কম খরচে একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড

Nir
0

 

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড একটি চট্রগ্রামের উপজেলা। বর্তমানে এই উপজেলাটি রয়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সান্নিধ্য লাভের জন্য একটুখানি অ্যাডভেঞ্চারের আশায়। কেউ আসে ক্যাম্পিং করে একটা রাত পাহাড়ের কোলে থাকার জন্য আবার কেউ আসে ট্রেকিং করে ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্যে গাঁ ভিজিয়ে ফেরার জন্য কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। অনেকেই রওয়ানা দেয় গুলিয়াখালি কিংবা বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের দিকে। সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত এমনই অপরূপ, এখানে দেখা মিলে অপরূপা সবুজ গালিচার। দূরে যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। পানির ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে তীরে। পানির ওপারে ধিরে ধিরে ডুপ দেয় সাগরে সূর্যি মামা তার কিরণ হারিয়ে। পিছনে তাকালেই চোখে পড়ে দূরের চন্দ্রনাথ পাহাড়। পাহাড়ের উপরে খেলনা ঘরের মতো ছোট্ট একখানি ঘর। অনেক দূরে হওয়ার দরুন এমনটা দেখায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওইটাই চন্দ্রনাথের মন্দির। যা ভূমি থেকে ১১৯২ ফিট উপরে অবস্থিত। সীতাকুণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়া। 

 

সীতাকুণ্ড এমনই একটি স্থান, কী নেই এখানে? এখানে রয়েছে চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়, রয়েছে অসংখ্য ঝর্ণা, রয়েছে সমুদ্র সৈকত, রয়েছে লেক, রয়েছে ইকোপার্কসহ আরও কত্ত কি! এগুলো সবই ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। যার দরুন অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু প্রতিবছর আসে সীতাকুণ্ডে। 


আমরা একটু একনজরে দেখে নেই কী কী রয়েছে সীতাকুণ্ডে, 

  1. চন্দ্রনাথ পাহাড়
  2. মহামায়া লেক
  3. গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত
  4. বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত 
  5. ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল 
  6. কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল এবং
  7. সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক

কর্মব্যাস্ততার দরুন অনেকেই বেশ-কয়েকদিন হাতে নিয়ে ঘুরতে যেতে খুব একটা সময় পান না। সাধারণত এমন মানুষেরাই একদিনে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন গন্তব্যের খোঁজ করেন। সেইসব মানুষদেরই জন্য আমাদের এই ট্যুর প্লান, একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণ।


সাধারণত সীতাকুণ্ডের সকল স্থানগুলো ঘুরতে হলে ২-৩ দিনের মতো সময় লেগে যায়। আমরা যেহেতু একদিনে ঘুরবো সেক্ষেত্রে সকল স্থান দেখতে পারবো না। একদিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমরা ট্যুর প্লানের মধ্যে রাখবো তিনটি স্থান। পাহাড়, সমুদ্রসৈকত ও ঝর্ণা। আমাদের এ ট্যুর প্লানে যুক্ত থাকবে এইসব।  

  1. চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মণ্ডির
  2. গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত 
  3. খৈয়াছড়া ঝর্ণা 

 

কীভাবে যাবেন?

আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো প্রথমে সেখান থেকে চট্রগ্রামে আসুন।  

 

ঢাকা থেকে বাসে করে সীতাকুণ্ডে 

আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ডে যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পূর্বের দিন রাতেই বাসে উঠতে হবে। সায়েদাবাদ, ফকিরাপুর, মহাখালি বাসস্ট্যান্ড হতে শ্যামলি, এস আর, সৌদিয়া, হানিফ, এনাসহ অনেক বাস চট্রগ্রাম রুটে চলাচল করে। এসব বাসের যেকোনো একটির টিকেট কাটতে পারেন। এক্ষেত্রে নন-এসি বাসে টিকেট পড়বে জনপ্রতি ৪২০ থেকে ৪৮০ এবং এসি বাসের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৮০০ থেকে ১১০০টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। 

