ভূমিকা
হাওয়া যখন প্রথম মুক্তি পায় সিনেমা হলে, তখনই দেখে ফেলি মুভিটা। এক কথায় অসাধারণ একটা মুভি। অপূর্ব। অদ্ভুত সুন্দর। দারুন লেগেছে আমার।
"হাওয়া" অর্থ
এখানে মুভির নামের ক্ষেত্রে হাওয়া বলতে সাধারণভাবে আমরা বুঝি বাতাসকে। কিন্তু এই মুভিতে হাওয়া বলতে বাতাসকে বোঝানো হয়নি বরং এখানে হাওয়ার শাব্দিক অর্থ হারিয়ে যাওয়া বা মিলিয়ে যাওয়া বা ভ্যানিশ হয়ে যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
হাওয়া মুভিটা কি ব্যাতিক্রমধর্মী?
হাওয়া মুভিটা ব্যাতিক্রমধর্মী কোনো মুভি নয়, এটি আঞ্চলিক মূলধারারই একটি মুভি। হাওয়া মুভিটা গভীর সমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি ফিশিং ট্রলারে আটকে পড়া আটজন মাঝি মাল্লা এবং এক রহস্যময় বেদেনীকে ঘিরে চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে।
কাহিনী সংক্ষেপ (নো স্পয়লার)
মুভির শুরুটা ঘটে এভাবে। একদল মাঝি সমূদ্রে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের জালে উঠে আসে অজ্ঞাত একটি মেয়ের মৃত্যুদেহ। তারা সকলে অবাক বনে যায়। (সাধারণত মাঝ দরিয়ায় লাশ পাওয়া গেলে পুরুষ মাঝিরই পাওয়া যায়। অনেক মাঝি সমূদ্রের অবস্থা উত্তাল জেনেও মাঝ দরিয়ায় পারি জমায় মাছ ধরার জন্য। তাদের কাছে মৃত্যু নেহাতই মামুলি ব্যাপার। এমতাবস্থায় নৌকা কিংবা ট্রলার ডুবি হয়ে মারা পড়ে অনেক মাঝি, তাদের জীবন এমনই) তারা সকলে ফিশিং ট্রলারের মধ্যেই লাশটাকে রাখে। কিন্তু খানিকক্ষণ পর তারা লক্ষ করে মেয়েটা মৃত্যু নয়, সে বেঁচে আছে। মেয়েটার নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে সে বলতে পারেনা, সকলে ধরে নেয় এ মেয়ে বোবা, কথা বলতে পারেনা। তখন মেয়েটা সেখানেই থেকে যায়। দিন যেতে থাকে। ঘটতে থাকে আজব সব কাহিনী। অজ্ঞাত এই মেয়ের নৌকায় আবির্ভাবের পর থেকে সেখানে ঘটতে থাকে নানান সব অবিশ্বাস্য কাহিনী। আসলেই কি সে কথা বলতে পারে না? অজ্ঞাত এই মেয়ের আবির্ভাবের পর কি ঘটতে থাকে? আটজন মাঝি মাল্লার পরিণতি কি হয়? জানতে হলে দেখতে হবে হাওয়া মুভিটা। অবশ্যি কিছুর ভীতির সৃষ্টি করবে আপনার মনে।
স্বাভাবিকভাবে মুভিটা মনে হবে এটা অতিপ্রাকৃত কোনো কাহিনী৷ কিন্তু বাস্তবে এটা অলৌকিক নয়, বরং লৌকিক। পুরোটাই জেলেদের ভ্রম। এই ভ্রমকেই পরিচালক মহাশয় অতিপ্রাকৃত করে তুলেছেন। যদিও আপনার মনে হবে এটা অতিপ্রাকৃত কাহিনী।
হাওয়ায় ব্যবহৃত গালি-গালাজ
হাওয়া মুভিতে দেখা যায় বেশ কিছু গালি-গালাজ ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকে এটাকে নিয়ে সমালোচনা করেন, বলেন গালিগালাজে ভরা মুভি!
