সীতাকুণ্ডের পথে পথে (পর্ব ১)

MD Nazir Hossain

December 11, 2022

✍️ হতে চান লেখক? উইব্লগবিডিতে এখন যেকেউ লিখতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন করুন

আর সবাই ঘুরতে যায় দলবেধে, আমি যাই একা পথে। তাও আবার কাছাকাছি কোনো জায়গা নয়,
আমার নিজ-শহর রংপুর হতে মোটামুটিভাবে বেশ দূরে।

 

বড় ভাইয়ের চাকরির দরুন রংপুর থেকে চট্রগ্রাম আসায় চট্রগ্রাম থেকে এসেছি সীতাকুণ্ডে
ঘুরতে। সীতাকুণ্ডের কোনো জায়গাই আমার চেনা নেই। শুধু জেনে এসেছি চট্রগ্রাম অঞ্চলের
পাহাড় ঘেড়া এ উপজেলাটি ভারি অপরুপ। একদম অপরিচিত। কোথাও গেলে সে উপজেলার সকল তথ্য
জেনে নেয়া আমার একদম অপরিহার্য একটা ব্যাপার। সেজন্যই রীতিমতো এ উপজেলার সকল তথ্য
জেনে নিয়েছি আগাম।

চট্রগ্রাম শহরের কদমতলীর পুরাতন স্টেশন থেকে সকাল ৭ ও ১০ টায় দু’টা ট্রেন আসে
সীতাকুণ্ডে। দুপুরে ও বিকালে আরও দু’টো ট্রেন রয়েছে। এগুলোর রয়েছে সীতাকুণ্ডে
স্টোপেজ।
আমি অবশ্যি এসেছি দশ’টার ট্রেনে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে। আসার কথা ছিলো সাত’টার
ট্রেনে কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে হয়ে গিয়েছে দেরি, কি আর করার! আসতে হলো দশ’টায়। চার
ঘন্টা কম ঘুরতে পারবো এই আর কি। তাতে কি! আবার তো আসবো প্রতিবারই। তবে ট্রেনে
চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে লেগেছে প্রায় আধাঘন্টার বেশি, টিকেট লেগেছে বিশ
টাকা। সীটের অভাব ছিলো না, কিন্তু সে স্টেশনে টিকেট দিয়েছে সীট বিহিন। সীট নাকি
ছিলো না।

ট্রেন থেকে সীতাকুণ্ডে নামতেই চোখে পড়ে সু-উচ্চ পাহাড় চূড়া ও যেদিকে তাকানো যায়
সেদিকেই সাড়ি সাড়ি পাহাড় আর পাহাড়। তার উপরে ছোট্ট খেলনা ঘরের মতো একখানা মন্দির।
আসলে মন্দির’টা মোটেও ছোট নয়, বেশ বড়। অনেক উচু’তে হওয়ায় মনে হয় ছোট বাচ্চাদের
তৈরি ঘর। আর এটাই চন্দ্রনাথ পাহাড়, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে ঘুরতে আসে সীতাকুণ্ডের
এই পাহাড় চূড়া ঘুরতে। এখানে হিন্দু’রা আসে পূজা করতে। এটি হিন্দু’দের তীর্থস্থান।
কিংবদন্তী আছে, এ চূড়ায় নাকি ঈশ্বরের আবির্ভাব ঘটে বিদ্যুতের ঝকল দিয়ে। 


আমাকে প্রথমে যেতে হবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। অপরিচিত জায়গায়। রাস্তা কোনদিকে তা আমার
জানা নেই। কিন্তু তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। হাতে আছে স্মার্টফোন। গুগল ম্যাপ
চালু করবো আর লোকেশন দেখে চলে যাবো। কিন্তু গুগল ম্যাপে যখন সেট করে দিলাম লোকেশন,
তখন দেখি ম্যাপে সাত কিলোমিটার। অনেক দূর পথ। আমার জানা মতে চার কিলোমিটার। তাই
কাউকে জিজ্ঞেস করে সীতাকুণ্ডের পথ ধরে যেতে লাগলাম হাটা পথে। পিচঢালা রাস্তা’টা
সোজা চলে গিয়েছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। অবশ্যি সিএনজি’তে করে যাওয়া যেতো বিশ
টাকা ভাড়ায়। টাকা’টা সেভ করার জন্য পথের দু’দিকে দেখতে দেখতে যাচ্ছি এ পথে।
চন্দ্রনাথ পাহাড় যাবার পথে ব্যাসকুণ্ড থেকে শুরু হয়েছে ছোট ছোট পাহাড় সাড়ি।
হিন্দু’রা ব্যাসদেবের মন্দিরের পুকুরে স্নান করে সেখান থেকে পূজার উপকরণ নিয়ে
চন্দ্রনাথ মন্দিরের উদ্যেশ্যে যায় পূজা দিতে। আমিও মন্দির’টার ভিতরে ঢু-মেরে
দেখলাম। ভিতরে বিশাল পুকুর। পুকুরে ওয়ান ওয়ে স্টেয়ার গোসল করার জন্য। সামনে
সুবিস্তীর্ণ পাহাড় সাড়ি। মন্দিরে বাহিরে একটি বটগাছ। সেটাকে বলে বটবৃক্ষ।
কিংবদন্তী আছে, এই বটবৃক্ষের নিবিড় ছায়াতলে ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন মহাভারতের কিছু
খন্ড।

