কম খরচে একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ ট্যুর প্ল্যান

Nir
0

শ্রীমঙ্গল হলো সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। শ্রীমঙ্গল উপজেলা বাংলাদেশে চায়ের রাজধানী হিসেবে সর্বাধিক সুপরিচিত ফলে একে বলা হয় চায়ের রাজধানী। শ্রীমঙ্গলের নাম যে শুধুই চায়ের রাজধানী তাই নয়, বরং শ্রীমঙ্গলের আরও বেশ কয়েকটি ডাকনাম রয়েছে। শ্রীমঙ্গলে পাহাড় ও ঘন বনাঞ্চল থাকার দরুন এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, ফলে একে বৃষ্টিপাতের অঞ্চল ও ঠাণ্ডা এলাকার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। একে বৃষ্টিপাতের অঞ্চল এবং শীতের শহরও বলা হয়।


শ্রীমঙ্গলের চারদিক জুরে চা-বাগান আর চা-বাগান। পাহাড়ি ঢালে বাঁক নেয়া চা-বাগানগুলি দেখলে মন ভরিয়ে যায়, প্রাণ জুড়িয়ে যায়। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। তবে এ অঞ্চলে যে শুধুই চা বাগান রয়েছে তাই নয়, এখানে রয়েছে হামহাম জলপ্রপাত যাকে যজ্ঞকুণ্ডের ধারাও বলা হয়, রয়েছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, বাইক্কা বিল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, রাবার বাগান, অফিং হিলসহ ইত্যাদি বেশকিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। শ্রীমঙ্গল যেনো পুরোটাই একটা দর্শনীয় স্থান। সারা বছর এখানে অসংখ্য পর্যটক আসে সময় কাটাতে। তাইতো শ্রীমঙ্গলকে বলা হয় পর্যটন শহর।


ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল খুব সহজেই একদিনে ভ্রমণ করা যায়। অনেকের কাছে একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ বেশ জনপ্রিয়। আমরা এখন দেখবো একদিনে ভ্রমণের দুটি প্ল্যান এবং খরচ। 


যেভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল

আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গলে। যেহেতু আপনি একদিনে ভ্রমণ করবেন, সেহেতু আপনাকে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছতে হবে ভোরের মধ্যে। তবে ঢাকার বাহিরে থেকে এলে একদিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সময় করে শ্রীমঙ্গলের সকল স্থান ভ্রমণ করাটাই উত্তম। 

তবে আপনি যদি ঢাকা থেকে আসেন, তবে একদিনে ভ্রমণ আপনার জন্য অতি উত্তম।

 

ঢাকা থেকে বাসে যেভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল

ঢাকা থেকে বাসে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার সায়েদারাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে ৪৭০টাকা ভাড়ায় হানিফ, শ্যামলি, এনা, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি নন এসি বাসে খুব সহজে যেতে পারেন। এখান থেকে রাত ১১টা বা ১২টার মধ্যে রওয়ানা দিন। ভোরের মধ্যে পৌঁছে যাবেন। সময় লাগে সাধারণত ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে যেভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল

ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যাওয়া উত্তম। ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে উপবন, পারাবত, জয়ন্তিকা বা কালনী এক্সপ্রেস আপনার পছন্দমতো যেকোনো একটি ট্রেন বেঁচে নিতে পারেন।জনপ্রতি ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে মাত্র ২৪০টাকা। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে ট্রেনে যেতে চাইলে সেক্ষেত্রে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেসে যাত্রা করা বেশ সুবিধাজনক। সময় লাগবে ছয় ঘন্টা এবং ভোরের মধ্যেই শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে যাবেন।

 

ট্রেন যখন শাহজীবাজার অতিক্রম করবে, তখন চোখে পড়বে একদিকে ছোট ছোট পাহাড়। শায়েস্তাগঞ্জ অতিক্রম করতেই ওদিকে শুরু হবে সাতগাঁও টি-স্টেট। দুদিকে পাহাড়ি চা-বাগান তার মাঝ দিয়ে চলেছে ট্রেনখানা। ভারি সুন্দর দেখতে দুদিকের চা-বাগানগুলি। তার মাঝে মাঝে গাছগাছালি, লেবুগাছ। মনে হবে রূপকথার রাজ্যের মধ্য দিয়ে যেনো আপনি যাচ্ছেন। তখন ট্রেনের গতি থাকে ধীর যেনো ভ্রমণরত অবস্থায় দুদিকের পাহাড়ি চা-বাগান উপভোগ করা যায়। 


