ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি, যেটি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী নামক গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক বিখ্যাত জমিদার বাড়ি। আজকে আমরা এই নিবন্ধের মাধ্যমে দেখবো, কীভাবে রংপুর জেলার এই বিখ্যাত ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি ঘুরে আসা যায় এবং সেই সাথে এই জমিদার বাড়ির একটুখানি ইতিহাস।
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি |
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা রঘুনাথ চন্দ্র রায়। যিনি ছিলেন রাজা শিবচন্দ্র রায়ের পিতা। পিতার মৃত্যুর পর তিনি রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
রাজা শিবচন্দ্র ছিলেন মানবপ্রেমী। যিনি ১৭৮৩ সালে কৃষকবিদ্রোহ আন্দোলন শুরু করেন এই জমিদার বাড়ি থেকেই। তার সাথে নেতৃত্ব দেন একই উপজেলার মন্থনার জমিদার জয় দূর্গা দেবী যিনি বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে দেবী চৌধুরানী নামে পরিচিত। সেই আন্দোলনে নাপাই চন্ডির মেলা প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় রাজা শিবচন্দ্র, দেবী চৌধুরানী, কৃষ্ট কেশর চৌধুরী সহ আরও অনেকে শহীদ হয়।
ইটাকুমারী নামক গ্রামটি ছিলো সেই সময় সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে উন্নত শিক্ষা ও সংস্কৃতিময় একটি এলাকা। উন্নত শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে এই এলাকার নাম সমগ্র ভারতবর্ষে। যার দরুণ ইটাকুমারীকে তখন ভারতবর্ষের দ্বিতীয় নবদ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
কীভাবে যাবেন
ইটাকুমারী জমিদার বাড়িতে যেতে হলে প্রথমে আসতে রংপুর সহজে অথবা পীরগাছা উপজেলায়। রংপুর শহর থেকে এটি ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এবং পীরগাছা থেকে ৭ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে বাস যোগে প্রথমে আসুন রংপুরে। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬০০/৭০০টাকা। অথবা ট্রেনে আসুন রংপুরে। নিয়মিত ২ টি ট্রেন চলাচল করে ঢাকা টু রংপুর রুটে। ভাড়া জনপ্রতি শোভন চেয়ারে ৬৩৫ টাকা এবং এসিতে ১৪৫৫ টাকা।
রংপুর শহর থেকে চলে যান দামুর চাকলা বাজারে। সেখান থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি। যেতে পারেন রিকশা বা ভ্যান যোগে।
দামুর চাকলা বাজারে আসার ক্ষেত্রে প্রথমে রংপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটি কর্পোরেশন বা জাহাজ কোম্পানীর মোড়ের সামনে থেকে অটোতে করে চলে আসুন মাহিগঞ্জে। ভাড়া নিবে ২০টাকা। মাহিগঞ্জ থেকে চলে আসুন অটো, সিএনজি বা ভ্যান যোগে দামুর চাকলা বাজারে। ভাড়া নিবে ৫০ টাকা। সেখান থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি।
বাইকে যাবার উপায়
যারা রংপুর থেকে বাইকে যাবেন ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি, তারা প্রথমে সাতমাথা মাহিগঞ্জে আসুন। এখান থেকে পীরগাছা রোড ধরে আমতলী বাজার পর্যন্ত যেতে থাকুন। আমতলী বাজার থেকে পীরগাছা রোডের বিপরীতে পাওটানা রোড ধরে সোজা যেতে থাকুন বেশ কিছুক্ষণ দামুর চাকলা বাজার পর্যন্ত, প্রায় ১২ কিলোমিটার। এই রাস্তাটি বাইকারদের জন্য বেশ দূর্দান্ত।
দামুর চাকলা বাজারের (যেটি কৃষক বাজার নামেও পরিচিত) একটু সামনে একটা মসজিদের সামন দিয়ে রাস্তাটিতে মোর নিন। এখান থেকে মিনিট পাচেকের পথ। প্রায় ২ কিলোমিটার। এখানে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে। সাহায্য নিতে পারেন গুগল ম্যাপের। মাহিগঞ্জ টু ইটাকুমারি জমিদার বাড়ি সেলেক্ট করলে ম্যাপেই নিয়ে যাবে ডিরেক্ট ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি।
কী কী দেখবেন
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ির প্রধান ভবন, বিশাল কাঠগোলাপ গাছ, শীবমন্দর, বিশাল পুকুর। উপলব্ধি করতে পারবেন এই জমিদার বাড়ির অতীত ইতিহাস। শীবচন্দ্রের নামে রয়েছে একটি জনপ্রিয় সরকারি মহাবিদ্যালয়।
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ির বর্তমান অবস্থা
ইটাকুমারী জমিদার বাড়িটি বর্তমানে অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ধবংসের পথে। সরকারিভাবে এই জমিদার বাড়ি সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আগের মতো এই জমিদার বাড়ির জৌলুস এখন আর নেই। প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা ইটাকুমারী জমিদার বাড়ির সম্পদ অনৈতিকভাবে দখল করে নিয়েছে। জমিদার বাড়ির মূল্যবান সকল সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে।
এই জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণ করা না হলে, কয়েক বছরের মধ্যে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ির অস্তিত্বই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে সর্বাধিক।
শেষ কথা
আশাকরি এই নিবন্ধের মাধ্যমে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি যাবার উপায় ও এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই নিবন্ধে ইটাকুমারীর জমিদার বাড়ির ইতিহাস সহ যাবার উপায় যাবতীয় বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে, তবে লিখুন নিচের মন্তব্য সেকশনে।
আরও পড়ুন
ঢাকা টু রংপুর ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া তালিকা
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।