সীতাকুণ্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে হাটা পথে আসতে সময় লাগলো প্রায় আধাঘন্টা।
সিএনজিতে সাত থেকে দশ মিনিটে আসা যায়।

চন্দ্রনাথ পাহাড় ভূমি থেকে ১২০০’ ফিট উঁচুতে। এর চূড়াতেই চন্দ্রনাথ মন্দির। পাদদেশ
থেকে লাঠি কিনে নিতে হয় বিশ/ত্রিশ টাকা দিয়ে। ফেরার পথে দোকানী’কে লাঠি ফেরত দিলে
দশ/বিশ টাকা ফেরত পাওয়া যায়। লাঠির দাম পড়ে মোটের উপর মাত্র দশ টাকা।

সামনে সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে উচ্চতম পাহাড় হলো চন্দ্রনাথ পাহাড়। উঠতে হবে এখন একদম
পাহাড় চূড়ায়। আমিও উঠতে লাগলাম। কিন্তু দীর্ঘপথ হেঁটে আসায় পাহাড়ে উঠতে হলো অনেক
কষ্টে। দম যেনো আটকে যাচ্ছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতেই চোখে পড়ে একটি ঝর্ণা। বৃষ্টির
মৌসুমে পানি থাকে। শীতে ছিপ ছিপ করে পড়া হালকা পানির ছিটেফোঁটা পড়ে শুধু। চূড়ায়
উঠতে সময় লেগে গেলো দেড় ঘন্টা। এমনি সময় মাঝামাঝি অবস্থায় পাহাড়ি বনে দেখা মেলে
বানরের, অবশ্যি আজ আমি কোনো বানরের দেখা পেলাম না। ভাগ্যটাই খারাপ! এখানেই রয়েছে
আরেকটি মন্দির।
চন্দ্রনাথ পাহাড় চুড়ায় উঠে অবাক বনে গেলাম। এত্তসুন্দর আমাদের এ পৃথিবী! যেদিকেই
চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এ যেনো মহাকাব্য রচনা করেছে। একদিকে দেখা যায় পুরো
সীতাকুণ্ড শহর, অপর দিকে বিশাল বিস্তৃর্ন বঙ্গপসাগর। সাগরের মাঝে ভেসে থাকা
জাহাজগুলো’কে মনে হয় এ যেনো শূন্যে ভেসে আছে। আমি প্রথমে তাই ভেবেছিলাম, ভেবেছিলাম
ওগুলো হয়তো উপরে পলিথিন বেধেছে। কিন্তু না, ভূল। ওগুলো হলো জাহাজ। পাহাড়ের চূড়া
থেকে সাগর দেখার মজাই আলাদা। অদ্ভুত লাগে দেখতে। মনে হয় ওদিকে একদম শূন্য। আর পুরো
জায়গা জুড়ে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। কোথায় যে শেষ হয়েছে কে জানে! নাকি শেষ হয়নি কোথাও
তাও হতে পারে, তবে আমার জানা নেই।


পাহাড়ের গভিরে দেখা মেলে জুম খেতের। জুম খেত হলো পাহাড়ি জমি যেখানে নানা রকম ফসল
ফলানো হয়। সীতাকুণ্ডে থাকে ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠী। এরা পাহাড়ি মানুষ। এদের জীবন
ব্যবস্থা একদম ভিন্ন। আমি অবশ্য গিয়েছি পাহাড়ি মানুষের জীবন ব্যবস্থা দেখতে। দেখে
মনে হলো এরাই বুঝি সবচেয়ে সুখি। যদিও দেখে মনে হয় তাদের খুব কষ্ট হয়, তবুও তাদের
কাছে এ কোনো কষ্টই নয়। তারাই প্রকৃত মানুষ।
আরও পড়ুন সীতাকুণ্ডের পথে পথে দ্বিতীয় পর্ব,  

ছেলেটা (ভ্রমণ গল্প)

নাজির হোসেন (সীতাকুণ্ডের পথে পথে)
১৮/০৩/২০২০

বই পড়ার অভ্যাস আমার সেই ছোট থেকেই, বই পড়তে ভালোবাসি আমি। এটা আমার নেশা। বই পড়ার মধ্য দিয়েই তো মানুষ আলোকিত হতে পারে। কাজেই আসুন বেশি বেশি বই পড়ি। বইয়ের আলোয় আলোকিত হই।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করার আগে খেয়াল রাখুন যেন ভদ্র ভাষা ব্যবহার করা হয়।