শ্রীমঙ্গলে সকালের নাস্তা

ট্রেনে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি ভোঁরে কিংবা ভোরের আগে পৌঁছুবেন, সেক্ষেত্রে সকাল হওয়া অব্ধি স্টেশনেই সময় কাটিয়ে দিন। খুব সকালে পানসী অথবা পাঁচ ভাই হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিন। অথবা চাইলে নিজের ইচ্ছামতো কোনো হোটেলে খেয়ে নিতে পারেন। এসব হোটেলে খুবই সুলভ মূল্যে নানান ধরনের মজাদার খাবার পাওয়া যায়।


শ্রীমঙ্গলে একদিনে যা যা দেখবেন

সকালের নাস্তা করে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে অথবা লোকাল পরিবহনে বেরিয়ে পড়ুন একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে। প্রথমে রওয়ানা দিন লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশ্যে। শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাঁচজন একত্রে গেলে ভালো হয়। সেক্ষেত্রে মাত্র ১২০০টাকায় সিএনজি ভাড়া করে বেশ আরামে একদিনের ট্যুরটি সম্পূর্ণ করতে পারবেন। এতে টাকাও কমে যাবে। প্রতিজনের থেকে মাত্র ২৫০। আর যদি একা যান, সেক্ষেত্রে লোকাল পরিবহনে রওয়ানা দিন। অথবা যুক্ত হতে পারেন শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে সেখানে কোনো একটা গ্রুপে।


প্রথম গন্তব্য লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এটি কালেঙ্গা রেঞ্জেরই একটি অংশ। এ বনে দেখা পেতে পারেন অসংখ্য বানর হনুমানের ছোটাছুটি। এ গাছ থেকে ওগাছ তাদের ছোটাছুটি বেশ ভালো লাগে। লাল রঙ্গের হনুমানের দেখা মেলে বেশ। শ্রীমঙ্গলের বনে হনুমানের বসবাস যেখানে সেখানেই, রাবার বাগানে তাঁরা আসে রাবার ফল খেতে। মানুষ এলে রাবার ফল দিয়ে ঢিল ছুড়ে পালায়। কিন্তু বানরের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম, গায়ে ব্যাগ দেখলে ওরা ঘাড়ে ওঠে, খাবার খোঁজে। ওদের প্রিয় খাবার কলা।

 

এরপর সেখান থেকে ট্রেকিং করে সরাসরি চলে যাবেন মাধবপুর লেকে। চারদিকে পাহাড়ি চা-বাগান, তার মাঝেই দারুণ অপরূপা লেকটি। লেকের মাঝে ফুটে আছে পদ্ম-পানকৌড়ি, দেখতে ভারি মিষ্টি। দুষ্প্রাপ শাপলাগুলি ফুটে আছে কি দারুণভাবে। চাইলে এখানে গোসল করতেও পারেন, বেশ পরিষ্কার পানি। মাধবপুর লেকের শান্ত-শীতল জল, চারদিকের অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য, যেদিকে চোখ যায় শুধু চা-বাগান আর চা-বাগান। আপনার মনকে ভরে দিবে প্রশান্তিতে। অদ্ভুত বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকবেন সেদিকে। 

 

মাধবপুর লেকে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সেখান থেকে চলে আসুন নুরজাহান চা-বাগানের ভিতর দিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে। অসাধারণ একটি চা-বাগান নুরজাহান চা-বাগান। এর দুপাশে পাহাড়ি চা-বাগান, এর মধ্য দিয়েই বুক চিঁড়ে এগিয়ে গিয়েছে সুন্দর, শান্ত পথটা। এই বাগানের শেষের দিকে দেখবেন লেবু বাগান, আনারস বাগান। ভাগ্য ভালো থাকলে সেখান থেকে কিনতেও পারবেন। এরপর চলে আসুন শ্রীমঙ্গল শহরে। দুপুরের খাবার সেরে নিন পানসী হোটেলে। 