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সীতাকুণ্ডে

ট্রেনে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকা থেকে আসতে হবে ফেনিতে। এক্ষেত্রে জনপ্রতি টিকেট পড়বে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে ২৬৫টাকা এবং এসিতে ৭৯০টাকা। এক্ষেত্রে রাত ৯.২০ এর মধ্যে মহানগর এক্সপ্রেস অথবা রাত ১১.৩০ এর ট্রেন তুর্না এক্সপ্রেসে উঠতে পারেন। ফেনী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১০টাকা ভাড়ায় চলে যেতে হবে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে লোকাল বাসে করে ৫০-৮০টাকা ভাড়ায় চলে যান সীতাকুণ্ডে। চেষ্ঠা করুণ তুর্ণা এক্সপ্রেসে ওঠার, কারণ এটি ফেনীতে নামিয়ে দিবে ৪.৩৫ এ।  


অথবা আপনি চাইলে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে সীতাকুণ্ডে আসতে পারেন, তবে সেটি মেইল ট্রেন। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১২০টাকা। এই ট্রেনটি রাত ১০.৩০ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। সীতাকুণ্ডে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করবে। তবে এই ট্রেনে সিট পেতে হলে আপনাকে অনেক আগে থেকেই টিকেট করে ট্রেনে উঠে সিটে বসতে হবে, নইলে পুরোটা পথ দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কারণ এই ট্রেনে মুহুর্তেই সিট সব ব্লক হয়ে যায়। এবং আপনাকে আপনার সাথে থাকা জিনিসপত্র নিরাপদে রাখতে হবে। যারা কম খরচে সীতাকুণ্ড ঘুরতে চান তাঁরা এটা অবলম্বন করতে পারেন। 

 

চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে

চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে ৫০-৮০টাকা। চট্রগ্রাম থেকে রওয়ানা দেয়ার ক্ষেত্রে চেষ্ঠা করুণ খুব ভোঁরে রওয়ানা দিতে।  


মূলকথা যেখান থেকেই আসুন না কেনো প্রথমে আপনাকে সীতাকুণ্ডে আসতে হবে। বাসের ক্ষেত্রে প্রতিটা চট্রগ্রামগামী বাসই সীতাকুণ্ডের উপর দিয়ে যায়। 

 

চন্দ্রনাথ পাহাড়

সীতাকুণ্ডে আসুন সকালের মধ্যেই। এসে নাস্তা করে নিন কোনো একটা হোটেল থেকে। ১০০-১২০ টাকার মধ্যে সেইভাবে সকালের নাস্তা হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার যদি কম খরচের ট্যুর হয় সেক্ষেত্রে চেষ্ঠা করুণ ডাল-পরটা খাওয়ার। ৩০-৫০ এর মধ্যে পেটপুরে খেতে পারবেন। তারপর একটু রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উদ্যেশে।


সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পায়ে হেঁটে কাছেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের রোডটাতে যান। অথবা কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে রোডটা কোনদিকে। সেখানে দেখবেন হাতের ডানে অনেক সিএনজি দাড়িয়ে রয়েছে। এগুলো সব চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবে। সিরিয়ালে থাকা সিএনজিতে উঠে পড়ুন, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০টাকা। নামিয়ে দিবে একেবারে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। চেষ্ঠা করুণ ৭.৩০ এর মধ্যে সিএনজিতে উঠতে, তাহলে ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। ৮টার মধ্যেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আসার চেষ্ঠা করুণ। পথে পড়বে ব্যাসদেবের মণ্ডির। যেখান থেকে হিন্দুরা পূজার উপকরণ নিয়ে সীতাকুণ্ড পাহাড়ে ওঠে তীর্থ যাত্রার জন্য। এখানকার বটবৃক্ষটিতে বসেই ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন মহাভারতের একটি খন্ড। 

