গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ বিস্তারিত

Nir
0

 

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত হলো চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি গুলিয়াখালী এলাকাবাসীর কাছে মুরাদপুর বীচ বা মুরাদপুর সৈকত নামেও পরিচিত। 


গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত অন্যান্য সমুদ্র সৈকতগুলো থেকে বেশ সুন্দর। সৃষ্টিকর্তা যেনো প্রকৃতির এ অপার রূপকে সাঁজাতে কোনো অংশে কার্পন্য করেননি। সবুজ ঘাসের চাঁদরে ঢাকা এ সৈকতখানি ভারি অপরূপ। মাটির আঁকেবাঁকে ভাঁজে, কোথাও খানিকটা ছোট্ট টিলার মতো, পানিরা দোল খাচ্ছে সেখানে। এর মাঝ দিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকখানা অজগর সাপের মতো একেবেকে চলা নালা। জোয়ারের সময় এসব নালা ভরে যায় পানিতে। সৈকতের পাশে কখনো ছুটে চলে কাকড়া, গাছের ডালে নানান পাখির কলকাকলি। এর একদিকে বিশাল বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের জলরাশি, অপরদিকে কেওড়া বন। তপ্ত রোদে পর্যটকদের শীতল ছায়া এবং শীতল হাওয়া যেনো পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়, প্রান জুরিয়ে দেয়। চাইলে আপনি সেখানে বোট ভাড়া নিয়ে যেতে পারেন সমুদ্র ভ্রমণে। এখানে কিছু বোট ৩০টাকা ভাড়ায় আপনাকে এক পাক ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। এসব বোটে লোক অনেক করে তাঁরা চলে। 


গুলিয়াখালী ভ্রমণের ক্ষেত্রে এর ৫ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির এবং সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক সেখানে রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা। চাইলে আপনি এগুলো একসাথে একদিনে ঘুরতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ভোরেই পৌঁছাতে হবে সীতাকুণ্ডে। সীতাকুণ্ডে আসলে এসব স্থান না দেখে যাওয়া মোটেও ঠিক নয়। এছাড়াও সীতাকুণ্ডে রয়েছে আরও অসংখ্য জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় করে আসলে দেখতে পারেন বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, কমলদহ ঝর্ণা, ঝরঝরি ঝর্ণা, কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট, মহামায়া লেক, সহস্রধারা ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণাসহ আরও অনেক স্থান। 


যেভাবে যাবেন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত যাবার ক্ষেত্রে যেখানেই থাকুন না কেনো প্রথমে আপনাকে আসতে হবে সীতাকুণ্ডে। বিভিন্নভাবে যেকোনো স্থান থেকে সীতাকুণ্ডে আসা যায়। তবে এখানে ঢাকা এবং চট্রগ্রাম থেকে কম খরচে সীতাকুণ্ডে আসার উপায় দেয়া হলো। 

 

ঢাকা থেকে বাসে সীতাকুণ্ড 

ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি সীতাকুণ্ডে আসতে পারেন। সায়েদাবাদ, ফকিরাপুর, মহাখালি বাসস্ট্যান্ড হতে শ্যামলি, এস আর, সৌদিয়া, হানিফ, এনাসহ অনেক বাস চট্রগ্রাম রুটে চলাচল করে। এসব বাসের টিকেট কাটতে পারেন। এক্ষেত্রে নন-এসি বাসে টিকেট পড়বে জনপ্রতি ৪২০ থেকে ৪৮০ এবং এসি বাসের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৮০০ থেকে ১১০০টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। 

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে সীতাকুণ্ড

ট্রেনে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকা থেকে আসতে হবে ফেনিতে। এক্ষেত্রে জনপ্রতি টিকেট পড়বে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে ২৬৫টাকা এবং এসিতে ৭৯০টাকা। এক্ষেত্রে রাত ৯.২০ এর ট্রেন মহানগর এক্সপ্রেস অথবা রাত ১১.৩০ এর ট্রেন তুর্না এক্সপ্রেসে উঠতে পারেন। ফেনী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১০টাকা ভাড়ায় চলে যেতে হবে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে লোকাল বাসে করে ৫০-৮০টাকা ভাড়ায় চলে যান সীতাকুণ্ডে। চেষ্ঠা করুণ তুর্ণা এক্সপ্রেসে ওঠার, কারণ এটি ফেনীতে নামিয়ে দিবে ভোর ৪.৩৫ এ।  


অথবা আপনি চাইলে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে সীতাকুণ্ডে আসতে পারেন, তবে সেটি মেইল ট্রেন। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১২০টাকা। এই ট্রেনটি রাত ১০.৩০ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। সীতাকুণ্ডে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করবে। তবে এই ট্রেনে সিট পেতে হলে আপনাকে অনেক আগে থেকেই এই ট্রেনে উঠে টিকেট করে সিটে বসে পড়তে হবে, নইলে পুরোটা পথ দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কারণ এই ট্রেনে মুহুর্তেই সিট সব ব্লক হয়ে যায়। এবং একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, এই ট্রেনে আপনার সাথে যা যা থাকবে সব নিজ দায়িত্বে নিরাপদে রাখতে হবে। যারা কম খরচে সীতাকুণ্ড ঘুরতে চান তাঁরা এটা অবলম্বন করতে পারেন। 