 

শহরে বিকেলে ঘুরে দেখুন শ্রীমঙ্গলের একমাত্র সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা। এরপর সেখান থেকে আসুন নীলকন্ঠ চা কেবিলে। সাত রঙ চা খেতে ভুলবেন না যেনো। শ্রীমঙ্গল মানেই সাতরং চা নামেও বেশ পরিচিত। তবে এখানে এগারো কালার পর্যন্ত চা পাওয়া যায়। কিন্তু খুব একটা স্বাদ পাবেন না। সাতরং চা নিবে এক গ্লাস ৭০টাকা। তবে এখানকার লেবুর চা বেশ ভালো। সেখানেই পেয়ে যাবেন চা গবেষণা ইন্সটিটিউট। বিকেলের কিছুটা সময় সেখানে কাঁটাতে পারেন।

 

ঢাকার ফেরার পূর্বে শ্রীমঙ্গলের বদ্ধভূমি ৭১ দেখতে ভুলবেন না। সময় করে এখানে একটু ঢুকবেন। বদ্ধভূমিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো টিকেট লাগেনা। এ স্থানটির ইতিহাস অনেক। ১৯৭১ সালে একসাথে ৪৭ জন চা শ্রমিককে একত্র করে গুলি ছুড়ে হত্যা করেছিলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মধ্যেই হত্যা করেছিলো ৫০ জনের অধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ নারী-পুরুষকে। কারণ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষনের পর এখানে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র রূপ নিয়েছিলো।


ট্রেনে ঢাকায় ফেরার ক্ষেত্রে বিকেল ৫টার মধ্যেই শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে ফিরুন। শ্রীমঙ্গলে আসার পথে রাতের অন্ধকার থাকার দরুন যাত্রাপথে দুদিকে পাহাড়ি-চাবাগান ও লেবু-বাগানের সমারোহ মিস করেছেন, কিন্তু ঢাকায় ফেরার পথে মিস হবেনা। পারাবত এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৫.৫৮তে শ্রীমঙ্গল থেকে যাত্রা শুরু করে। এই ট্রেনটি সিলেট - ঢাকা রুটে চলাচল করে। ঢাকায় ফিরুন শ্রীমঙ্গল থেকে পারাবত এক্সপ্রেসে। ভাড়া পড়বে ২৪০টাকা।

নোটঃ যাওয়া আসার ট্রেন টিকেট আগে থেকে অনলাইনে কেটে নিন।

খরচ

  • ট্রেনের ক্ষেত্রেঃ যাওয়া + আসা ২৪০+২৪০=৪৮০
  • সকাল-দুপুর-রাতের খাবারঃ ৫০+১৫০-১০০=৩০০ (আপনার ইচ্ছামতো করে নিতে পারেন)
  • সিএনজি রিজার্ভঃ ১২০০/৫=২৪০ (সম্পূর্ণ দিন)
  • অন্যান্যঃ ১০০
  • মোট খরচঃ একদিনের ট্যুরে = ১১২০টাকা 

নোটঃ খরচের এই তালিকা আপনি আরও কমাতে পারবেন। আপনি চাইলে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ৫০ করে ১৫০ খেতে পারেন। অন্যান্য খরচও আপনি কমাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ১০০০ টাকায় হয়ে যাবে সম্পূর্ণ ভ্রমণ। সিএনজি রিজার্ভ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।

 

সতর্কতা

  • দয়া করে কেউ শ্রীমঙ্গলে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট করবেন না। 
  • সুলভ মূল্যে খাবার খেতে চাইলে পানসী বা সাতভাই হোটেলকে বেঁচে নিন। 
  • সিএনজি রিজার্ভ নেয়ার ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিন। 
  • ট্রেনে ফেরার পথে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন, এবার যাওয়া ও ফেরার টিকেট আগেই অনলাইন থেকে কেটে নিন।

 

আরও পড়ুন 

কম খরচে একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড

শ্রীমঙ্গলের পথে পথেঃ কালীঘাট

প্রিয় মানুষের খোঁজে, সিলেটে - ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতা

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!