বড়দিনের ইতিহাস - যেভাবে পালিত হয় বাংলাদেশে ক্রিসমাস

Nir
0

ভূমিকা

বড়দিন বা ক্রিসমাস হলো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবথেকে বড় এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। এইদিনটিকে এক্সমাস ডে ও বলা হয়। এটি একটি বাৎসরিক উৎসব। প্রতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন বা ক্রিসমাস উৎসব পালন করা হয় সমগ্র বিশ্বে। 


বড়দিনের সূত্রপাত

২৫ ডিসেম্বর যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কি না সেটি এখনো জানা যায়নি বরং অজানাই রয়ে গেছে। আদি যুগের বিশ্বাস অনুযায়ী মনে করা হয় ২৫ ডিসেম্বরের ৯ মাস পূর্বে ২৫ মার্চ মেরির গর্ভে যিশুর আবির্ভাব ঘটে। তারপর থেকে ৯ মাস অতিবাহিত হবার পর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে তার আবির্ভাব ঘটে মেরির গর্ভ থেকে পৃথিবীতে। আদি যুগের এ বিশ্বাস অনুসারে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উৎসব বা ক্রিসমাস ডে পালন করা হয়। অন্যমত অনুসারে এ-ও ধারণা করা হয় ঐতিহাসিক রোমান উৎসব ২৫ ডিসেম্বরের এ দিনটিতে জন্মজয়ন্তি পালনের প্রথাটির সূত্রপাত ঘটে। 

 

ক্রিসমাস নামকরন

ইংরেজি ক্রিসমাস (Christmas) শব্দটির অর্থ ক্রিস্টের মাস। শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘটে মধ্য ইংরেজি Christemasse এবং আদি ইংরেজি Cristes mæsse শব্দ থেকে। 

 

বাংলায় বড়দিন নামকরণ

আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনের ক্রিসমাস উৎসবটিকে বাংলায় বড়দিন নামকরণ করার কারণটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, 

'২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশ বড়ো এবং রাত ছোটো হতে আরম্ভ করে'  

ক্রিসমাস দিনটিকে বাংলায় "বড়দিন" নামকরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন,      

"মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন।"      

"যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তার জন্মদিন। সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।"  

তিনি এ বিষয়ে আরো বলেন,      

"আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়।"      

"বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন। তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত।"

 

বড়দিনের প্রথম উৎসব পালন

খ্রিস্টধর্মের বড়দিন একটি সবথেকে বড় উৎসব। তবে ঐতিহাসিকভাবে এই দিনটি তথা যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তবে তার আদর্শ নিয়ে ও কর্মজীবন সম্পর্কে কোনো বিতর্ক বা মতবাদ নেই। কিন্তু এই দিনটির প্রসার প্রথম থেকে ঘটেনি বরং ক্রিস্টধর্মের প্রসার ঘটার অনেক পরে এই দিনটির প্রসার ঘটে খ্রিস্টধর্মের সর্বমহলে। বড়দিন উৎযাপনের সূচনা ঘটে ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর রোমান সম্রাট কনস্টিনোপলের আদেশে প্রথম বড়দিন উৎসব পালন করার মধ্য দিয়ে। তার আদেশেই প্রথম বড়দিন বা ক্রিসমাস বা এক্সমাস উৎসব পালন করা হয়।  

 

তবে বড়দিন উৎযাপন শুরুর আগে ক্রিস্টান ধর্মালম্বীরা একটাই মাত্র ধর্মীয় উৎসব উৎযাপন করতেন, সেটি হলো ইস্টার সানডে। 

 

বাংলাদেশে বড়দিন উৎসব

বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্মালম্বীর সংখ্যা একেবারেই কম, মোটে মোট জনসংখ্যার থেকে খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসীর সংখ্যা মাত্র ০.৩১%। যার দরুন বাংলাদেশে এই দিনটি পালন খুব কম হয়। তবে বাংলাদেশে খ্রিস্টধর্মালম্বী কম হওয়া সত্ত্বেও এই দিনটি বাংলাদেশে ছুটির দিন এবং এটিকে উৎসবের একটি দিন হিসেবে ধরা হয়। তবে বর্তমানে এই উৎসবটি শুধু খ্রিস্টানরাই না, অনেক অখ্রিস্টানদের ও এই দিনটি পালন করতে দেখা যায়। 

 

বাংলাদেশে খ্রিসমাস বা বড়দিন উৎসব উৎযাপনের দৃশ্যটা একটু ভিন্নরকম। বাংলাদেশে খ্রিসমাস ট্রি হিসেবে মনে করা হয় দেবদারু গাছকে। এই গাছটি সম্পূর্ণ সবুজ হওয়ার দরুন এটিকে খ্রিসমাস ট্রি বলা হয়। আয়োজন করা হয় নানা খাবারের যেমন, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, ভাবাপিঠা, চিতইপিঠা সহ নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয় বড়দিন বা ক্রিসমাস বা এক্সডে তে। 

 

এই দিনটিতে নিজেদের মাঝে একে অপরে কার্ড বিনিময় করেন। ছোটরা পায়ে হাত রেখে সালাম করলে বড়রা সালামি দেয়। 

Read More;

যেসকল দেশে গ্রীষ্মকালে ক্রিসমাস উৎসব পালন করা হয়

তবে অন্যান্য দেশগুলোতে বড়দিনের আগের দিন সন্ধ্যায় এক্সমাস ক্যারোলস বের হলেও বাংলাদেশে বের হয় নগর কীর্তন। গ্রামের কিশোর-কিশোরী সহ সকলে ঢোল, তবলাসহ নানা রকম বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কীর্তন করতে করতে আসে গির্জায়, তাদের কীর্তন শেষ হয় গীর্জায় এসে। 

 

রাত বারোটা বাজতেই গির্জায় শুরু হয় মহা উৎসব। পরদিন সেখানে পাওয়া সকল টাকা দিয়ে আয়োজন করা হয় বিশাল ভোজের। একে বলা হয় প্রেম ভোজ। ইউরোপ আমেরিকায় এই দিনটি ১ সপ্তাহ ধরে পালন করা হয়, তবে বাংলাদেশে পালন করা হয় পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত। এভাবেই বাংলাদেশে পালিত হয় বড়দিন বা খ্রিসমাস উৎসব। 

Read More: 

ক্রিসমাস ট্রি বা বড়দিনের গাছের ইতিহাস

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!