রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট |
রংপুর
পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট (Rangpur Polytechnic Institute) একটি দেশের অন্যতম
প্রাচীন ও বৃহত্তম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এটি দেশের সবথেকে সেরা এবং প্রথম
সারির একটি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকবছর ধরে রংপুর
পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডুয়েটে চান্সপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেশের
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম এবং ক্রমেই এর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিয়ে পারি জমাচ্ছে বিদেশের সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অবস্থান
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮২ সালে। রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট রংপুর নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১.৯ কিলোমিটার দূরে শহরের জুম্মাপাড়ায় অবস্থিত। এর বিপরীতে রংপুর বিভাগীয় কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অবস্থিত।
২০১৯ সালে রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। কাজেই রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর অবস্থান সর্বসাকুল্যে বিবেচনা করলে এটি দেশের প্রথম সারির একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
একটুকরো ইতিহাস
প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ জনসম্পদ গড়ার লক্ষে ১৮৮২ সালে "বেইলী ব্রীজ গোবিন্দ লাল টেকনিক্যাল স্কুল" নামে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। তখন ব্রিটিশ শাসনের সময়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান সরকারের সময় ৭ স্টেপ কর্মসূচিতে সিভিল এবং পাওয়ার টেকনোলজি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর টেকনিকেল ইন্সটিটিউট। এরপর ১৯৬৮ সালে যুক্ত করা হয় আরও দুটি টেকনোলজি তথা মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল। তখন এই প্রতিষ্ঠানের নামকরন করা হয় রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।
Read More:
ডিপ্লোমা বনাম ইন্টার - কোনটা সেরা?
পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১৯৯২ সালে যুক্ত করা হয় আরও তিনটি টেকনোলজি তথা ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার এবং ইলেকট্রমেডিকেল।
ক্যাম্পাস
মূল ক্যাম্পাসে রয়েছে দুটি একাডেমিক ভবন, রয়েছে অফিস, লাইব্রেরী, ৫০০ জন ধারন ক্ষমতাসম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম, আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ওয়ার্কশপ এবং রয়েছে জিমনেসিয়াম।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে দুটি বৃহদাকার মাঠ। একটি
ক্যাম্পাসের মধ্যে এবং অন্যটি ক্যাম্পাসের বাহিরে রংপুর পলিটেকনিক উচ্চ
বিদ্যালয়ের পাশে। এর পাশেই সদ্য গড়ে উঠতেছে রংপুর সরকারি মহিলা পলিটেকনিক
ইন্সটিটিউট যেটির কাজ প্রায় শেষের দিকে।
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কে বলা হয় ডিপ্লোমার বুয়েট। এর একাডেমিক এবং আবাসিক ভবনগুলো সিরামিক ইট দ্বারা নির্মিত ফলে এর সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে। আয়তনের দিক দিয়েও এটি বেশ বড়। ৩২.৯ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে এর সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের ভিতরে রয়েছে চারদিকে ফুলের বাগান, রয়েছে সুবিশাল অরণ্য যেখানে ভরে ওঠে অসংখ্য পাখিদের কলরব। বিশেষকরে সন্ধ্যার মুহুর্তে এই প্রতিষ্ঠানের চারদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কলকাকলিতে ভরে ওঠে।
Read More:
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সেরা পাঁচ ডিপার্টমেন্ট
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রধান গেটের দুদিকে রয়েছে ফুলের বাগান। ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকতেই হাতের ডানে রয়েছে পাখিদের অভয়ারণ্য, সুবিশাল অরণ্য এবং বামে রয়েছে এই ইন্সটিটিউটের একমাত্র জামে মসজিদ। মসজিদটি বেশ বড়। এই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এখানে নামাজ আদায় করেন। মসজিদের ভিতরে রয়েছে চারদিক টাইলস করা এবং চারদিকেই এসির ব্যবস্থা। একটু সামনে গেলেই এই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র পুকুর। পুকুরটা আয়তনে বেশ বড়।
