রাতারগুল |
রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট হলো সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি মিঠাপানির জলাবন। এই বনটি প্রায় ৩০৩২৫.৬১ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত, তবে এর মধ্যে ৫০৪ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে বন এবং বাকি সম্পূর্ণটাই জলাভূমি। তবে বর্ষায় সমগ্র এলাকাটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন এই সমগ্র এলাকাটি দেখতে মনে হয় একইরকম। তাই তো রাতারগুল সিলেটের সুন্দরবন নামে খ্যাত। অনেক পর্যটকের কাছে রাতারগুল বাংলাদেশের অ্যামাজন।
রাতারগুল জলাভূমি চার থেকে পাঁচ মাস তলিয়ে থাকে পানির নিচে। তখন মাথা উঠিয়ে থাকা অপরূপ এ বনের গাছগুলি। রাতারগুলোর অথই পানির চারদিকে বিশাল এক অরণ্য। ভারি অপরূপ দেখতে। তাইতো সারাদেশ থেকে হাজার হাজার ভ্রমনপিপাসুরা আসে প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
বর্ষার শেষের দিকে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উত্তম সময়। তখন চারদিকে অথই পানি। বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। গাছের ডালে দেখা মিলে অসংখ্য পাখি। চারদিক সবুজ হয়ে ওঠে সেসময়।
শীতকালে রাতারগুল বনে দেখা মিলে হাজারো অতিথি পাখি। অসংখ্য পাখিদের ঝাক এসে নীড় বাধে শীতে রাতারগুলে। তখন পাখিদের সৌন্দর্য উপভো করা যায় বেশ। কে পাখি ভালো না বাসে! আমার মতে প্রত্যেকটা মানুষের অধিকাংশই পাখি প্রেমী। পাখিদের কিচিরমিচির, কলকাকলী ভারি অপরূপ লাগে দেখতে। পাখি প্রেমীরা নৌকার মধ্যে বসে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইবে পাখিদের দিকে। কি সুন্দর!
রাতারগুল ভ্রমণের উত্তম সময়
বর্ষার শেষের দিকে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
যেভাবে যাবেন রাতারগুল
রাতারগুল যেতে হলে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। সিলেট থেকে যেতে হবে গোয়াইনঘাটে। সিলেট থেকে গোয়াইনঘাটের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে বাসে সিলেট যাওয়ার উপায়
ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ বা মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক বাস সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, শ্যামলী ও এনা পরিবহণ। এসব বাসের রয়েছে এসি এবং নন-এসি উভয় সার্ভিস। বাস প্রতি জনপ্রতি টিকেটের মূল্য পড়বে ১৪০০ থেকে ১৫০০। এসি বাসের ক্ষেত্রে ৬০০ থেকে ৮০০।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়া উত্তম। ট্রেনে সিলেট যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভাড়াটাও কম লাগে। ঢাকা থেকে সিলেটে যাওয়ার ক্ষেত্রে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর থেকে বেঁচে নিতে পারেন উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে। ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৩২০টাকা এবং এসি চেয়ারের ক্ষেত্রে ৬৪০টাকা। সময় লাগে কোনোটাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা। টিকেট কেটে নিতে পারেন অনলাইন থেকে সেখানে টাইম দেখে।
তবে যাতায়াতের জন্য উপবন ট্রেন উত্তম। ভোঁরে সিলেটে পৌঁছাতে চাইলে অবশ্যই উপবন এক্সপ্রেসে যাত্রা করতে হবে। উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনখানা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ৮.৩০ এ এবং সিলেট পৌঁছে ভোঁর ৫টায়। ট্রেনে বর্তমানে বেশ ভালো ব্যবস্থা। মোবাইল চার্জ করার ও ব্যবস্থা রয়েছে। যেটি বেশ উপকারী।
সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার উপায়
সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার ক্ষেত্রে ৫ জনের গ্রুপ করে যাওয়া ভালো। এতে খরচ যেমনি কম হয়, তেমনি বেশ আরামে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে আপনি চাইলে একাইও যেতে পারেন। একাই যাওয়ার ক্ষেত্রেও দল বেধে যাওয়ার থেকে ঢেঁড় আরাম বেশি।
