ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট কি? ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট করার নিয়ম

Nir
0
ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট করার নিয়ম

 

অনেকের ইন্ডিয়ার ভিসা আবেদনের জন্য কিংবা বিদেশ ভ্রমণের জন্য ডলার ইন্ডোর্সমেন্টের প্রয়োজন হয়। আমরা এই নিবন্ধে ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট কি? ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট করার নিয়ম সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি জানবো। আজকে আমরা জানবো কিভাবে কোনো প্রকার ক্যাশ ছাড়াই ডলার ইন্ডোর্স করবেন কার্ডে এবং সেই কার্ড ইন্ডোর্সমেন্টের সীল দিয়েই আবেদন করতে পারবেন ইন্ডিয়ান ভিসা। 


ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ডলার এনডোর্স

 ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য দুভাবে ডলার ইন্ডোর্স করা যায়। যেমন;

  • কার্ড ডলার ইন্ডোর্স
  • ক্যাশ ডলার ইন্ডোর্স

 

কার্ড ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট

কার্ড ডলার ইনডোর্স কী

কার্ড ডলার ইনডোর্সমেন্ট হলো ডুয়েল বা মাল্টি কারেন্সি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমোদন। আপনার ব্যাংক থেকে ইস্যু করা ডুয়েল কারেন্সি বা মাল্টি কারেন্সি কার্ড রয়েছে, এখন আপনি সেই কার্ডে আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে চান, আপনি করতে পারবেন না। আন্তর্জাতিক লেনদেন করার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার কার্ডে পাসপোর্ট ইন্ডোর্স করতে হবে। 

 

ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট করা ছাড়া আপনি কোনোভাবেই কার্ডে ডলার ব্যবহার করতে পারবেন না। আপনার যদি কোনো ব্যাংকের কার্ড থাকে যেটি ডলার সাপোর্টেড। সেই ব্যাংকে আপনার কার্ড আর পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বললেই তারা আপনার কার্ডে ডলার ইনডোর্স করে দিবে আপনার চাহিদা অনুযায়ী। সেই সাথে আপনার পাসপোর্টের শেষে ডলার ইন্ডোর্সের সীল দিয়ে দিবে। 


কার্ড ডলার ইনডোর্সে কোনো প্রকার ক্যাশ টাকা দিতে হয় না। কারণ এই ডলার ইন্ডোর্স মানে কার্ডে ডলার ভরানো না, এই ডলার ইন্ডোর্স মানে কার্ডে ডলার ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া। তারপর থেকে যেকোনো সময় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে কিংবা একাউন্টের টাকা ডলার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। 


কার্ডে ডলার ইন্ডোর্স কেনো করবো 

অনেক সময় ট্যুরিস্ট পারপাসে কার্ডে ডলার ইন্ডোর্স করতে হয়। যেমন ধরুন ভারতে যাচ্ছেন, কিন্তু ক্যাশ টাকা নিতে চাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে কার্ডে ডলার নিয়ে গিয়ে সেখানে ডলার সাপোর্টেড এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন সেই দেশের কারেন্সিতে - এছাড়াও সেই দেশে কেনাকাটা সকল বিল পজ মেশিনের মাধ্যমে দিতে পারবেন। 

 

তবে কার্ডে ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট করা হয় সবথেকে বেশি ফেসবুকে বুস্ট করার, গুগলে বিজ্ঞাপন দেয়া কিংবা আলিবাবা বা আমাজনের মতো সাইট থেকে কেনাকাটার জন্য। কারণ কার্ডে যখন ডলার ইন্ডোর্স করবেন, তখন সেই কার্ড দিয়ে যেকোনো দেশের সাথে ডলারে লেনদেন করতে পারবেন। ডলার দিয়ে কিনতে পারবেন। 

 

যারা ওয়েব ডিজাইনার বা প্রোগ্রামার বা ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত, তারা থিম ফরেস্ট থেকে থিম কেনা, ফাইবারে কাজ অর্ডার দেয়া সবকিছু করা যায় একটিমাত্র কার্ড থেকে। নিজের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড থেকেই।

 

কিভাবে কার্ডে ডলার ইন্ডোর্স করবো 

আপনার যদি কোনো ব্যাংকের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড থেকে থাকে তবে আপনি কার্ড ডলার ইন্ডোর্স করতে পারবেন খুব সহজেই। অধিকাংশ ব্যাংকেই বর্তমানে ডলার ইনডোর্স একদম ফ্রী। অল্প কয়েকটি ব্যাংক রয়েছে মাত্র যেখানে কার্ডে ডলার ইনডোর্স করার ক্ষেত্রে ২৫০টাকা ফী প্রদান করতে হয়। তবে জনপ্রিয় সকল ব্যাংকেই এটি একদম ফ্রী। 

