পরীক্ষায় ভালো করার ১৩টি উপায়

Nir
0

পরীক্ষায় কে না ভালো করতে চায়! আমাদের অধিকাংশেরই প্রত্যাশা পরীক্ষায় ভালো করা। বিশেষকরে আমাদের বাবা-মায়েদের। তাঁরা সর্বদাই কামনা করেন আমরা যেনো পরীক্ষায় ভালো করি। গোল্ডেন না হলেও এ+ যেনো অন্তত তুলি। ফলে বাবা মায়েদের থেকে সর্বদা শুনতে হয়, পড়তে বসো, এবার যেনো গোল্ডেন মিস না হয়। ফলস্বরূপ মুখ গুঁজে ডুবে যেতে হয় বইয়ের পাতায়। 

 


কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যেই ছেলেটা সারাক্ষণ মুখ গুঁজে বইয়ের পাতায় ছিলো ডুবে, সেই ছেলেটাই রেজাল্টে করেছে খারাপ। আবার অন্যদিনে প্রতিবেশি ছেলেটাই সারাক্ষণ খেলাধুলা ঘোরাঘুরি নিয়ে মেতে থাকার পরও পরীক্ষায় করেছে বেশ ভালো। এর কারন কি শুধুই মেধার তারতম্য? মোটেও না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রত্যেকেই পাঠিয়েছেন সমান মেধা দিয়ে। কিন্তু সেই মেধাকে কাজে লাগাতে হয় সঠিক নিয়মে। যেটা আমাদের মধ্যে অনেকেই পারিনা। 

 

আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করেন যত বেশি পড়া যায় তত বেশি রেজাল্ট ভালো হয়। রেজাল্ট ভালো করার জন্য সারাক্ষণ পড়ার বিকল্প নেই। এটা ডাহা মিথ্যা বৈ ছাড়া কিছু না। ভালো রেজাল্ট করার জন্য সারাক্ষণ পড়তে হয়না। শুধু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করুণ, দেখবেন অল্প পড়েই ক্লাসের সেরা ছাত্রদের একজন হয়ে উঠবেন। তো চলুন ঝটপট দেখে নেয়া যাক নিয়মগুলো। 


১. পড়ালেখার উত্তম সময়

পড়ালেখার ক্ষেত্রে উত্তম সময় রাত ৩টা থেকে ভোর ৮টা পর্যন্ত। এই সময় যা-ই পড়া যায় তা-ই মনে থাকে। এইসময় আলফা ওয়েভ মস্তিষ্কে প্রচুর কাজ করে। ফলে আমাদের গভীর মনোযোগের শোহিত পড়াশোনা করতে সহযোগিতা করে।

 

এখন প্রশ্ন হলো রাত ৩টায় উঠবো কিভাবে! খুবই সহজ। ৯টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন। ৩টার এলার্ম দিয়ে রাখুন। কয়েকদিন কষ্ট করে ওঠার চেষ্ঠা করুণ দেখবেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। সাবকনসাসমাইন্ড অর্থাৎ অবচেতন মন আপনাকে পরবর্তী দিনগুলোতে জাগিয়ে দিবে। অথবা ৩-৮টা পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে আপনার সুবিধামতো সময় করে নিতে পারেন। হতে পারে সেটা ৫টা থেকে ৮টা।


আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই সময়টাতেই পড়ালেখা করি। এবং রাতে শুধুমাত্র ১ ঘন্টা। সারাদিন কোনো পড়ালেখা নেই, অন্য কাজগুলো যেমন টিউশনি এবং লেখালিখি। 

 

২. নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুণ

পড়ালেখার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রুটিন থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও রুটিন তৈরি করাটা সহজ বটে, কিন্তু সেই রুটিন মাফিক পড়ালেখা করাটা বলা যায় কিঞ্চিৎ কঠিন। এবং কঠিনের কারণ হলো আমরা শুরু করিনা, ফলে কঠিন মনে হয়। শুরু করলেও এক-দুইদিনের মধ্যে আবার পূর্ণরায় আগের মতো হয়ে যায়। কিন্তু এটা করলে চলবেনা। আপনি যখন একটা নির্দিষ্ট রুটিন করে ফেলবেন, এবং সেই রুটিন অনুযায়ী টানা এক সপ্তাহ কষ্ট করে পড়বেন। দেখবেন সেই রুটিনটা একধরনের আপনার মস্তিষ্কে মুখস্থ হয়ে গেছে। তখন আর রুটিন দেখতে হবেনা। আপনার অবচেতন মন সময় হলেই আপনাকে বলে দিবে, এখন পড়ার সময়। 