সিলেট শহরের খাদিম চা বাগান অথবা খাদিমনগর উদ্যানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে খুব সহজেই অল্প সময়ে সিএনজি, অটোরিকশা কিংবা জীপ নিয়ে যাওয়া যায় শ্রীঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত। সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন, এক্ষেত্রে এক্ষেত্রে সেই পথে বিছনাকান্দিও ঘুরে আসতে পারবেন। রিজার্ভ সিএনজি কিংবা অটোরিকশার ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০টাকা। বিকেলের মধ্যেই রাতারগুল থেকে সিলেটে ফেরা যায়, কাজেই বিছনাকান্দিও যুক্ত করে নিতে পারেন সেই পথে। সিএনজি রিজার্ভ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।
একা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সিলেটের আম্বরখান থেকে লোকাল সিএনজিতে চড়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত আসতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০টাকা।
শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাতারগুল জঙ্গলে প্রবেশের মুহুর্তে জেলেদের ছোট ছোট নৌকা দেখতে পাবেন। এসব নৌকায় ৪ থেকে ৫জন বসা যায়। ভাড়া নিতে পারেন একটি নৌকা। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৮৫০টাকা। চাইলে রাতারগুল থেকে লাইফ জ্যাকেট কিংবা ছাতা ভাড়া নিতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
রাতারগুলে থাকার ব্যবস্থা নেই। গোয়াইনঘাটেও খুব একটা ভালো মানের হোটেল নেই। সেক্ষেত্রে আপনাকে ফিরে আসতে হবে সিলেটে। সিলেট থেকে রাতারগুলের দূরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় শুধুমাত্র রাতারগুল ভ্রমণ করে বিকেলের মধ্যে সম্ভব। যদি রাতারগুলের সাথে বিছনাকান্দি ঘুরতে চান, সেক্ষেত্রেও সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেটে ফেরা সম্ভব।
রাতে থাকার ক্ষেত্রে সিলেট শহর উত্তম। এখানে লালাবাজার ও দরগা রোডে রয়েছে অনেক কম ভাড়ায় মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্টহাউজ রয়েছে। এসব হোটেলে থাকতে পারবেন ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে বেশ আরামে। উঠতে পারেন গুলশান, দরগা গেট, হোটেল হিল টাউন, কায়কোবাদ, সুরমা ইত্যাদি হোটেলে। অথবা আপনার পছন্দমতো যেকোনো হোটেলে উঠতে পারেন। এসব হোটেলে আপনার সামর্থ অনুযায়ী আপনি থাকতে পারবেন।
ভালো সার্ভিসের হোটেলের মধ্যে রয়েছে হলি ইন, হলি গেইট, ব্রিটানিয়া হোটেল, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, লা ভিস্তা হোটেল ইত্যাদি।
লাক্সারিয়াস হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল নুরজাহান গ্রান্ড, গ্রান্ড প্যালেস, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমপুর রিসোর্ট ইত্যাদি। এসব আবাসিক হোটেলে আপনি থাকতে পারবেন ২০০০ থেকে ১০০০০টাকা পর্যন্ত।
সতর্কতা
- ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেট শহরে ফিরে আসার চেষ্ঠা করুণ।
- বন্যার সময় সম্পূর্ণ বন পানিতে ডুবে থাকার দরুন গাছের ডালে আশ্রয় নেয় সাপ, সেদিকে সতর্ক থাকুন।
- এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে বেশ, সেদিকে নজর রাখুন।
- সাঁতার জানা না থাকলে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন।
- বর্ষাকার, যখন তখন বৃষ্টি আসতে পারে - কাজেই ছাতা বা রেইনকোট সাথে রাখতে পারেন।
- সিএনজি বা যানবাহনের ভাড়া ঠিক করার সময় দরদাম করে নিন।
- রাতারগুল বা সিলেটের পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যেখানে সেখানে দয়া করে ময়লা ফেলবেন না, যেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্টকারি ব্যাক্তিরা পরিবেশের শত্রু। পরিবেশ তাদের পছন্দ করেন না। আর পরিবেশ যাদের পছন্দ করেন না, তাদের মহান সৃষ্টিকর্তাও পছন্দ করেন না। কারণ এটা তারই দান।
আরও পড়ুন
কম খরচে একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ ট্যুর প্ল্যান
কম খরচে একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।