খৈয়াছড়া ঝর্ণা |
খৈয়াছড়া ঝর্ণা চট্রগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবথেকে বড় ঝর্ণাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটির রয়েছে মোটে নয়টি ধাপ। একেকটি ধাপ যেনো একেকটি সৌন্দর্যের সমাহার। তাইতো খৈয়াছড়া ঝর্ণায় প্রতিবছর দেশ ও বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটকদের আগমন ঘটে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রত্যেকটি ধাপ আপনাকে বিমোহিত করবে, এর সৌন্দর্য আপনাকে আকৃষ্ট করবে। খৈয়াছড়া ঝর্ণা সর্বদা প্রস্তুত থাকে প্রতিটি ভ্রমণপিপাসুকে মুগ্ধ করবার জন্য। তার সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট করবার জন্য। এজন্যই তো খৈয়াছড়া ঝর্ণাকে বলা হয় বাংলাদেশের ঝর্ণার রাণী।
খৈয়াছড়া ঝর্ণাটি মূলত মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাজার থেকে উত্তর পাশে চট্রগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। বড়তাকিয়া বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পথ যাওয়া যায় গাড়িতে। তবে পরবর্তী ৩.২ কিলোমিটার পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে ট্রেকিং করে। গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। পথে পরবে বাঁশের সাঁকো, জমি ক্ষেতের মাঝ দিয়ে চলে গেছে আইল, ছড়া, ঝিরিপথ ও আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, পেরুতে হবে অন্তত চারটি পাহাড়। তারপরই পৌঁছে যাবেন অপরূপা ঝর্ণার রাণী খৈয়াছড়ার কাছে। তার সৌন্দর্য যেনো আপনাকে স্বাগতম জানাতেই প্রতীক্ষায় আছে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার কাছে আসতেই পুরো পথের ক্লান্তি নিমিষেই ছুটে পালাবে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকবেন এর সৌন্দর্যের দিকে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার শীতল জলে গাঁ ভিজিয়ে নিন। উপভোগ করবেন অপার্থিব সুখ, মনটা ভরে উঠবে প্রশান্তিতে। এই খৈয়াছড়াতেই এমন একটি পাহাড় আছে যেখানে সারাক্ষণ জ্বলতে থাকে আগুন, এমনকি বৃষ্টির সময়ও, এ আগুন কখনোই নিভে না।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপায়
খৈয়াছড়া ঝর্ণা নানাভাবে যাওয়া যায়। আপনি যেখান থেকেই আসুন না কেনো, বাসে আসার ক্ষেত্রে আপনাকে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বাসের হেলপার বা ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে হবে। তাহলে তিনি খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের কাছে আসতেই আপনাকে ওখানে নামিয়ে দিবে।
নিচে ঢাকা থেকে বাসে এবং ট্রেনে খৈয়াছড়া যাওয়ার উপায় দেয়া হলো।
ঢাকা থেকে বাসে খৈয়াছড়া ঝর্ণা
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকেই চট্রগ্রামগামী যেকোনো বাসে করেই খৈয়াছড়া ঝর্ণা আসা যায়। ঢাকার ফকিরাপুর অথবা সায়দাবাদ থেকে উঠতে পারেন গ্রীনলাইন পরিবহণ, সৌদিয়া পরিবহণ, হানিফ পরিবহণ, এন আর ট্রাভেল, সোহাগ পরিবহণ ইত্যাদি বেশ কিছু বাস। এসব বাসে রয়েছে এসি ব্যবস্থা। এসি বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ পর্যন্ত। অথবা যেতে পারেন শ্যামলি, হানিফ, সৌদিয়া, ইউনিক, এস আলম ইত্যাদি যেকোনো বাসে। এসব বাসে যেতে পারবেন নন-এসিতে ৪৮০টাকা ভাড়ায়। পথে যানজট না থাকলে ৪ থেকে ৫ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন।
ঢাকা থেকে ট্রেনে খৈয়াছড়া ঝর্ণা
ঢাকা থেকে চট্রগ্রামগামী যেকোনো আন্তনগর ট্রেনে যেতে পারেন ফেনীতে। আন্তনগর ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া পড়বে ২৬৫টাকা। চেষ্ঠা করুণ রাতের ট্রেনে রওয়ানা দেয়ার। ৯.৩০ এ মহানগর এক্সপ্রেস এবং তুর্ণা এক্সপ্রেস ১১.৩০ এ বিমানবন্দর থেকে ছাড়ে। ফেনী স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ১০-১৫টাকা ভাড়ায় রিক্সা বা অটোতে করে চলে আসুন ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে লোকাল বাসে চলে আসুন খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে। সেক্ষেত্রে বাসের ড্রাইভার বা হেলপারকে বলে রাখুন। তিনি আপনাকে বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামিয়ে দিবে। লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে ৩০-৪০টাকা।
অথবা চাইলে ঢাকা কমলাপুর থেকে রাত ১০.৩০ এর চট্রগ্রামগামী মেইল ট্রেনে করে আসতে পারেন সীতাকুণ্ডে। ট্রেন সীতাকুণ্ডে থামে। ভাড়া পড়বে ১২০টাকা। এখান থেকে মহিপাল বাসস্টানে রিক্সা বা অটোতে ১০টাকা ভাড়ায় আসুন। এরপর লোকাল বাসে করে ৮০টাকা ভাড়ায় খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের কাছে। মোটে ২১০টাকা।
চট্রগ্রাম থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা
চট্রগ্রামের অলংকর সিটি গেট থেকে লোকাল বাসে করে চলে আসুন মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের কাছে। চট্রগ্রাম থেকে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুল লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে ৭০-৮০টাকা।
বড়তাকিয়া বাজার থেকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা
খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের কাছে এসে ১০০টাকায় সিএনজি ভাড়ায় যেতে পারবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণা। তবে আপনি চাইলে এখান থেকেই এই ৪.২ কিলোমিটার সম্পূর্ণ পথটি যেতে পারেন পায়ে হেঁটে। সিএনজিতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আপনাকে হাঁটতে হবে বেশ কিছু পথ। সিএনজিতে গেলে আপনাকে নামিয়ে দিবে ঝিরির কাছে। সেখান থেকে হাটা পথ শুরু।
আপনি চাইলে আইডিয়াল স্কুলের কাছে সেখানকার স্থানীয় কারও থেকে সাহায্য নিতে পারেন। তাকে বলতে পারেন খৈয়াছড়া ঝর্ণার রাস্তা কোনদিকে। তাঁরা বলে দিবে। সেই পথে হাঁটা শুরু করুণ। মিনিট দশেক হাঁটার পর রেললাইন পরবে, সেখান থেকে আরও দশ মিনিট হাঁটুন। পৌঁছে যাবেন ঝিরির কাছে। এখান থেকেই শুরু হবে খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্রেকিং রুট। চাইলে এখান থেকে চাইলে গাইড ও নিতে পারেন। তবে সাধারণত গাইডের প্রয়োজন হয়না এখানে। কারণ ঝর্ণায় যাবার রাস্তা এখানে মাত্র একটি। তাছাড়া পথে আপনি অসংখ্য অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়র দেখা পাবেন। কাজেই পথ হারানোর ভয় নেই। জঙ্গলের ভিতর থেকে ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে থাকুন, ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণায়।
কোথায় খাবেন
খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাবার পথে বেশ কিছু হোটেল পরবে। আপনি চাইলে সেখানে খেতে পারেন। মেন্যু দেখে অর্ডার করুণ। এসব হোটেলে আপনি কম খরচে খেতে পারবেন। তবুও খাবারের দাম জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন, এসব হোটেল সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
কোথায় থাকবেন
অথবা চাইলে আপনি আসুন সীতাকুণ্ডে। সেখানে মোটামুটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এদের মধ্যে রয়েছে সৌদিয়া, সাইমুম। এসব হোটেলে আপনি ৩০০-১৫০০টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন অনায়াসে। হোটেল সৌদিয়ায় বুকিং দিতে ফোন দিতে পারেন 01991787979 অথবা 01816518119 নাম্বারে।
সীতাকুণ্ডের একসাথে তিনটি স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, গুলিয়াখালী এবং মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা একদিনে কম খরচে মাত্র ১০৪০ টাকায় দেখতে নীচের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
কম খরচে একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড
ভ্রমণ খরচ
খৈয়াছড়া ঝর্ণার ৯টি ধাপ একসাথে দেখার ক্ষেত্রে একদিন সময় লাগবে। যেহেতু ঝর্ণা, সেহেতু ফিরতেই ইচ্ছা করবে না। এখানে একদিনে খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের হিসাব দেয়া হলো।
ঢাকা থেকে বাসে বড়তাকিয়া যাওয়া আসা ৪৮০+৪৮০ = ৯৬০
বড়তাকিয়া থেকে ঝিরির কাছে ১০০
সকাল দুপুর রাতের খাবার ৫০+৭০+১০০ = ২২০
বাসে যাওয়া আসা এবং খাওয়া মিলে মোটে খরচ পড়বে ১২৮০টাকা।
ভ্রমণ খরচ কমবে ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে। ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১০০০টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।
সতর্কতা
খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রতিটি ধাপে ওঠার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুণ। এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ে উঠুন সতর্কতার সাথে। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে যাদের মানসিক শক্তি কম তাদের এবং শিশুদের না আসাই ভালো। খৈয়াছড়া ঝর্ণার চারপাশের পরিবেশ ময়লা আবর্জনা ফেলে নষ্ট করবেন না। খৈয়াছড়া ঝর্ণার পরিবেশকে নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ যারা নষ্ট করে প্রকৃতি তাদের পছন্দ করে না।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবার উত্তম সময় কখন?
খৈয়াছড়া ঝর্ণায় বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তাই বর্ষাকাল খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য উত্তম সময়।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা উচ্চতা কত?
খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রথম স্তরের উচ্চতা ৬০ ফিট। দ্বিতীয় স্তরের উচ্চতা ৪০ ফিট। তৃতীয় ধাপের উচ্চতা ১২০ ফিট। এভাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় রয়েছে মোটে নয়টি স্তর।
এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।