 

৩. পড়ার একটি প্ল্যান তৈরি করুণ

আপনি যদি পরীক্ষার মাঝামাঝি সময় এসে থাকেন। সেক্ষেত্রে পড়াটাকে তিনভাগে ভিগক্ত করুণ। 

  1. যেসকল পড়া ভালোভাবে হয়েছে
  2. যেসকল পড়া কোনোরকম হয়েছে
  3. যেসকল পড়া একেবারে হয়নি

এখন শুরু করুণ ৩ নাম্বার থেকে যেসকল পড়া একেবারে হয়নি। নির্দিষ্ট একটা সময় বের করে সেই পড়াগুলো সম্পূর্ণ করুণ। যতক্ষন না সেগুলো পুরোপুরি হচ্ছেনা ততক্ষন পড়তেই থাকুন। যেসকল পড়া হয়নি ওই পড়াগুলো সম্পূর্ণ হলে এখন শুরু করুণ যেসকল পড়া কোনোরকম হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ করার পর সব শেষ। এখন পালা রিভিশনের। এভাবে এই পদ্ধতি ফলো করে পরীক্ষার আগ মুহুর্তে ৩ মাস আগে সব বই দ্রুতই শেষ করতে পারবেন। 

 

৪. আজকে কি কি পড়বেন তার তালিকা করুণ

পড়া শুরুর আগে আজকে কি কি পড়বেন তার একটা তালিকা করে ফেলুন। যেমন ধরুন এক ঘন্টায় আমি এই অধ্যায়টা আজকে শেষ করবো। এবং সেটা শেষ করার চেষ্ঠা করুণ। তবে কোনোরকম শেষ করা এই ভুলটা কোনোভাবেই করবেন না। আপনার নির্দিষ্ট টার্গেটে অধ্যায়টা শেষ না হলেও অর্ধেক যদি হয় তাতেও নাই। এটা এখানেই স্কিপ রেখে নেক্সট রুটিনে পড়ুন এবং এখন ৫মিনিট ব্রেক নিয়ে অন্য একটি বই ধরুন।  এভাবে প্রতিদিন কি কি কোন টপিক্স শেষ করবেন তার তালিকা পড়ে পড়ুন। 

 

৫. মুখস্থ নয়, বুঝে বুঝে পড়ুন

আমাদের মাঝে অধিকাংশেরই অভ্যাস মুখস্থ করা। কিন্তু এটা একদমই একটা ভুল পদ্ধতি। মুখস্থ বিদ্যা অনেক বেশি ভয়ংকর। মুখস্থ করাটাও বেশ কঠিন। অনেকেই আছে যাদের কোনো সংজ্ঞা মুখস্থ বলতে বললে অনর্গল বলে দিতে পারে, কিন্তু যখন সেই সংজ্ঞাটা ব্যাখ্যা করতে বলা হয় তখন নিশ্চুপ। কারণ সে ওই সংজ্ঞাটা মুখস্থ করেছে!

বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষার যুগে মুখস্থ বিদ্যা একদমই পরীক্ষায় ফলাফল ভালো করতে একদমই সহযোগিতা করবে না। কাজেই বইয়ের সংজ্ঞা মুখস্থ না করে বুঝে বুঝে পড়ুন। চেষ্ঠা করুণ নিজের ভাষায় লেখার। কারণ মুখস্থ যতবারই করুণ না কেনো ভুলে যাবেন এটা শিওর, কিন্তু যখন বুঝে বুঝে পড়বেন - তখন ভুলে যাবার সম্ভাবনাটুকু একেবারেই কম থাকে। থাকে না বললে ভুল হবেনা।

 