প্রকৃত পক্ষে মুভির প্রেক্ষাপটটা বুঝলে এমনটা মনে হতো না। যারা জাহাজে উঠেছেন বা ট্রলার বা নৌকায়। মাঝিদের সান্নিধ্য যারা পেয়েছেন তারা জানেন, সব থেকে ব্যাপক পরিমানে বিশ্রি সব অকথ্য ভাষা ব্যবহার করা হয় জাহাজে আর জেলেদের মাঝে। সৈয়দ মুজতবা আলীর জলে ডাঙ্গায় উপন্যাস খানা যারা পড়েছেন তাদের জানা কথা, তিনি নিজেই তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, আপনি যদি জাহাজে ব্যবহৃত ওইসব ভাষাকে এভোয়েড করতে পারেন, তাহলে আপনি হবেন তাদের কাছে মিষ্টভাষি ব্যাক্তি।
একটু ভাবুন। মুভিতে যদি এইসব ভাষা ব্যবহৃত না হতো তাহলে এটা থেকে যেতো এই মুভির সবথেকে বড় লিকেজ। মুভিতে অভিনীত ব্যাক্তিরা মাঝির চরিত্রে মিলতো না। কারণ এমন কোনো জেলে পাবেন না যাদের ভাষা মিষ্টি, পেলেও এই মুভির জেলেরা মিষ্টভাষী না। কাজেই মুভিটাকে প্রানবন্ত করে তোলার জন্যই ওইসব ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে।
অভিনয়
অভিনয়ের কথা বলতে গেলে এক কথায় অসাধারণ। অপূর্ব। অদ্ভুত সুন্দর। এখানে যারা অভিনয় করেছেন প্রত্যেকের অভিনয় ছিলো চমৎকার। কারও অভিনয়ে এতোটুকুও কমতি ছিলোনা। অভিনেতাদের আপনাদের একবারের জন্যও মনে হবে না এরা অভিনেতা! মনে হবে এরা আসলেই মাঝি মাল্লা এবং চঞ্চল চৌধুরী এদের সর্দার। এখানে প্রত্যেকের স্ক্রিনপ্লে ছিলো প্রায় সমান, তবে কারও খানিকটা কম, কারও খানিকটা বেশি।
সিনেমাটোগ্রাফি
এই মুভির সবথেকে ভালো লাগার বিষয় সিনেমাটোগ্রাফি। হাওয়ার সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো অসাধারণ। অপূর্ব।
হাওয়া মুভিতে যখন হাশিম মাহমুদের লেখা সাদা সাদা কালা কালা গানটা শুরু হলো, হলের সকলেই একসাথে গাচ্ছিলাম। পরিচালক মহাশয় এমনই মহাজ্ঞানী মানুষ, এখানে তিনি এই গানটিতে চলাকালীন সময় কোনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেননি। পুরোটাই জাহাজে থাকা নানা ইলিমেন্ট দিয়ে গেয়েছেন। এটার মূল কারণ মুভিটার সাথে গানটাও যেনো প্রানবন্ত হয়ে উঠে। একদল মাঝি গাইছেন সাদা সাদা কালা কালা। এখানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা মানে বাহির থেকে ট্রাশ কিছু সাউন্ড। যেটা মোটেও হাওয়াতে কাম্য না। তাছাড়া হাওয়ার মাঝিরা ঝাকানাকা গান শুনেন না।
ব্যাক্তিগত মতামত
হাওয়া মুভিটা দেখার পর বেশ কিছুক্ষন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সে ঘোর এখনো কাটেনি। এখনো মাথায় ঘুরঘুর করছে পুরো কাহিনী। মেজবাউর রহমান সুমন এটা কি বানাইলো!
রেটিংঃ ৪.৫/৫
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।