 

চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড

চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে আসার ক্ষেত্রে চট্রগ্রাম নগরীর অলঙ্কার মোড় কিংবা এ কে খান থেকে লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে ৫০-৮০টাকা। চট্রগ্রাম থেকে রওয়ানা দেয়ার ক্ষেত্রে চেষ্ঠা করুণ খুব ভোঁরে রওয়ানা দিতে।  অথবা দলগতভাবে গেলে রিজার্ভ গাড়ি নিতে পারেন।


মূল কথা যেখান থেকেই আসুন না কেনো প্রথমে আপনাকে সীতাকুণ্ডে আসতে হবে। বাসের ক্ষেত্রে প্রতিটা চট্রগ্রামগামী বাসই সীতাকুণ্ডের উপর দিয়ে যায়।

 

সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

সীতাকুণ্ডে এসে নাস্তা করে প্রথমেই সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড ব্রীজের নিচে আসুন। এখানকার সব সিএনজিই গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে যায়। উঠে পড়ুন একটা সিরিয়ালে থাকা সিএনজিতে, ভাড়া পড়বে ২০-৩০টাকা। নামিয়ে দিবে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতের একদম বাঁধের কাছে। দলগতভাবে গেলে রিজার্ভ নিতে চান সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০-২০০। অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। সিএনজিতে থেকে নেমেই দেখবেন আপনার সামনেই গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। 

 

ফিরে আসার সময় রিজার্ভ সিএনজিকে বলে রাখতে পারেন, তার নাম্বার নিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে তিনি এসে আপনাদের নিয়ে যাবে।  সাধারণত সন্ধ্যার পর সিএনজিতে পেতে কিছুটা সমস্যা হয়। এই ক্ষেত্রে রিজার্ভ সিএনজি আগে থেকে নেয়া ভালো।


ভ্রমণ খরচ

এই ডে ট্রিপে শুধুমাত্র যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়া খরচ যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আপনি যদি কিছু কিনতে চান সেক্ষেত্রে সেটা আপনার বাড়তি চাহিদা। সেক্ষেত্রে আমাদের দেয়া হিসেবের বাহিরেও পড়তে পারে। তাছাড়া সময়-পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক সময় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভাড়া কম-বেশি হয়ে থাকে, তবে এটি সামান্যই হয়। 


সাধারণত গ্রুপ করে গেলে অর্থাৎ কয়েকজন মিলে গেলে খরচ তুলনামূলক কম লাগে একাই যাওয়ার থেকে। গ্রুপ করে গেলে আপনারা সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। এতে সময় কম লাগে এবং যাওয়াও যায় আরামচে। তবে এই ট্রিপে আপনি একাই ও বেশ আরাম করে ভ্রমণ করতে পারবেন।

 

ভ্রমণ হিসেব

ঢাকা থেকে নন-এসি বাসে সীতাকুণ্ড যাওয়া আসা - (৪৫০×২)=৯০০টাকা

সকাল, দুপুর, রাতের খাবার (৫০+৫০+৭০)=১৭০টাকা

সীতাকুণ্ড থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়া + আসা + হালকা জাতীয় খাবার (৩০+৫০+৩০)=১১০

মোট টাকা = ৯০০+১৭০+১১০ = ১০৮০

 

মোটে আপনার খরচ ১০৮০টাকা বাসে গেলে। তবে ঢাকা থেকে লোকাল ট্রেনে যাওয়া এবং আন্তনগর ট্রেনে ফেরা মিলে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তখন মোটে খরচ হবে ৯৪৫টাকা। 


এক্ষেত্রে ফলো করতে হবে, ঢাকা থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ড যাওয়ার পথে মেইল ট্রেন ভাড়া ১২০ এবং ফেরার পথে আন্তনগর চাটলা এক্সপ্রেস শোভন চেয়ার ভাড়া ২৬৫টাকা ছাড়বে রাত ১০.১৫ ফেনী থেকে। এক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড থেকে ৫০-৮০টাকা ভাড়ায় বাসে করে আসতে হবে ফেনীতে। টিকেট আগে থেকেই অনলানে বুক করে নিন এবং ফেনীতে নয়টার মধ্যেই ফিরুন। 


সতর্কতা

অনুগ্রহ করে কেউ ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। সেখানকার সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। যারা এমনটা করবেন তাঁরা প্রকৃতির শত্রু। তাদের উপর সৃষ্টিকর্তার লানত। কারণ প্রকৃতি মহান সৃষ্টিকর্তার দান। 


সীতাকুন্ডের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসসমূহ

  1. চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির
  2. বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত  
  3. খৈয়াছড়া ঝর্ণা 
  4. সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক 
  5. ঝরঝরি ঝর্ণা
  6. নামিত্তাছড়া ঝর্ণা
  7. কমলদহ ঝর্ণা
  8. কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরি ঘাট

 

আরও পড়ুন

চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির ভ্রমণ বিস্তারিত

কম খরচে একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!