৬. বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়ুন

বুঝে বুঝে পড়ার চমৎকার একটি উপায় হলো বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়া। একটিমাত্র সোর্স থেকে পড়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় কাঙ্খিত বিষয়টি বুঝতে অনেকেরই সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়লে এই সমস্যাটা দেখা যায় একেবারেই হয়না। সেটা হতে পারে গ্রুপ স্টাডি, সহপাঠীদের সহযোগিতা, শিক্ষকের সহযোগিতা কিংবা ইন্টারনেট থেকে পড়া। বর্তমানে ইউটিউবে অনেক চ্যানেল রয়েছে যেগুলো কোনো টপিক্সকে খুবই চমৎকার ভাবে বুঝিয়ে দেয়। 


৭. পরীক্ষায় খাতায় উত্তর করবেন যেভাবে

বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষার যুগ। উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যন্ত সৃজনশীল পদ্ধতিতেই পরীক্ষা হয়। প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের খ, গ, ঘ লিখতে হয় অনেক কিছু। বিশেষ করে গ ও ঘ ব্যাখ্যামূলক হওয়ায় ব্যাখ্যা করতে হয়। আর সৃজনশীল মুখস্থ করার মতো নয়। 

 

সৃজনশীল প্রশ্ন বা যেকোনো বর্ণনামূলক বা ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় এমনভাবে উত্তর করি শিক্ষকের যেটি ভালো লাগে না। কারণ আমরা লেখায় একই শব্দের ব্যবহার একাধিকবার বা বারবার করি অথবা এমনসব ভাষা ব্যবহার করি যার ফলে কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে না। আবার অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই হুবুহু উদ্দীপকটাই তুলে দেন। এটা একেবারেই ভুল। 

 

সৃজনশীল প্রশ্ন বা যেকোনো ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য আমাদের সেই উত্তরে এমনসব শব্দের ব্যবহার করতে হবে যেই শব্দগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী এবং মাধুর্যপূর্ণ। যেমন ধরুন "কমে যায়" কথাটাকে যদি আপনি লিখেন "হ্রাস পায়" এখানে অবশ্যই হ্রাস পায় শব্দটির ফলে আপনার সেই লাইনটি হয়ে উঠবে শক্তিশালী। এভাবে প্রতিটি লাইনেই কিছু কিছু শক্তিশালী সমার্থক শব্দ ব্যবহার করুণ। তখন দেখবেন আপনার উত্তরের সেই ভাষাটা দেখাবে এ যেনো বইয়ের ভাষা।


যাদের ফিকশন এবং ননফিকশন বই অনেক বেশি পড়ার অভ্যাস, তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটা অনুসরণ করা বেশ সহজ। কারণ তাদের শব্দভাণ্ডার অধিক পরিমাণে সমৃদ্ধ থাকে। 


৮. প্রচুর ফিকশন ও নন-ফিকশন বই পড়ুন

অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই দেখা যায় একাডেমীক বই ব্যাতিত অন্য কোনো বই খুব একটা পড়ে না। পরিবারের বাবা-মা বা অভিভাবকরাও দেন না। সারাক্ষণ বলেন একাডেমীক বই পড়তে। শিক্ষক মহাশয়দের ক্ষেত্রেও তাই। অন্যসব বই পড়লে নাকি সময় নষ্ট হয়! আসলেই কী তাই? 

 

এটা একেবারেই মিথ্যা কথা। যারা অধিক পরিমাণে ফিকশন ও ননফিকশন বই পড়ে, তাঁরা একাডেমীক বই অবশ্য খুব একটা পড়ে না। দেখা যায় সারা বছর  ফিকশন ও ননফিকশন বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা যে পড়ে না তা নয়। পড়ে, বরং অল্প সময়। কিন্তু যা পড়ে সব বুঝে বুঝে পড়ে। কারণ তাদের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। তাঁরা এতবেশি বই পড়ার দরুন তাদের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ। তাঁরা একরকম তাদের মস্তিষ্ককে চাষ করে নিয়েছে। ফলস্বরূপ। কোনো পড়া তাঁরা অল্পতেই বুঝে যায়। এবং লিখতে পারে নিজের ভাষায়। পরীক্ষায় তাঁরা এমনসব শব্দের ব্যবহার করে উত্তরে, মনে হয় এ যেনো হুবুহু বইয়ের ভাষা। ফলস্বরূপ শিক্ষকরা পূর্ণ নম্বর দিতে বাধ্য। যেমন ধরুন রকমারির প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ ভাই কিংবা কিংবদন্তী লেখক হুমায়ূন আহমেদ অথবা জাফর ইকবাল স্যার। এরা সারাক্ষণ নানান সব বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতো। তবে সেগুলো একাডেমিক নেই। বঙ্কিম, শরত কিংবা বিভূতিভূষণ কিংবা তারাশঙ্কর অথবা নানান সব জ্ঞান বিজ্ঞানের বই। 

