছে। কিন্তু পরে জানতে পারলাম পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার সময় কোনো চাকরির সুযোগ নাই, তখন হতাশা আরও বেড়ে গেলো। একমাত্র ভরসা, ডুয়েট। ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের নানান বিষয় জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন, যে কাজগুলো আমি করেছি; 

 

ছাত্রজীবনে উপার্জনের নানা উপায়

 

কাজেই ডিপ্লোমায় আসার আগে ভালোভাবে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। পরে যেনো এমনটা না হয় যে কেনো ডিপ্লোমায় আসলাম! তবে আশার আলো একটাই, আপনি চাকরির পাশাপাশি এক বছর কিংবা দুই বছর পর চাকরিরত অবস্থায় প্রাইভেট কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করতে পারবেন। 

 

পরিশিষ্ঠ 

আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনার প্রশ্নটি করবেন। অতি তাড়াতাড়ি আপনার রিপ্লাই প্রদান করা হবে। দেশের সেরা দশ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সম্পর্কে জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন। 


দেশের সেরা দশ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!