 

ব্যাংক একাউন্টের ফিচারে উল্লেখ থাকে ডলার ইন্ডোর্স ফ্রী। যদি না থাকে সেক্ষেত্রে সেই ব্যাংকের হেল্প লাইন নাম্বারে ফোন করে জেনে নিতে পারবেন। তবে সিটি ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, এবি ব্যাংক ইত্যাদি এইসকল ব্যাংকে ডলার ইন্ডোর্স একদম ফ্রী। তবে এই সকল ব্যাংকের মধ্যে এবি ব্যাংক এবং ব্রাক ব্যাংকের মাল্টি কারেন্সি কার্ড সবথেকে ভালো। সুবিধা অধিক। সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড না নেয়াই ভালো। আমি নিজে ব্যবহার করেছি সিটি ব্যাংকের কার্ড, ভালো লাগেনি। এখন ব্যবহার করি ব্রাক ব্যাংকের মাল্টি কারেন্সি ভিসা কার্ড। এই কার্ডটা বেশ দারুন।  


ব্যাংক একাউন্টে আপনার যদি একাউন্ট না থাকে এবং আপনার বয়স যদি ১৮-২৫ এর মধ্যে হয় তাহলে ব্রাক ব্যাংকের আগামী সেভার স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলুন। এই একাউন্টটি একদম ফ্রী। কার্ড এবং চেক বুক ফ্রী প্রদান করবে। আর ২৫+ হলে সেভিংস একাউন্ট।

 

একাউন্ট করার ১ সপ্তাহের মধ্যে কার্ড হাতে পাবেন। আর যদি পূর্বের ডুয়েল কারেন্সি বা মাল্টি কারেন্সি কার্ড থেকে থাকে তবে কার্ডটি এবং পাসপোর্ট (ফটোকপি না) নিয়ে যান আপনার ব্যাংকের ব্রান্সে যেখানে একাউন্ট করেছেন। সেখানে কর্মরত যে কাউকে বলুন যারা টেবিলে বসে আছে, দায়িত্বে আছে তাদের। তাদের বলুন যে আপনি পাসপোর্ট/ডলার ইন্ডোর্স করতে চান কার্ডে। তারা জিজ্ঞেস করবে কত ডলার? আপনি ২০০ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত ডলার ইন্ডোর্স করতে পারবেন। মেয়াদ থাকবে ১ বছর। আপনার যদি বেশি ডলার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তবে বেশি করুন। যেমন ৫০০০। কারণ আপনি ৫০০০ ডলার ইন্ডোর্স করে যদি এক বছরে ১ ডলারও ব্যবহার করেন তবুও কিছু হবেনা। কিন্তু ৫ হাজারের বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। 

 

তাদের বললেই তারা আপনার থেকে কার্ড এবং পাসপোর্ট নিবে। আপনাকে একাউন্ট নাম্বার/ফোন নাম্বার জিজ্ঞেস করতে পারে। এছাড়া আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না। একটা ফরম বের করে ওরাই পূরণ করে আধাঘন্টার মধ্যে সকল কাজ সম্পূর্ণ করে আপনার পাসপোর্টের শেষে সীল দিয়ে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট এবং কার্ড দিয়ে দিবে। 


সমস্থ কাজ সম্পূর্ণ হবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার কার্ডে ডলার ইন্ডোর্স হয়ে যাবে। এখন আপনি যখন তখন যেকোনো সময় ডলারে লেনদেন করতে পারবেন সমগ্র বিশ্বে। 

 

কার্ড ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট যে ব্যাংক থেকে আপনি ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ড নিয়েছেন সেই ব্যাংকে গিয়ে আপনার কার্ডে ১০০০ ডলার ইন্ডোর্স করান। অর্থাৎ আপনি আপনার ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ডে যেকোনো সময় ১ বছরে সর্বোচ্চ ১০০০ ডলার পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। 

 

 

কার্ড ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট একদম ফ্রী। কোনো ক্যাশ টাকা দিতে হয় না। ডলার ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে ব্যাংক একাউন্টে টাকা ভরালেই হলো। প্রয়োজন না হলেও কোনো সমস্যা নেই। এটা সম্পূর্ণটাই আপনার ইচ্ছা। তবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে ডলার ইন্ডোর্স থাকলে আপনি নিজেই আপনার কার্ড দিয়েই ইন্ডিয়ায় গিয়ে বা দেশে বসেই ইন্ডিয়ান ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবেন ফরেন একাউন্ট থেকে। টাকা পাঠাতে পারবেন আপনার কার্ড থেকেই।