 

৯. সহপাঠিদের শেখাও

যখন কোনো নতুন বিষয় শিখবেন, তখন সেই বিষয়টা সহপাঠীদের ও শেখান। তখন দেখবেন সেই বিষয়টা পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত হয়ে যাবে। অন্যদের শেখানোর ক্ষেত্রে আমাদের সকলের প্রিয় বিজ্ঞানী আইন্সটাইন বলেন; 

“একটা বিষয় তখনই তোমার পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত হবে, যখন তুমি বিষয়টি অন্য কাউকে বুঝিয়ে বলতে সক্ষম হবে”

 

১০. গভীর মনোনিবেশ

অনেক সময় দেখা যায় পড়তেই বসলেই নানান কিছু মনে পড়ে। এই ধরুন ২টা মিনিটের জন্য ফেসবুকে ঢুকবো! এইসব নানা ইচ্ছা মাথার মধ্যে কিলবিল করতে থাকে। এইসব চিন্তাভাবনা পড়ার সময় মস্তিষ্ক থেকে ঝেড়ে ফেলুন একেবারেই।


পড়তে বসার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই অন্যদিকে বা অন্যভাবনায় মনোযোগ দেয়া যাবেনা বরং পরিপূর্ণভাবে পড়ার মধ্যে মনোনিবেশ করতে হবে। ডুবে যেতে হবে একেবারে বইয়ের পাতায়। কল্পনায় যেনো সেইসব বইয়ের পড়াই ভাসতে থাকে।

 

১১. পড়ার মাঝে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন

অনেক সময় দীর্ঘক্ষন পড়ার ফলে আমাদের মাঝে একধরনের ক্লান্তি চলে আসে। তখন মস্তিষ্কের একটুখানি বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। সেই সময় ৫-১০ মিনিটের জন্য বিরতি নিতে পারেন। শুনতে পারেন একটা গান কিংবা একটু হাঁটতে পারেন। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এই বিরতি যেনো আবার ঘন্টায় পরিণত না হয়। তবে আপনার যদি বিরতির প্রয়োজন না হয়, সেক্ষেত্রে বিরতি না নেয়াই ভালো।

 

১২. গল্পের মতো করে পড়ো

গল্প পড়তে বা শুনতে আমাদের কারনা ভালো লাগে! আমরা কিন্তু চাইলেই আমাদের পড়ালেখাকে গল্পের মতো করে পড়তে পারি। অনেক সময় পড়ালেখাকে আমাদের কাছে বোরিং মনে হয়। চাইলেও এই বোরিং সময়টাকে আমরা খুব সহজে উপভোগ করতে পারিনা। কিন্তু যদি পড়ালেখাকে গল্পের মতো করে পড়া যায়, সেক্ষেত্রে এই বোরিং সময়টাকে খুব সহজেই উপভোগ করা যায়।


১৩. নিজেকে পরীক্ষা করা

অধ্যায় শেষ করার পর, আমাদের উচিৎ নিজেকে পরীক্ষা করে নেয়া। সেক্ষেত্রে সেই অধ্যায়টার মডেল টেস্ট কিংবা বিভিন্ন কুইজ দিতে পারি। অথবা পুরো বই শেষ করার পরার সেই বইটার মডেল টেস্ট এবং কুইজের মাধ্যমে নিজের পড়াকে খুব সহজেই ঝালাই করে নেয়া যায়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে নিজেরাই পরীক্ষা করে নিতে হবে।

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!