 

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে কিনে নিন একটি লাঠি, যেটা পাহাড়ে উঠার সময় সাপোর্ট হিসেবে কাজ করবে। দাম পড়বে ২০-৩০টাকা। ফিরে লাঠিটি যার থেকে কিনেছেন তাকে ফেরত দিলে তিনি ১০টাকা ব্যাক দিবেন। 


পর্যটকদের কাছে এই স্থানটি বেশ রোমাঞ্চকর। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নানা জায়গা থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। অনেকের মধ্যে দেখা যায় এই পাহাড়ে উঠতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যায়, ফলে আবার নেমে পড়ে। আবার অনেকেই পাহাড় জয় করার আনন্দ উপভোগ করে। 

 

এই পাহাড়ে উঠতে হলে আপনাকে উঠতে হবে ১১৯২ ফিট বা ৩৬৫ মিটার। মণ্ডির পর্যন্ত যেতে হলে পারি দিতে হবে ২২০০টির ও বেশি সিঁড়ি। এখানকার কোনো কোনো স্থান বেশ পিচ্ছিল ও সংকীর্ণ ফলে উঠার পথে বিপজ্জনক হতে পারে। কাজেই সতর্কতার সাথে উঠুন চন্দ্রনাথ মণ্ডির পর্যন্ত। 

 

পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ১৫ মিনিট উঠবার পর চোখে পড়বে ছোট্ট একটি ঝর্ণা। এই ঝর্ণায় বর্ষায় বেশ পানি থাকে, শীতে সব পানি একেবারে কমে যায়। টুপ টুপ করে পড়তে দেখা যায় সেসময় অল্পখানি পানি। পাহাড়ে ওঠার সময় অবশ্যই বামপাশের পথ ধরে উঠবেন, এবং ডানদিকের পথ ধরে নামবেন। কারণ ডানদিকের পথ নামার জন্য অনেক সহজ, কিন্তু ওঠার জন্য না। 

 

দীর্ঘ দেড় ঘন্টা পাহাড় আরোহনের পর চন্দ্রনাথ পাহাড় পৌছানোর আগে আপনার চোখে পড়বে একটা মণ্ডির, এটির নাম বিরুপাক্ষ মণ্ডির। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। উপভোগ করুণ চারদিকের সৌন্দর্য। এখান থেকে দেখতে পারবেন সীতাকুণ্ড শহরকে। চারদিকে যতদূর চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড়। তারপর উঠে পড়ুন চন্দ্রনাথ মণ্ডিরে। এখান থেকে দেখা যায় দূরের বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরে ভাসমান জাহাজ গুলোকে দেখলে মনে হবে এ বুঝি শূন্যে ভেসে আসে। প্রথমবার আমি যখন গিয়েছিলুম, এমনটাই ভেবেছিলাম। এ বুঝি প্যারাসুট। কিন্তু না, ওগুলো বঙ্গোপসাগরে চলমান জাহাজ ও ট্রলার। বর্ষার মৌসুমে গেলে আপনি দেখতে পারবেন চারদিকে মেঘ উড়ছে। এক অন্যরকম সৌন্দর্যের মাঝে আপনি। 

 

যেহেতু আমাদের একদিনে আরও দুটি স্থান ঘুরতে হবে, কাজেই ১১টার মধ্যেই ফেরার চেষ্ঠা করুণ সীতাকুণ্ড বাজারে। 

 

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পর এরপরই আমাদের গন্তব্য খৈয়াছর্ণা ঝর্ণা। সীতাকুণ্ডে থেকে খৈয়াছড়া যেতে সময় লাগবে মোটের উপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো। 

 

চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে সীতাকুণ্ডে ফিরে ২০টাকা ভাড়ায় সেখান থেকে লোকাল বাসে উঠে চলে আসুন মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের কাছে মিরসরাই আইডিয়াল স্কুলের একদম সামনে। আইডিয়াল স্কুল স্কুল না চিনলে সেক্ষেত্রে আপনি বাসের হেল্পারকে বলে রাখুন আপনি খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাবেন। তিনি আপনাকে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাবার রাস্তায় এসে নামিয়ে দিবে। মিরসরাই আইডিয়াল স্কুল থেকে ১০০টাকা সিএনজি ভাড়ায় চলে যান একদম খৈয়াছড়া ঝর্ণার ঝিরির কাছে। 

 

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় রয়েছে ১৩টি ধাপ। খৈয়াছড়া ঝর্ণার একেকটা ধাপ যেনো একেকটা মুগ্ধতা সাজিয়ে রেখেছে দর্শনার্থীদের। প্রত্যেকটি ধাপই ব্যাস্ত দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করবার জন্য। 

 

খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রত্যেকটি ধাপ দেখতে হলে আপনার অন্য স্থানটি দেখা হবেনা। বেশ সময়ের প্রয়োজন এখানে। যদি সবগুলো ধাপই দেখতে চান সেক্ষেত্রে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত ট্যুর প্ল্যান থেকে বাদ দিতে পারেন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সবগুলো ধাপ অতিক্রম করার জন্য আপনার অবশ্যই যথেষ্ঠ শারীরিক সামর্থ থাকতে হবে। 

 

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার ক্ষেত্রে খৈয়াছড়া ঝর্ণার এক-দুইটি ধাপ দেখে ফিরে আসুন মিরসরাই আইডিয়াল স্কুলের এখানে। পেটে প্রচুর খিদে থাকলে এখানকার স্থানীয় হোটেলগুলোতে পেটপুরে খেতে পারেন ডাল-পরাটার ক্ষেত্রে ৩০-৫০ এই পেট ভরে যাবে আর ভাতের ক্ষেত্রে ১০০-১২০ এই বেশ আয়েশ করে ভালো আইটেম দিয়ে খেতে পারবেন। সেখান থেকে রোডে এসে চট্রগ্রাম রুটে যেকোনো লোকাল বাসে উঠে পড়ুন। চাইলে সেখানে না খেয়ে সীতাকুণ্ডে এসেও খেতে পারেন। 

 

সীতাকুণ্ডে এসে সেখানে সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড ব্রীজে আসুন। এখানকার সব সিএনজিই গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে যায়। উঠে পড়ুন একটা সিরিয়ালে থাকা সিএনজিতে, ভাড়া পড়বে ২০-৩০টাকা। নামিয়ে দিবে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতের বাঁধের একদম কাছে। 

 

সিএনজিতে থেকে নেমেই দেখবেন ঐতো কাছেই সমুদ্র সৈকত। যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। তার সামনে সবুজ ঘাসের গালিচা। এ এক প্রকৃতির অপরূপ বিষ্ময়। উত্তাল সাগরের গর্জন এখানে মিলেমিশে একাকার। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়তে যে আপনি বাধ্য এ আমি বেশ ঠাহর করে বলতে পারি। বিশেষকরে কাপলদের জন্য এ সৌন্দর্য উপভোগে বেশ দারুণ। সবুজ গালিচার মধ্যে বসে দুজনে মিলে ঘাসের সবুজ গালিচায় বসে দেখবেন দূরের সমুদ্র, উত্তাল ঢেউ ভেসে আসছে, একদিকে পানির মধ্যেই গাছগুলি। সাগরের মধ্যেই লুকিয়ে পড়ছে সূর্যি মামা। কী দারুণ! কী সুন্দর! 