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের একমাত্র পুকুর |
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের এই পুকুরটিকে ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তী। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ গেছে তিনজনের। প্রথম জন এ মাথা থেকে ও মাথা সাতরে যাওয়ার মাঝ পথে অনাকাঙ্খিত ভাবে আটকা পড়ে সেখানেই ছেলেটা মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে এই পুকুরের চারদিকে বিলবোর্ডে লেখা রয়েছে এই পুকুরে গোসল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপর থেকে কেউ গোসল করলেও পুকুরের মাঝে কেউ অবস্থান করে না।
Read More:
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ভর্তি হওয়ার আগে যা জানা বাধ্যতামূলক
এই পুকুরে চাষকরা মাছগুলো ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস এবং শিক্ষকদের আবাসনে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে রয়েছে দুটি একাডেমিক ভবন। একটু সামনে, তিনতলা বিশিষ্ঠ বিশাল ভবন এবং অপরটি তার পরেই একাডেমিক ভবন ২। দুটি বিল্ডিং এর মাঝে প্রতিটা তলাতেই রয়েছে এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং এ যাতায়াতের জন্য সেতু।
সামনের ভবনটি রপই একাডেমিক ভবন - ১ |
এর বামদিকেই অবস্থিত তাপসী রাবেয়া ছাত্রাবাস এবং শিক্ষকদের আবাসন এবং ডানদিকে রয়েছে শাহজাহান কবির ছাত্রাবাস। এর পিছনেই এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম মাঠ।
বৃষ্টিস্নাত বৃষ্টির দিনে রপই ক্যাম্পাস। পুকুরের ওপারে অভয়ারণ্য |
শিক্ষা কার্যক্রম
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠান প্রথম বর্ষে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর যাত্রা শুরু হয় মাত্র চারটি ডিপার্টমেন্ট (সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল এবং পাওয়ার) নিয়ে। শুরুর দিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো মোটে ১২০ জন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে মোটে ৭টি ডিপার্টমেন্ট। প্রতিটি বিভাগে চলমান শিফট রয়েছে দুটি করে এবং গ্রুপ রয়েছে চারটি। প্রতি গ্রুপে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জন করে।
আবাসিক হল
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে রয়েছে ছেলেদের জন্য দুটি ছাত্রাবাস এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে একটি। একনজরে দেখে নেয়া যাক ছাত্রাবাসগুলি;
ছেলেদের জন্য ছাত্রাবাস
- শাহজাহান কবির ছাত্রাবাস
- তিস্তা ছাত্রাবাস
শাহজাহান কবির ছাত্রাবাসে যেকোনো শিক্ষার্থীকে নেয়া হয়না। এখানে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী তাদের সুযোগ দেয়া হয় থাকার। একমাত্র রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এই ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পান। শাহজাহান কবির ছাত্রাবাসের বিল্ডিং স্ট্রাকচার দৃষ্টিনন্দন। এর সামনেই রয়েছে সুবিশাল ফুলের বাগান এবং তার মাঝে এই ইন্সটিটিউটের শহিদ মিনার।
মেয়েদের জন্য ছাত্রীনিবাস
- তাপসী রাবেয়া ছাত্রীনিবাস
শিক্ষকদের আবাসন
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে শিক্ষকদের জন্য রয়েছে মোটে দুটি আবাসিক ভবন। একটি ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং অপরটি ক্যাম্পাসের বাহিরে তিস্তা ছাত্রাবাসের পাশেই।
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে জিপিএ ৪.৭০ এর উপরে প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সুযোগ মিলেছে। তবে সিভিলের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গোল্ডেন এ+ প্রাপ্তরাই চান্স পেয়েছে। তবে ২০২২ এর হিসেবে প্রথম চয়েজ সেলেকশনে সকল ডিপার্টমেন্টে উভয় শিফটেই গোল্ডেন এ+ প্রাপ্তরাই সুযোগ পেয়েছে। অসংখ্য এ+ সহ বেশ কয়েকজন গোল্ডেন এ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে দ্বিতীয় চয়েজের রেজাল্টের অপেক্ষায়।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।