 

যারা ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন করবেন, কিন্তু ক্যাশ টাকা নাই ক্যাশ ডলার ইন্ডোর্স করার এদিকে ব্যাংক একাউন্টও নাই যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিবেন। তারা ব্রাক বা এবি ব্যাংকের একাউন্ট খুলে কার্ড নিয়ে সেই কার্ডে পাসপোর্ট ইন্ডোর্স করে শেষে যে সীলটা দিবে সেই সীল এবং আপনার কার্ডের ছবি তুলে দিন ভিসা সেন্টারে জমা তাহলেই হবে। আমি নিজেই এভাবে করেছি। এবং আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভিসাও পেয়েছি।

 

জরুরী বিষয়ঃ ব্যাংক স্টেটমেন্ট ৬ মাসের দিতে হয়। যাদের ব্যাংক একাউন্ট নেই তারা একটা একাউন্ট করে ডেবিট কার্ডের আবেদন করে সেই কার্ডে পাসপোর্ট ইন্ডোর্স করে। কিভাবে ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন এবং কার্ড আবেদন করবেন সে সম্পর্কে পড়ুন বিস্তারিত;

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন, তবে সেরা স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট গুলোতে কিভাবে একাউন্ট করবেন এবং ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ডের আবেদন করবেন সে বিষয়ে পড়ুন বিস্তারিত;

যেভাবে খুলবেন সিটি ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট বিস্তারিত

যেভাবে খুলবেন এবি ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট বিস্তারিত

যেভাবে খুলবেন ইস্টার্ণ (ইবিএল) ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট বিস্তারিত


ক্যাশ ডলার ইন্ডোর্স

ক্যাশ ডলার ইনডোর্স কি 

ক্যাশ ডলার ইন্ডোর্স হলো কোনো একটি ব্যাংকে গিয়ে নগদ টাকা দিয়ে ডলার ইন্ডোর্স করা। সেই ডলার আবার যেকোনো সময় তুলতে পারবেন। ডলার ইন্ডোর্স করার সময় পাসপোর্টের পিছনে সিল মেরে দেন ব্যাংক থেকে। সেই সিলের ফটোকপি ব্যাংক স্টেটমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

 

কিভাবে করবো ক্যাশ ডলার ইন্ডোর্স 

বাংলাদেশে শুধুমাত্র দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানই ডলার ইন্ডোর্সমেন্ট করতে পারে। সেগুলো হলো বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানই পাসপোর্টে ডলার ইন্ডোর্স করতে পারে। 

এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন, তারা আপনার পাসপোর্টের ইন্ডোর্সমেন্টের পাতায় টাকার বিনিময়ে ডলার দিবে এবং সেই পাতায় ডলারের পরিমাণ উল্লেখ্য করে সীল দিবে। 


ব্যাংক থেকে ডলার ইন্ডোর্স করার নিয়ম 

বর্তমানে সরকারি বেসরকারি সকল ব্যাংকে ডলার ইন্ডোর্স করতে হয়। তবে এ সকল ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হয়। কার্ড ডলার ইন্ডোর্সের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা যা উপরেই আলোচনা করা হয়েছে। 

ক্যাশ ডলার ইন্ডোর্সের ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক সবথেকে উত্তম। এ ব্যাংকে ডলার ইন্ডোর্স করতে কোনো প্রকার একাউন্টের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র পাসপোর্ট নিয়ে গেলেই হয়ে যায়। পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের কর্মরত ব্যাক্তিকে বলবেন আপনি পাসপোর্টে ডলার ইন্ডোর্স করবেন। তাহলেই হয়ে যাবে। সেই দিনের ডলার রেট অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ সহ আপনার টাকা হিসেব করে ঐ পরিমাণ ডলার ইন্ডোর্স করে দিবে এবং সেই সাথে পাসপোর্টের শেষে ইন্ডোর্সমেন্ট পাতায় সীল দিয়ে দিবে ডলারের পরিমাণ সহ। 


শেষ কথা

আশাকরি এই নিবন্ধটির মাধ্যমে সকলে জানতে সক্ষম হয়েছেন কিভাবে পাসপোর্টে ডলার ইন্ডোর্স করতে হয়। এ বিষয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে লিখুন নিচের কমেন্ট বক্সে। আপনার কমেন্টের উত্তর প্রদান করা হবে দ্রুত। 


আরও পড়ুন

ভারতীয় ভিসা চেক করার নিয়ম

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!