ভ্রমণ খরচ

এই ডে ট্রিপে শুধুমাত্র যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া খরচ যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আপনি যদি কিছু কিনতে চান সেক্ষেত্রে সেটা আপনার বাড়তি চাহিদা। সেক্ষেত্রে আমাদের দেয়া হিসেবের বাহিরেও পড়তে পারে। তাছাড়া সময়-পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক সময় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভাড়া কম-বেশি হয়ে যায়, তবে এটি সামান্যই হয়। 

 

সাধারণত গ্রুপ করে গেলে অর্থাৎ কয়েকজন মিলে গেলে খরচ তুলনামূলক কম লাগে একাই যাওয়ার থেকে। গ্রুপ করে গেলে আপনারা সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। এতে করে সময় কম লাগে। তবে এই ট্রিপে আপনি একাই ও বেশ আরাম করে ভ্রমণ করতে পারবেন। 

 

ভ্রমণ হিসেব

ঢাকা থেকে নন-এসি বাসে সীতাকুণ্ড যাওয়া আসা - (৪৫০×২)=৯০০টাকা

সকাল, দুপুর, রাতের খাবার (৫০+৫০+৭০)=১৭০টাকা

তিনটি জায়গায় যাতায়াত

সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় যাওয়া+আসা+লাঠি+হালকা জাতীয় খাবার ও শরবত মিলে (২০+২০+৩০+৫০) = ১২০

সীতাকুণ্ড থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়া+আসা+হালকা জাতীয় খাবার (২০+১০০+৫০+১০০+২০) = ২৯০

সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়া + আসা + হালকা জাতীয় খাবার (৩০+৫০+৩০)=১১০

মোট টাকা = ৯০০+১৭০+১২০+২৯০+১১০ = ১৪৯০

 

মোটে আপনার খরচ হবে ১৪৯০ যাওয়া-আসা এবং খাওয়া সহ। এখানে হালকা খাবারের প্রয়োজন না হলে খরচ অনেকটাই কমে হয়ে হয়ে যাবে ১৩৪০টাকা। হালকা খাবারের হিসাবটা মাথায় রাখবেন কারণ চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার পথে শরবত খেতে হবে মাঝে মাঝে। তবে এটা অতিরিক্ত হিসেবে ধরা হলো। আপনি চাইলে হালকা জাতীয় খাবারের হিসাবটা বাদ দিতে পারেন। এছাড়া আপনাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনাদের খরচ আরও কম বা বেশি হতে পারে। 

 

আপনি যদি একদম কম খরচে যেতে চান সেক্ষেত্রে রাতের মেইল ট্রেনে যেতে পারেন সেক্ষেত্রে অনেকটাই খরচ কমে যাবে।  ১৪৯০-৩৩০=১১৬০ এবং ফেরার পথে কমবে আরও ১০০ অর্থাৎ ১০৬০। 

 

এক্ষেত্রে ফলো করতে হবে, ঢাকা থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ড যাওয়ার পথে মেইল ট্রেন ভাড়া ১২০ এবং ফেরার পথে আন্তনগর চাটলা এক্সপ্রেস শোভন চেয়ার ভাড়া ২৬৫টাকা ছাড়বে রাত ১০.১৫। এক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড থেকে ৫০-৮০টাকা ভাড়ায় বাসে করে আসতে হবে ফেনীতে। টিকেট আগে থেকেই অনলানে করে নিন এবং ফেনীতে নয়টার মধ্যেই ফিরুন। 

 

সতর্কতা 

পাহাড়ে বা ঝর্ণায় ওঠার সময় আপনাকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অসতর্কতার দরুন বা একটা ভুলের কারণে আপনি পড়ে যেতে পারেন সোজা পাহাড়ের গভীর খাদে, ঝর্ণার প্রতিটা ধাপ অতিক্রম করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এমতাবস্থায় সতর্ক থাকুন এবং ছোট বাচ্চা বা বৃদ্ধ বয়স্ক কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। এখানে থাকতে হয় যথেষ্ঠ শারীরিক ও মানসিক শক্তি।

 

অনুগ্রহ করে কেউ ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। সেখানকার সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। যারা এমনটা করবেন তাঁরা প্রকৃতির শত্রু। তাদের উপর সৃষ্টিকর্তার লানত। কারণ প্রকৃতি মহান সৃষ্টিকর্তার দান। 

 

আরও পড়ুন

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!