নোনাজল - নাইমুল ইসলাম ইমন |
প্রতিদিন ১৫/১৬ ঘন্টা ডিউটি করতে করতে বেশ হাপিয়ে উঠেছি। তারপরও একটু ভালো লাগা আছে। আমরা দেশের আইন শৃঙ্খলার জন্য নিয়োজিত। তবে খারাপ লাগা নেহাতই কম নয়। পুলিশ নিয়ে নেগেটিভ কথা প্রায় কানে আসে, মন খারাপ হয় আবার ভুলেও যাই। দীর্ঘক্ষণ ডিউটির মতোই নেগেটিভ কথায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ভুল করলে সমলোচনা করা স্বাভাবিক। এসব ভাবতে ভাবতে ডিউটি পোস্টে বসে আছি।
যানজট, ধুলাবালি, চৈত্র মাসের অসহনীয় গরম! আমি যদি পুলিশের চাকরি না করতাম কখনো শহরে বাস করতাম না। আমার ডিউটি পোস্টের সামনেই একটা মসজিদ। অনেক গাছ আছে, বেশ ঠান্ডা জায়গা। শহরের মধ্যে একটি প্রশান্তির জায়গা। হাতমুখে পানি দেয়ার জন্য এগারোটার দিকে মসজিদের ওজুখানায় গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ্! বেশ ঠাণ্ডা পানি। আমার পাশেই তিনটি শিশু বোতলে পানি ভরছে। জিজ্ঞেস করলাম পানি দিয়ে কি করবে। উত্তরে বলল, শহরের পানি লবণাক্ত তাই ওয়াসার পানি খেতে হয়। এই পানি খাওয়ার জন্য নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম শহরের পানি এমনই। ওয়াসার পানি ছাড়া নিরুপায়। ওদের কথা শেষ হতেই দেখলাম মসজিদের ইমাম লাঠি নিয়ে তেড়ে আসছে। ওরা তিনজন বোতল রেখেই দৌড়। ইমামের কাছে যেয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি হলো! ইমাম বলল, "এরা প্রতিদিন পানি নিতে আসে।" কিন্তু খাবার পানি নিলে সমস্যা কোথায়। একজন দুই তিন লিটার পানি নেয় তাতে এমন কি সমস্যা! ইমাম সাহেবর উত্তর, "এভাবে পানি নিলে ওজুর পানিতে শর্ট পরবে। তাছাড়া মসজিদ কমিটির নিষেধাজ্ঞা আছে।" তারপর ইমামকে বুঝিয়েও ওদের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে পারলাম না। অন্তত আজকের দিনটার জন্যও সে পানি দিতে রাজি হলো না। হয়তো পানি খাওয়ার চেয়ে ওজু করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুগুলো মসজিদের বাহিরে বোতলে জন্য কাঁদছিল। পানির বোতল ছাড়া গেলে নাকি মা মারবে। আমি এমন দেশের পুলিশ। কিছুই করার নেই। অনেক ক্ষণ হলো, এখুনি ডিউটি পোস্টে যেতে হবে। লজ্জায়, কষ্টে আমার চোখের নিচ দিয়ে পানি পরছে। এটা ঘাম নাকি অশ্রু জানি না। শুধু এটুকু জানি এই জল ঐ শিশুদের কোনো কাজেই আসবে না। এগুলো চট্টগ্রাম শহরের মতোই নোনা জল।
লেখকঃ নাইমুল ইসলাম ইমন
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।